জকসু নির্বাচন

শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর ছাত্রদল প্যানেলের কাছে ফাঁস, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ  © টিডিসি সম্পাদিত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনের আগে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের কাছে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর ফাঁস হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভোটের আগের রাতে সোমবার রাতে তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে সরাসরি ভোট চেয়ে বার্তা পাঠানো হয়। এ নিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের কাছে সংরক্ষিত ভোটার তালিকা ও ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে প্রার্থীদের হাতে পৌঁছেছে, তা স্পষ্ট নয়। বিশেষ করে পর্দানশীল নারী শিক্ষার্থীদের সম্মতি ছাড়া নাম, ফোন নম্বর বা অন্যান্য তথ্য প্রকাশ করা হলে তা গুরুতর অপরাধ।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর খুব সীমিত পরিসরে ব্যবহার করেন। এমনকি সহপাঠীদের সঙ্গেও নম্বর শেয়ার করেন না। অথচ হঠাৎ করে একটি নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ভোট চেয়ে মেসেজ পাওয়ায় তারা বিস্মিত ও আতঙ্কিত হয়েছেন। এক শিক্ষার্থী বলেন, যারা নির্বাচনের আগেই শিক্ষার্থীদের প্রাইভেসি রক্ষা করতে ব্যর্থ, তারা নির্বাচিত হলে কীভাবে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এ প্রশ্ন এখন সামনে এসেছে।

আরও পড়ুন: ঢাবির হলে বহিরাগত থাকলে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ

আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, প্রশাসনের কাছে সংরক্ষিত ভোটার তালিকা ও ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে প্রার্থীদের হাতে গেল, সেটাই সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে পর্দানশীল নারী শিক্ষার্থীদের সম্মতি ছাড়া নাম, ফোন নম্বর কিংবা অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা হলে তা গুরুতর অপরাধ বলে মনে করেন তারা।

শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা, এখনই যদি এমন অনিয়ম ঘটে, তবে ভবিষ্যতে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে। এ বিষয়ে বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। স্যোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন

জবি ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ফেসবুক পোস্টে বলেন, ভোটের আগে ব্যক্তিগত নম্বরে বার্তা পাঠিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল শিক্ষার্থীদের তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা, সেখানে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। অন্যদিকে সদস্য প্রার্থী জাবের খান বলেন, ব্যক্তিগত নম্বর ও ইমেইলে বার্তা পাঠানোর মতো নির্লজ্জ কাজ আর কিছু হতে পারে না।

সাবেক শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান ফেসবুক পোস্টে জানান, তিনি দুই বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন এবং ভোটার তালিকায় তার নামও নেই। তবুও তার মোবাইলে একাধিক বার্তা পাঠানো হয়েছে। এতে প্রশ্ন উঠেছে, ভোটার তালিকার বাইরেও কীভাবে শিক্ষার্থীদের বা সাবেক শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

এ ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রতিক একটি বৈঠক নিয়েও আলোচনা চলছে। এর আগে সোমবার বিকেলে জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদদীন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের প্রোগ্রামার হাফিজুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন বলে জানা যায়। যার কাছে শিক্ষার্থীদের সকল ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষিত থাকে। ওই বৈঠক নিয়ে ক্যাম্পাসে সমালোচনা শুরু হয়। এর পরপরই রাতের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত নম্বরে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের পক্ষে ভোট চেয়ে মেসেজ পাঠানো হলে সন্দেহ আরও জোরালো হয়।

শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ঘটনায় অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে কোন ব্যক্তি বা চক্র প্রশাসনের ভেতর থেকে এসব তথ্য সরবরাহ করেছে, তা চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। 

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বৈঠকের কথা স্বীকার করে আইসিটি সেলের প্রোগ্রামার হাফিজুর রহমান বলেন, রইছ উদদীন স্যারের সাথে বৈঠকটি হয়েছে অন্য বিষয়ে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। যে বিষয়ে কথা হয়েছিল তা আমি ফোনে বলতে পারবোনা। সাক্ষাতে বলতে পারবো

এ বিষয়ে জানতে আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন কে বারবার কল দেওয়া হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জানতে চইলে শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, এমন কোনো কিছু হয়নি।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!