সেশনজট থেকে রেহাই পেতে চান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
- কুবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:২৯ AM
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দীর্ঘদিন ধরে চলমান শিক্ষক সংকট নিরসনে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষক স্বল্পতায় নিয়মিত ক্লাস–পরীক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে প্রশাসন বরাবর একাধিকবার স্মারকলিপি দেওয়া হলেও এখনো কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুবিতে বর্তমানে ৬টি অনুষদের অধীনে ১৯টি বিভাগে ৬ হাজার ৮৮৮ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র ২৮০ জন। এর মধ্যে বিভিন্ন ছুটিতে রয়েছেন ৯৮ জন। ফলে ৩৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছন। যা আন্তর্জাতিক মানদন্ডের অনুপাতে প্রায় দ্বিগুন।
কলা অনুষদের বাংলা ও ইংরেজি, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অর্থনীতি, নৃবিজ্ঞান ও প্রত্নতত্ত্ব, বিজ্ঞান অনুষদের গণিত ও রসায়ন, ব্যবসায় অনুষদের অ্যাকাউন্টিং, মার্কেটিং ও ম্যানেজমেন্ট, প্রকৌশল অনুষদের আইসিটি এবং আইন অনুষদের আইন বিভাগেও শিক্ষক–শিক্ষার্থী অনুপাতে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে।
আরও পড়ুন: আসন ১৫০০, থাকবে পডকাস্ট-স্টুডিও, ৬শ কোটির গ্রন্থাগারটিতে আর কী থাকছে?
এর মধ্যে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ফার্মেসি, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং এবং রসায়ন বিভাগে সংকট প্রবল। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ২৭১ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র ৪ জন। ফার্মেসি বিভাগে ২২৮ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক মাত্র ৫ জন এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে ৩৩২ শিক্ষার্থীর জন্য আছেন ৮ জন শিক্ষক। ফলে অনুপাত দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১:৬৮, ১:৪৬ ও ১:৪২।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অস্বাভাবিক বৈষম্যের প্রভাব পড়ছে তাদের শিক্ষা, গবেষণা ও গ্র্যাজুয়েশন সময়সীমায়। ফলে শিক্ষক সংকট নিরসনে শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে কয়েক দফায় উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছেন। একই দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ এবং প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ার মতো কর্মসূচিও পালন করেছেন তারা। দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ফের শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।
বিভাগটির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফরহাদ কাউসার বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে মাত্র চারজন শিক্ষক দিয়ে আমাদের বিভাগ চলছে এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। কমপক্ষে পাঁচজন নতুন শিক্ষক নিয়োগ জরুরি। মিডিয়া ল্যাব চালুর জন্য অপারেটর না থাকায় কোটি টাকার সরঞ্জাম অকেজো হয়ে পড়ে আছে।”
ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বলেন, “স্বল্প শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নিতে গিয়ে শিক্ষকদের ওপর অস্বাভাবিক চাপ তৈরি হচ্ছে। এতে শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে। দ্রুত স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ ছাড়া এ সমস্যার সমাধান নেই।”
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তুলনায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা অনেক কম। আবার অনেক শিক্ষক ছুটিতে থাকায় সেই সংখ্যা আরো কমে গিয়েছে। পূর্বের প্রশাসন কম শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়াও নিয়ম বহির্ভূতভাবে শিক্ষা ছুটি অনুমদন দিয়েছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাজ পিছিয়ে পড়েছে। কিছু কিছু বিভাগে অবস্থা খুব শোচনীয়।
তিনি আরো বলেন, বহুবার আবেদনের পর আমরা ইউজিসি থেকে ১৫ টি পদ পেয়েছি। এছাড়াও যে সকল শিক্ষক বিদেশ থেকে ফিরেন নি কিংবা রিজাইন করেছে এমন ১০টি পদ খালি হয়েছে। সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে লিগ্যাল এডভাইসরের পরামর্শে ঐ পদগুলোতেও আমরা শিক্ষক নিয়োগ দিবো।