চাকরিতে যোগ দেবার চেষ্টা কুবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় নেতৃত্বদানকারী জাকিরের

মোহাম্মদ জাকির হোসেন
মোহাম্মদ জাকির হোসেন   © সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া ডেপুটি রেজিস্ট্রার (ওএসডি) মোহাম্মদ জাকির হোসেন কর্মস্থলে যোগদান দিতে চাচ্ছেন। যোগদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন তিনি। তবে জানাজানি হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিকে চাকরি করার সুযোগ করে দিলে তা জুলাইয়ের শহিদদের প্রতি গাদ্দারি করা হবে।  

জানা যায়, ২০২৪ সালের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২৯ জুলাই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করতে চাইলে সদর দক্ষিণের উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাবলু ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের এমপি বাহা উদ্দিন বাহারের নির্দেশে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ছাত্র আন্দোলন চত্বরে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে। সেদিন শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনা নেতৃত্ব দেন জাকির হোসেন।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা হলে সেখানে তাকে ১১ নম্বরের আসামি করা হয়। এ মামলায় গত মাসের ১৩ তারিখে তাকে শিক্ষার্থীরা পুলিশে সোপর্দ করলে পুলিশ তাকে জেল হাজতে পাঠায়। পরবর্তীতে ১৩ এপ্রিল তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন। 

এর আগে জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেওয়ার অভিযোগে চাকরি থেকে ওএসডি করা হয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নথি জালিয়াতি, সহকর্মী ও কর্মচারীদের সাথে অসদাচরণ, হেনস্তা ও গালমন্দ, জামাত-শিবির ট্যাগ লাগিয়ে হয়রানি, বিভিন্ন নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সাবেক ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ মাস আটাশ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। এ সময়ে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে তাকে কর্মস্থলে উপস্থিত না হওয়ার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলে তিনি কোনো জবাব দেননি।

সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী, বিনা অনুমতিতে ৬০ দিন বা তদূর্ধ্ব সময় কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকলে ওই কর্মচারী পলায়ন বলে গণ্য হবেন। এ ছাড়া পলায়নের দায়ে দোষী হলে তাঁকে তিরস্কার থেকে শুরু করে বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা বরখাস্ত করতে পারেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। 

জাকিরের যোগদানের বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। এ বিষয়ে জুলাইয়ে আহত শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাহিম বলেন‚ ‘ স্বৈরাচারী হাসিনার এসকল দোসররা জুলাইয়ে আমাদের ভাইদের রক্ত ঝড়িয়েছে। জুলাইয়ে হামলার সাথে যারা যারাই জড়িত ছিল সবার বিচার করা উচিত। জুলাইয়ে হামলায় তার (জাকির) নামে মামলাও আছে। শুনেছি সে  জেল থেকে বেরিয়ে এসে দীর্ঘদিন পলাতক ছিল। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আবার চাকরি করার চেষ্টা করছে। তার বিচার হওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় তাকে চাকরিতে যোগদান করার সুযোগ করে দিলে তা জুলাই যোদ্ধা এবং জুলাই শহিদদের সাথে গাদ্দারি করা হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও ইনক্বিলাব মঞ্চের আহবায়ক হান্নান রহিম বলেন, যারা ক্যাম্পাসকে গায়ের জোরে অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্য দিয়ে নিয়ে গেছে, স্বৈরাচারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে এবং  ক্যাম্পাসকে স্বৈরাচারের আঁতুড়ঘর বানিয়েছে, ২৪ পরবর্তী দেশে তারা ক্যাম্পাসে ঢুকারও নৈতিক অবস্থান হারিয়েছে। অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত এসব ব্যক্তিদের বিষয়ে কঠোর প্রশাসনিক অবস্থানে যাওয়া।

এ বিষয়ে জানতে মোহাম্মদ জাকির হোসেনের সাথে সরাসরি ও মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা করা সম্ভব হয়নি ।

রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন,’আমরা তার (জাকির) একটি যোগদানের চিঠি পেয়েছি। তবে তার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত রয়েছেন। আমরা তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও তিনি জবাব দেননি। এখন তার বিষয়ে পর্যালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।‘

উপাচার্য অধ্যাপক ড.  হায়দার আলী বলেন, 'আমি শুনেছি। উনি যদি জয়েনিং লেটার দেন তাহলে সেটা আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল অফিসারের কাছে পাঠাবো। উনার মতামতের উপর ভিত্তি করে সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।'

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence