ওএসডি হওয়া নাদিরা ইয়াসমিনকে বদলির প্রতিবাদে সা’দত কলেজেও বিক্ষোভ
- সা’দত কলেজ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০৯:১৩ PM , আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫, ০১:৪৮ PM
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নরসিংদী সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিনকে ওএসডি করে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের পর টাঙ্গাইলের সা’দত সরকারি কলেজে বদলি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পূর্বের দুই প্রতিষ্ঠানের মতো এবার সা’দত সরকারি কলেজেও তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২ জুন) ‘সরকারি সা’দত কলেজের সর্বস্তরের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে কলেজের বাংলা বিভাগের সামনে ‘বিক্ষোভ সমাবেশ’ শীর্ষক এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় উপস্থিত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেন কলেজ শাখা ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে বক্তব্য প্রদানকালে কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহাদুল ইসলাম ফাহাদ বলেন, নাদিরা ইয়াসমিন একজন প্রসিদ্ধ ইসলাম বিদ্বেষী, যিনি ইসলামের অনেকগুলো বিধান নিয়ে কটূক্তি করেছেন, ইসলামের সুন্দর অধিকার নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন এবং নারীদের শালীনতা ভেঙে খারাপ পথে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। এমন একজন নাস্তিকের জায়গা সরকারি সা’দত কলেজে হবে না। এই ধর্মবিদ্বেষী নাদিরাকে শুধু বদলি নয়, তাকে সরাসরি চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে এবং ইসলামের বিভিন্ন আইন নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে শাস্তি আওতায় আনতে হবে বলে দাবি জানান।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম শওকত জানান, আমরা সা’দত কলেজের প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে কলেজ প্রশাসন যেন এই ধর্ম অবমাননাকারী নাদিরা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সা’দত কলেজ থেকেও যেন তাকে বদলি করা হয়। এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ করবো এই শিক্ষক নামে কুলাঙ্গারকে যেন আর কোথাও শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করা না হয়। তার থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই বরং তার নিজেরই এখন শিক্ষা নেওয়ার ও নিজেকে সংশোধনের প্রয়োজন। ১২ ঘণ্টার মধ্যে যদি কলেজ প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না গ্রহণ করে তাহলে আমরা আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম টুটুল বলেন, নাদিরা ইয়াসমিন তার ম্যাগাজিনে ইসলাম ধর্মকে নিয়ে নানাবিধ কটূক্তি করেছে। আমরা বলে দিতে চাই ইসলাম ধর্ম সর্বোচ্চ আধুনিক। ইসলামের উপরে কোনো আধুনিকতা এই দুনিয়ায় আর কখনো হবে না। এই নাদিরা ইয়াসমিন তার নারী সংগঠন ‘নারী অঙ্গন’ এ নারীদের মধ্যে এক ধরনের নাস্তিক চেতনা ও শাহবাগী তৈরির মন- মানসিকতা নিয়ে কাজ করছে। এই বাংলাদেশে তাসলিমা নাসরিনের যেমন ঠাঁই হয়নি তেমনি নাদিরা ইয়াসমিনেরও ঠাঁই হবে না।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন তার বক্তব্যে বলেন, আমরা যে যেই ধর্মেরই হই না কেন যখন সে ধর্মের প্রতি কেউ অবমাননা করে তখন সে ধর্মের মানুষ কখনোই চুপ থাকতে পারে না। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সরকারি সা’দত কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ‘নাদিরা ইয়াসমিন’ এর বিরুদ্ধে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। আমরা কখনোই ধর্ম অবমাননার পক্ষে নই। যেহেতু ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে সে অবমাননা কর কথা বলেছেন, সেহেতু আমরা সা’দত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রশাসন তথা মাননীয় অধ্যক্ষের নিকট আবেদন জানাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি জারি করে তাকে যেন এখান থেকে সরানো হয়।
বিক্ষোভ কর্মসূচির পর শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ জানান, কর্তৃপক্ষ থেকে এখনো তার যোগদানের ব্যাপারে আদেশ এখনো জারি না হওয়ায় কোনো প্রকার মন্তব্য করতে পারবেন না। তবে এরকম কোনো আদেশ জারি হলে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি নরসিংদী সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিনকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ওএসডি করে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বদলি করা হয়। কলেজটির শিক্ষার্থীরা তা জানার পর বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। পরে ১ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে উপসচিব মাহবুব আলমের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয় তাকে পুনরায় টাঙ্গাইলের সা’দত কলেজে বদলি করা হয়েছে। বিষয়টি সা’দত কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা তাকে ‘ইসলামবিরোধী’ ও ‘ধর্ম অবমাননাকারী’ আখ্যায়িত করে সা’দত কলেজে বদলির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন।