নাদিরা যোগদান ইস্যুতে একাট্টা ছাত্রদল-শিবির, একই চাওয়া কলেজ প্রশাসনের

নাদিরা ইয়াসমিন
নাদিরা ইয়াসমিন  © টিডিসি সম্পাদিত

নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে বিতর্কিত সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিনের সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বদলি ও সম্ভাব্য যোগদানকে ঘিরে উত্তেজনা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ইসলামবিরোধী মন্তব্যের অভিযোগে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে সরাসরি গণ-আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনও।

সাম্প্রতিক সময়ে ‘হিস্যা’ নামক একটি সাময়িকীতে নাদিরা ইয়াসমিনের লেখাকে ঘিরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও ইসলামবিদ্বেষের অভিযোগ ওঠে। হেফাজতে ইসলামের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামের প্রেক্ষিতে তাকে নরসিংদী থেকে বদলি করা হয় সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে। তার এই ইস্যুতে একাট্টা ছাত্রদল ও ছাত্র শিবির। কলেজ প্রশাসনের চাওয়াও একই।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী বখতিয়ার হোসেন বলেন, নাদিরা ইয়াসমিনের কিছু বক্তব্য ইসলাম ধর্ম এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি স্পষ্ট অবমাননাকর। তিনি এমনভাবে মন্তব্য করেছেন, যা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনুভূতিকে আঘাত করেছে। এসব কারণে আমরা তার সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে যোগদানের বিরোধিতা করছি।

তিনি আরও বলেন, উত্তরাধিকার আইন সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি যে মত প্রকাশ করেছেন, তা ইসলামবিরোধী এবং মুসলিম সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এই প্রেক্ষাপটে যদি তাকে সাতক্ষীরা কলেজে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবো।

বিষয়টি নিয়ে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাবুজ্জামান বলেন, একজন শিক্ষকের বিতর্কিত ধর্মবিরোধী অবস্থান শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশকে কলুষিত করতে পারে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে উদ্বেগ, তা যৌক্তিক ও সময়োপযোগী—আমরা সেই আন্দোলনের সাথে নৈতিকভাবে একাত্মতা পোষণ করছি।

একই ধরনের অবস্থান নিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরও। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের চেতনাসম্পন্ন অবস্থানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি এবং তাদের দাবির প্রতি আমাদের সংহতি অব্যাহত থাকবে।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আল মুস্তানছির বিল্লাহ বলেন, নাদিরা ইয়াসমিনের চাকরির মূল পদ ঢাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (ডিজি অফিস)। তার চাকরি আমাদের এখানে নয়, এবং তার বেতনও ঢাকা থেকেই নির্ধারিত হয়। তাকে শুধু এখানে কাজ করতে বলা হয়েছে। ফলে তিনি সাতক্ষীরায় যোগদান করবেন কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে নেই।

তিনি আরও বলেন, আমার জানা মতে, তিনি এখনো এখানে যোগদান করেননি। নরসিংদী কলেজে তার শেষ কর্মদিবস ২ জুন। এরপর তিনি ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের সুযোগ পাবেন। আমি তার একটি ফেসবুক পোস্টে দেখেছি, যেখানে ইঙ্গিত পাওয়া যায়—তিনি সম্ভবত সাতক্ষীরায় যোগদান করবেন না। তবে এখনও তার পক্ষ থেকে সরাসরি আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরও বলেন, স্থানীয় ছাত্রসমাজ, আলেম সমাজসহ বিভিন্ন মহল তার সাতক্ষীরায় যোগদানের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আমাদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। আমরা সেই স্মারকলিপি যথাযথ কর্তৃপক্ষ, অর্থাৎ মহাপরিচালক বরাবর পাঠিয়ে দিয়েছি।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আল মুস্তানছির বিল্লাহর নিকট এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পালের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, নাদিরা ইয়াসমিন ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন এবং কুরআনের উত্তরাধিকার আইনকে অবমাননাকরভাবে উপস্থাপন করেছেন, যা ধর্মীয় সহনশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ। বর্তমানে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ চত্বরে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও, নাদিরা ইয়াসমিন যোগদান করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজ বিষয়টিতে দ্রুত পদক্ষেপ চেয়ে মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।


সর্বশেষ সংবাদ