ডিসিদের সিন্ডিকেট সদস্য করার পক্ষে না ইউজিসি-উপাচার্যরা 

ডিসিদের সিন্ডিকেট সদস্য করার পক্ষে না ইউজিসি, উপাচার্যরা 
ডিসিদের সিন্ডিকেট সদস্য করার পক্ষে না ইউজিসি, উপাচার্যরা   © টিডিসি ফটো

জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সম্মেলনে ডিসিদের দাবি অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালনা কমিটিতে (সিন্ডিকেট) জেলা প্রশাসকদের যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এটি বাস্তবায়ন করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। তবে এ সিদ্ধান্তের পক্ষে এখনই সায় নেই ইউজিসির। অন্যদিকে ডিসিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য করার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন উপাচার্যরা। 

ইউজিসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিন্ডিকেটে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নিয়োগ দিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি পেয়েছেন।’

তবে ইউজিসি মনে করছে, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী এটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ইউজিসি আইনে বলা হয়েছে, সিন্ডিকেট সদস্য হবেন অন্তত যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার সরকারি কর্মকর্তা। কিন্তু ডিসিরা হলেন উপসচিব পদমর্যাদার।

এ বিষয়ে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘দেশের ৫৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইন রয়েছে তাতে উপ সচিব পদমর্যাদার কাউকে সিন্ডিকেটে রাখা সুযোগ নেই। নূন্যতম যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার হতে হবে। এরপরও যদি ডিসিদের সিন্ডিকেটে যুক্ত করতে হয় সে ক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন সংশোধন করতে হবে। নতুন যেসব বিশ্ববিদ্যালয় হবে সেগুলোর আইনে ডিসিদের যুক্ত করার বিধান বিধান রাখতে হবে।’

আরও পড়ুন: কিউএস র‌্যাংকিংয়ে দেশসেরা ঢাবি, দ্বিতীয় বুয়েট

জানা গেছে, জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২২ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালনা কমিটিতে ডিসিদের অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডিসি সম্মেলনে ডিসিরা যুক্তি দেখান বিভিন্ন জেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা নিরসনে তারা কোন ভূমিকা পালন করতে পারেন না। ডিসিরা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগের কথা সম্মেলনে তুলে ধরেন। এসব বিষয় বিবেচনায় ডিসিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে যুক্ত হওয়ার দাবি জানান।

তবে ডিসিদের বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের সিন্ডিকেটে যুক্ত করার উদ্যোগের বিরোধিতা করছেন উপাচার্যরা। 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কিভাবে গঠিত হবে এটা সংসদে পাশকৃত আইনে বলা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকে এখানে যুক্ত করা কতটুকু ভালো বা মন্দ এটা নিয়ে আসলে গবেষণার দরকার আছে, এটা বিশ্লেষণ না করে বলা যাবে না। তবে আমার অভিজ্ঞতার আলোকে যদি বলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বাধীনভাবে নিজেদের কাজকর্ম পরিচালনা করার সুযোগ দেয়া উচিত, কারণ বিশ্বের কোনো দেশে স্থানীয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে আছে কিনা তা আমার জানা নেই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এটির নিজস্ব গঠনতন্ত্র, সিন্ডিকেট, প্রক্টরিয়াল বডি, ডিন ইত্যাদি আছে। যে কারণে ডিসিদেরকে সিন্ডিকেট সদস্য করার কথার বলা হচ্ছে এসব সমস্যা সব সময় হয়ে থাকে। এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটা সমাধানও করেন। আমাদের নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করতে পারলে অন্য কাউকে প্রয়োজন নেই। তাই আমি মনে করি সিন্ডিকেটে ডিসিদেরকে যুক্ত করার প্রয়োজন নেই।

শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘যে কারণ দেখিয়ে ডিসিদেরকে সিন্ডিকেট সদস্য বানানোর কথা বলা হচ্ছে সদস্য হলেওতো ডিসিরা কোন একক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। সিন্ডিকেটে সবোচ্চ নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী ভিসি। তিনি না ডাকলে ডিসিতো আসতে পারবে না। আর আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনের জন্য সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ারও কোন প্রয়োজন নেই।’

তিনি আরও বলেন, এখানে আরও একটি কথা আছে যেমন, ‘শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিভাগভিত্তিক প্রতিষ্ঠান তাহলে কোন জেলার ডিসি এখানে সিন্ডিকেট সদস্য হবেন? যেই জেলারই হোক, তিনি কেন হবেন? কারণ এটাতো জেলার কোন প্রতিষ্ঠান না। যদি সরকার নতুন আইন করে নির্দেশ দেয় তাহলেতো কিছু করার নেই। আইনের বাইরেতো যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে আমি ব্যাক্তিগতভাবে ডিসিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য বানানোর প্রয়োজন মনে করি না।’

আরও পড়ুন: ইনকোর্স, তত্ত্বীয় পরীক্ষায় আলাদাভাবে পাস করতে হবে না

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক বলেন, ‘এ বিষয়ে ইউজিসি আমাদেরকে কোন নির্দেশনা দেয়নি তাই আমি এ সম্পর্কে জানি না। যেটা জানি না সেটা নিয়ে কোন কথা বলতে চাই না।’ 

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি সম্পর্কে আমি ভালোভাবে জানি না তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
 
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা আলাদা আইন আছে। সেখানে ঠিক করা আছে কারা সিন্ডিকেট সদস্য হতে পারবে। শিক্ষামন্ত্রনালয় ডিসিদের সিন্ডিকেট সদস্য করার জন্য ইউজিসিকে নির্দেশনা দিলেও এখানে ইউজিসিরি কিছু করার নেই। আইন পাস এবং সংশোধন হয় সংসদে এ সিদ্ধান্তটাও সংসদ দেবে।’

ডিসিদের সিন্ডিকেটে যুক্ত করার বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু ইউসুফ মিয়া বলেন, ‘বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। এর বেশি কিছু বলা সম্ভব না।’

উল্লেখ্য, দেশে স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৩টি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১০৯টি। এছাড়া মেডিকেল কলেজ আছে ১১০টি, যার মধ্যে সরকারি ৩৭টি ও বেসরকারি ৭৩টি।


সর্বশেষ সংবাদ