এই সরকারের আমলে আসছে না নতুন পে স্কেল, আগামী অর্থবছরে বাস্তবায়ন নিয়েও শঙ্কা
- তৌহিদুর রহমান তুহি
- প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০০ PM , আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:১০ PM
সরকারি চাকরিজীবীদের বৈষম্য দূর করে সুযোগ সুবিধা বাড়াতে গত জুলাইয়ে পে কমিশন গঠন করে সরকার। পরে ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশ দেয়ার বাধ্যবাধকতা রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিছুদিন পরে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এই সরকারের সময়েই নবম পে স্কেল বাস্তবায়নের ইঙ্গিত দেন।
কিন্তু ৯ নভেম্বর অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সরকারি কর্মচারীদের নতুন পে কমিশনের সিদ্ধান্ত নেবে আগামী সরকার। এরপরই কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। পরে ৩০ নভেম্বর মধ্যে সুপারিশ জমা দিতে কমিশনকে আল্টিমেটাম দেন কর্মচারী নেতারা। তবে এখন পর্যন্ত নবম পে স্কেলের সুপারিশ দাখিল করেনি কমিশন।
অনলাইনে জমা পড়া মতামত ও কর্মচারীদের দেয়া প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে ১৭ ডিসেম্বর বিকেলে সচিবালয়ে জাতীয় বেতন কমিশনের সম্মেলন কক্ষে কমিশনের সব সদস্য নিয়ে বৈঠকে বসেন কমিশন চেয়ারম্যান। সভায় কমিশনের তৈরিকৃত খসড়া নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। কিছু বিষয়ে সংশোধনী এনে পরবর্তীতে আবারও সভা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সূত্রের খবর, সুপারিশ জমা দেওয়ার আগে অন্তত আরও তিনটি সভা করবে কমিশন। আর সুপারিশ জমা হতে পারে আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে।
‘পে স্কেল ঘোষণা করা সহজ কাজ নয়, অনেকগুলো বিষয় জড়িত। কর্মচারীদের আল্টিমেটামের মধ্যে এতো কম সময়ে ঘোষণা করা সম্ভব হবে না। আমরা কাজ করছি’ -অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ
এদিকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষণা অনুসারে নির্বাচনী প্রচারণা ২০২৬ সালের ২২ জানুয়ারি শুরু হবে। সে হিসেবে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে পে স্কেল নিয়ে সুপারিশ জমা হলে, সেটি নিয়ে সরকারের যাচাই-বাছাই করার পর্যাপ্ত সময় থাকবে না। তাই এই সরকারের আমলে নতুন পে স্কেল কার্যকর হচ্ছে না, এটা একপ্রকার নিশ্চিত। পাশাপাশি আগামী অর্থবছরে নবম পে স্কেল বাস্তবায়ন নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।
সম্প্রতি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা হয় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের। পে স্কেল নিয়ে তিনি বলেন, ‘পে স্কেল ঘোষণা করা সহজ কাজ নয়, অনেকগুলো বিষয় জড়িত। কর্মচারীদের আল্টিমেটামের মধ্যে এতো কম সময়ে ঘোষণা করা সম্ভব হবে না। আমরা কাজ করছি।’ তবে এই সরকারের আমলে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করা হবে কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন তিনি।
আরও পড়ুন : জানুয়ারিতে জমা হতে পারে পে কমিশনের সুপারিশ, যা বলছেন কর্মচারীরা
নির্বাচিত সরকারের জন্য ক্ষমতাগ্রহণের পরপরই পে স্কেল দেয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। বর্তমান সরকার যে আর্থিক জোগানের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় পে স্কেল দিতে পারছে না, সেই একই সমস্যার মুখোমুখি হবে নির্বাচিত সরকার। ক্ষমতাগ্রহণের পরই অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এক্ষেত্রে পরবর্তী অর্থবছরে নতুন পে স্কেল কার্যকর নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সরকারের আর্থিক সক্ষমতা না থাকার কারণেই অন্তর্বর্তী সরকার নতুন পে স্কেল বাস্তবায়নের ঝুঁকি নিচ্ছে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি নতুন বেতন স্কেল চাওয়া যৌক্তিক। চাকরিজীবীদের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জোর দাবি ছিল, আশা ছিল তারা সব ধরনের সমস্যা দূর করে অর্থনীতিকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে। কিন্তু এই সরকার তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তার উজ্জ্বল প্রমাণ, নবম পে স্কেল বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত পরবর্তী সরকারের দিকে ঠেলে দেয়া।
সম্প্রতি সচিবালয়ে আন্দোলনকারীদের দমন প্রক্রিয়া ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন পরবর্তী সরকারি সিদ্ধান্তে একরকম ভীত পে স্কেলের দাবিতে আন্দোলনরত নেতারা। আলোচনার মাধ্যমেই আপাতত দাবি আদায় করতে চান তারা।
দেশের ঘাটতি বাজেট বাড়ছে মন্তব্য করে এই অধ্যাপক বলেন, নতুন অর্থবছরে সবকিছু ভেঙেচুরে অর্থনীতিকে উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাবে। সেই পরিকল্পনা থেকেই কমিশন গঠনের পর বলা হয়েছিল এই সরকারই নতুন বেতন স্কেল দেবে। কিন্তু আর্থিক জোগান নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়ে অর্থ উপদেষ্টা নতুন এই ঘোষণা দিয়েছেন। এখন নির্বাচিত সরকার আসলেও তাদের জন্য দ্রুত পে স্কেল বাস্তবায়ন সহজ হবে না। তাদেরকেও আগে অর্থনীতি চাঙ্গা করতে হবে।
এই সরকার শেষ পর্যন্ত পে স্কেল ঘোষণার দায়িত্ব পরবর্তী সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে, এমন শঙ্কা আগে থেকেই ছিল জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন ব্যয় এবং ঋণের সুদ যে পরিমাণে পরিশোধ করতে হয়, সে তুলনায় আয় করে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। এই অবস্থায় অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। পরবর্তীতে যে সরকার আসবে তাদের পক্ষেও অর্থনৈতিক কাঠামো ঠিক করে কর্মচারীদের দাবি অনুযায়ী বেতন বাড়ানোও কঠিন হবে।
ইতোপূর্বে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়ে আসলেও সম্প্রতি সচিবালয়ে আন্দোলনকারীদের দমন প্রক্রিয়া ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন পরবর্তী সরকারি সিদ্ধান্তে একরকম ভীত পে স্কেলের দাবিতে আন্দোলনরত নেতারা। আলোচনার মাধ্যমেই আপাতত দাবি আদায় করতে চান তারা।
আরও পড়ুন : পে স্কেল আদায় করেই ঘরে ফিরব : আসাদুল ইসলাম
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জিয়াউল হক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অবশ্যই আমরা দাবি পেশ করবো, তবে সব দাবি রাস্তায় আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় হয় না। এক্ষেত্রে পে স্কেলের দাবিতে আমরা আলোচনার মাধ্যমে আদায় করতে চাইছি। পাশাপাশি সচিবালয়ের ভেতরে সম্প্রতি অপ্রীতিকর ঘটনায় বাইরের কর্মচারীরা সচিবালয়ের কর্মচারীদের ওপর ক্ষুব্ধ। সব বিষয় বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সরকারি চাকরিজীবী বিধিমালা ও শৃঙ্খলা বহির্ভূত কোন কর্মসূচি দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে পরিষদের সভাপতি ওয়ারেছ আলী বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে আমরা ইচ্ছেমতো কর্মসূচি দিতে পারি না। আমরা চাকরির বিধিমালা ও শৃঙ্খলার মধ্যে থেকেই কর্মসূচি দেবো। বিধিমালা বহির্ভূত কোন কর্মসূচি দেয়া হবে না।