অপূর্ব মানসিকভাবে স্থিতিশীল নয়— জানালেন সাবেক শিক্ষক ও বাড়ির মালিক

পবিত্র আল কুরআন অবমাননায় অভিযুক্ত অপূর্ব পাল
পবিত্র আল কুরআন অবমাননায় অভিযুক্ত অপূর্ব পাল  © সংগৃহীত

মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র আল কুরআন অবমাননার ঘটনায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অপূর্ব পালকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার (৪ অক্টোবর) মধ্যরাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। 

এরপর অপূর্বকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আসিফ বিন আলী এবং অপূর্বের বাসার মালিক নাশীদ ধ্রুব। তারা উভয়েই বলছেন, অপূর্ব মাদকাসক্ত এবং মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।

আসিফ বিন আলীর ফেসবুক পোস্টটি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল:

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অপূর্ব পাল একজন ধর্মান্তরিত মুসলমান। তিনি আমার ছাত্র ছিলেন। ২০২৩ সালের শেষের দিকে তিনি ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম গ্রহণ করেন, নাম পরিবর্তন করেন, এবং নিয়মিত ধর্ম পালন করতেন। তিনি আমার ক্লাস করেছেন জোব্বা পরে, মাথায় পাগড়ি দিয়ে।

দুঃখজনকভাবে, ছেলেটি পরবর্তীতে ড্রাগে আসক্ত হয়ে পড়ে এবং মানসিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ক্যাম্পাসে প্রায়ই অদ্ভুত আচরণ করত। (অদ্ভুত আচরণের নমুনা দেই, সে এনএসউ ও বসুন্ধরার মসজিদে গিয়ে মানুষকে টুপি না পরলে কিংবা টাকনুর উপর কাপড় না পরলে বকা ঝকা করতো)। এই সব নিয়ে ক্যাম্পাসে ভিন্ন ধর্মের একাধিক ছেলে মেয়ের সাথে ওর ঝামেলা হয়। তার বৃদ্ধ মা তাকে সুস্থ করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। ২০২৪ সালে তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রাগ আসক্তি ও অস্বাভাবিক আচরণের কারণে বহিষ্কৃত হন।

যদি আমি ভুল না বলি, তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং পরিবারের সংগ্রামের বিষয়টি বিবেচনা করে তাকে পুনরায় পড়াশোনার সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ছেলেটির ড্রাগ সমস্যা কিংবা মানসিক সমস্যা— কোনোটিরই যথাযথ চিকিৎসা হয়নি।

আমি জানি না, তার সাম্প্রতিক আচরণের পর আর কী বলব, শুধু এটুকু বলতে পারি—সে যা করেছে, তা মানসিকভাবে অসুস্থ অবস্থায় করেছে। কাজটি অতি অন্যায় ও ঘৃণিত। কিন্তু বিষয়টি কোন বড় ষড়যন্ত্র নয়, একজন মানুষিক রোগীর কাজ। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা তাকে চিনতেন, সবাই জানেন। এখন সবচেয়ে জরুরি হলো তাকে দ্রুত পুনর্বাসন কেন্দ্রে (রিহ্যাব) পাঠানো।

আরও পড়ুন: মধ্যরাতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ

 নাশীদ ধ্রুব’র ফেসবুক পোস্টটি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল:

নর্থ সাউথের বহু আলোচিত ছেলেটা মানে অপূর্ব রাদ’কে আমি বেশ ভালোভাবে চিনি। এই ছেলে এবং তার মা আমাদের বাসায় ভাড়া ছিল। জাস্ট গত মাসেই বেশ ঝামেলা করে এদেরকে বাড়ি থেকে বের করেছি।

ছেলেটার মা শিক্ষিত মহিলা, ব‍্যাংকে ভালো পোস্টে জব করতেন। ছেলেটার বাবা নেই। যতটুকু জানি ছেলেটার বাবা ছিলেন মুসলিম আর মা প্রাকটিসিং হিন্দু। এই সমস্ত বিষয় নিয়ে হয়তো ছেলেটার মানসিক সমস্যা ছিল।

প্রায়ই এই ছেলে রাত ২/৩ টার সময় বের হওয়ার জন‍্য বাসার দারোয়ানের সাথে ঝামেলা করতো। বিষয়টা হাতাহাতির পর্যায়েও গিয়েছিল। যেহেতু, আমরা বরিশালে থাকি, তাই সহজে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব ছিল না। বারবার নোটিশ দেয়ার পরেও এই ছেলের মা নানাভাবে ইমোশনাল ব্ল‍্যাকমেইল করে বাসায় থাকতে চেয়েছিল। গত মাসের শুরুতে এই ছেলে তার মায়ের সাথে ঝামেলা করে আমার বাসায় ভাঙচুর করে, তারপর আমি ঢাকা যাই এদের পার্মানেন্টলি নামিয়ে দেয়ার জন্য।

এই ছেলের একটা বিড়াল আছে। কালো বিড়াল, খুব সুন্দর। ঢাকা গিয়ে আবিস্কার করি এরা কেউ বাসায় নাই, ফোন করি ফোন রিসিভ করে না..। পরে অনেক ঝামেলা করে জানতে পারলাম, এরা ময়মনসিংহ গেছে। বিড়ালটা বাসায়। বিড়ালটাকে বাথরুমে আটকে রেখে গেছে, ঐ বাথরুমে বাতিও নাই। আমি একরাত অপেক্ষা করলাম। পরেরদিন সকালেও যখন মহিলা আসলো না, তখন স্পেয়ার চাবি দিয়ে বিড়ালটাকে বাথরুম থেকে উদ্ধার করে খাবার দেই। মহিলাকে ফোন করে বলেছিলাম, ওয়েলফেয়ার সোসাইটিতে কম্প্লেইন করবো..। কেন করিনি, তা ভেবে এখন আফসোস হচ্ছে। ঐ মহিলা ফিরেছিল ৪ দিন পর অর্থাৎ আমি ইন্টারফেয়ার না করলে ঐ বিড়ালটা অভুক্ত অবস্থায় ৪ দিন অন্ধকার বাথরুমে আটকে থাকতো।

দারোয়ান থেকে শুরু করে বিল্ডিংয়ের অন‍্যসব টেনেন্ট— সবাই বলেছিল, ছেলেটা অ‍্যাডিক্টেড। রিসেন্ট কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে, মানসিকভাবে অসুস্থ। দ্রুত পুলিশের দ্বারস্থ হওয়া দরকার আর নাহলে এই ছেলে সামনে আরও বড় কোন ঝামেলা করবে কিংবা ঝামেলায় পড়বে..।

প্রসঙ্গত, শনিবার (৪ অক্টোবর) অপূর্ব পাল ফেসবুকে পবিত্র কুরআন অবমাননার কিছু ভিডিও আপলোড করেন। পরে রাতে একদল ছাত্র-জনতা রাতে তার বাসার নিচে গিয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ করে প্রতিবাদ জানায়। রাত দেড়টার দিকে তাকে আটক করে পুলিশ।

এ সংক্রান্ত একাধিক ভিডিও ও ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ছড়িয়ে পড়া এসব ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, অপূর্ব পালের বাসার নিচে পুলিশের সঙ্গে তিনি আছেন। তবে বাসার বাহিরে একদল উত্তেজিত ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের কারণে তাকে সেখান থেকে বের করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন: পুলিশকে মারধর করে হাতকড়াসহ আ.লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নিলেন স্বজনরা

তাকে আটকের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক নাফসিন মেহনাজ লেখেন, কুরআন অবমাননার ঘটনার আপডেট! অপূর্ব পালের বাসার নিচে ছাত্ররা ঘেরাও করেছে, পুলিশ এসে তাকে এরেস্ট করেছে! এখন সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ ঘটনায় জড়িতের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়ে ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে লেখেন, নর্থ সাউথে পবিত্র কুরআন অবমানার ঘটনা আমাদের হৃদয়ে আঘাত করেছে। অবিলম্বে উক্ত ঘটনায় অভিযুক্তকে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আওতায় আনুন। একইসাথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে কোন অপশক্তি ফায়দা নেওয়ার চক্রান্ত করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখুন। দেশবাসীর প্রতি আহবান, শান্ত থেকে বিচক্ষণতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করুন। দেশকে অশান্ত করে কোনো অপশক্তিকে ফায়দা নিতে দেওয়া হবে না, ইনশাআল্লাহ।

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, এ ঘটনা শুধু ধর্মীয় অবমাননাই নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে জনগণকে দ্বিধাবিভক্ত করার একটি অপচেষ্টা। এ ধরনের আচরণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে। 


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!