বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে ‘মাদক প্রতিরোধে তরুণ সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৬ PM , আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৬ PM

দেশের অন্যতম বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস মিলনায়তনে ‘মাদকাসক্তি ও মাদক প্রতিরোধে তরুণ সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ড্রিম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সেমিনারের সার্বিক সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ এবং বিজনেস ক্লাব।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (গোয়েন্দা) খোরশেদ চঞ্চল, মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী, ড্রিম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের (ডি.বি.এফ) প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রাখিল খন্দকার নিশান, সমাজসেবক ও ডিসকভারি চ্যানেল খ্যাত হিউম্যান সিদ্ধাচার্য মার্ক ইউরি বজ্রমুনি এবং ইন্সটিটিউট অব ওয়েলবিয়িং বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক দেবরা ইফরইমসন।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার ব্রি. জে. মো: মাহবুবুল হক (অব.)। সেমিনারটি পরিচালনা করেন ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী জুয়াইরিয়া জাহান শায়মা, নাফিসুল হোসেন সতেজ।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (গোয়েন্দা) খোরশেদ চঞ্চল বলেন, মাদকাসক্তি আধুনিক সভ্যতার বিপজ্জনক রোগ। মাদকের ভয়াল থাবায় ধ্বংসের পথে তরুণ প্রজন্ম। শহর থেকে গ্রাম, স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্রই মাদক পাওয়া যাচ্ছে হাতের নাগালে। মাদকের কারণে বেড়ে যাচ্ছে সামাজিক অবক্ষয়। তরুণ সমাজ হারিয়ে ফেলছে তাদের নৈতিক মূল্যবোধ। এই ভয়াল মাদকের কারণে ভেঙে যাচ্ছে পারিবারিক বন্ধন, নষ্ট হচ্ছে আস্থা-বিশ্বাস, পরিবার ও সমাজে তৈরি হচ্ছে নতুন আতঙ্ক।
মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, মাদকাসক্তি একটি বহুমাত্রিক জটিল সমস্যা। এ ব্যাধি দূর করতে দরকার সমন্বিত কর্ম প্রয়াস। তিনি আরও বলেন, দেশের উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের একটি বড় অংশ ইয়াবা ও আইস আসক্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ধনী পরিবারের অতি আদরের সন্তানরাই বেশি মাদকাসক্ত। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাই নয়, বর্তমানে কলেজ-স্কুলেও মাদক ঢুকে পড়েছে। সমন্বিত সামাজিক প্রতিরোধ ছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি মাদক সমস্যার সমাধানে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠন, শিক্ষক, সকল ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ, অভিভাবকসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সেমিনারে আলোচনায় অংশ নিয়ে অন্যান্য বক্তারা বলেন, দেশের প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বর্তমানে মাদক সেবন করেন যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। যা বাংলাদেশের মোট বাজেটের প্রায় এক চতুর্থাংশ এবং উন্নয়ন বাজেটের ৫৬ শতাংশ। তারা আরও বলেন, বর্তমান বিশ্বে পারমাণবিক মারণাস্ত্রের চেয়েও ভয়ংকর রূপ নিয়েছে মাদক। যা প্রতিনিয়ত ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের যুব সমাজকে। অকালে ঝড়ে যাচ্ছে অসংখ্য তাজা প্রাণ। দাম্পত্য জীবনের কলহের জের ধরে ভেঙ্গে যাচ্ছে অসংখ্য সুখের সংসার। নেশার করাল গ্রাসে ধুঁকে ধুঁকে মরছে লক্ষ-কোটি তাজা পান। ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সর্বনাশা এই মাদক দাবানলের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ছে।
সভাপতির বক্তব্যে বিইউ’র ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বলেন, বর্তমানে বিইউ পরিবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো মাদকাসক্তি থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়কে মাদকমুক্ত রাখার জন্য এর কর্মকাণ্ড যত বিস্তৃত করা যাবে ততই আমাদের মঙ্গল। মাদক ও ধূমপানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, ইতোমধ্যে বিইউ’কে ধুমপানমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয় সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আলোচনা শেষে অতিথি এবং ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে ক্যাম্পাসে মাদকবিরোধী একটি র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিল।