আব্দুল মঈন খান
‘৫৪ বছরে দেশকে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের জবাব দিতে হবে— কেন তারা ব্যর্থ হয়েছেন’
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৭ PM
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরে এসেও গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রাম পীড়িত করে বলে জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান। ৫৪ বছরে যারা দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসনে তারা কেন ব্যর্থ হয়েছেন এর জবাব তাদের দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
আজ বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) উদ্যোগে আয়োজিত ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুল মঈন খান বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরে এসে একটি কথা আমাকে পীড়িত করে। যে গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল, অর্ধশতাব্দী পার হয়ে এসেও কেন সেটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না? এই গণতন্ত্রের জন্যই তো বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দ্বিতীয়ত, তৎকালীন পাকিস্তানে ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্য। কেন আমরা এই দুটি লক্ষ্যবস্তুকে আজও খুঁজে ফিরছি? কেন অর্জন করতে পারছি না?
আরও পড়ুন: শেখ মুজিব মানুষকে উত্তেজিত করে ‘পাইপ’ টানতে টানতে পাকিস্তানে চলে গেছিলেন: আলাল
তিনি বলেন, বিগত ৫৪ বছরে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের জাতির কাছে জবাব দিতে হবে—কেন তারা ব্যর্থ হয়েছেন। ভবিষ্যতে যারা নেতৃত্ব দেবেন, আশা করি তারা এ দুটি লক্ষ্য বাস্তবায়ন করবেন।
সংস্কার প্রসঙ্গে মঈন খান বলেন, আজকে এই সরকার বলছে সংস্কার করবে। বলতে বলতে তারা এমন একটি অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল, যেন বাংলাদেশকে একটি স্বপ্নিল দেশে রূপান্তর করবে। সংস্কার এমন কিছু নয়, বরং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সৃষ্টির উষালগ্ন থেকেই সংস্কার চলছে। এর ফলশ্রুতিতেই আজ আমরা একবিংশ শতাব্দীতে এসে দাঁড়িয়েছি। ধীরে ধীরে একটি উচ্চতর সমাজব্যবস্থায় আমরা উপনীত হব।
তিনি বলেন, মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের জন্য প্রথমে খাদ্যের প্রয়োজন হয়। খাদ্য নিরাপত্তা যদি নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে দিবস পালন করে কী হবে? আরেকটি হলো কথা বলার অধিকার। বাংলাদেশের মানুষ অনাহারে থাকতে রাজি আছে, কিন্তু কথা বলতে দিতে হবে। এজন্য ৫৪ বছরের ইতিহাসে যতবারই ফ্যাসিবাদী ও কায়েমি সরকার মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিতে চেয়েছে, তারা প্রত্যেকবার ব্যর্থ হয়েছে।
আরও পড়ুন: হাদির ওপর হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল হাতবদল হয় ৮ বার, ভুয়া নম্বর প্লেটও উদ্ধার
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে নিষ্ঠুর ব্যবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি মানুষের অনুভূতিগুলোকে ভোঁতা করে দেয়। রাষ্ট্র মানুষকে মানুষ হিসেবে গ্রহণ করে না। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে গণমানুষের সঙ্গে সময় কাটিয়ে এসে আমি ভাবি— মানুষের কল্যাণে আমরা আসলে কতটুকু করেছি? আগামীতে যে সরকার আসবে, তাদেরও নিজেদেরকে এই প্রশ্ন করতে হবে।
আওয়ামী লীগ দেশসেবার পরিবর্তে আত্মসেবা শুরু করেছিল বলেও উল্লেখ করেন মঈন খান। বলেন, রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তে তারা যা শুরু করেছিল, তা ছিল অলিগার্কি। কেবলমাত্র নিজ পরিবার, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এবং সমাজের সর্বোচ্চ স্তরের ধনিক শ্রেণিকে নিয়ে একটি সাম্রাজ্য গড়ে তোলা হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে দরিদ্র মানুষ দারিদ্র্যের কষাঘাতে কষ্ট পেয়েছে।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য ও ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার। এতে সভাপতিত্ব করেন ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. আবুল কেনান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ডা. খালিকুজ্জামান দিপু, বিজয় দিবস ২০২৫ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন প্রমুখ।