দেশে এবার ‘দুই শক্তি’র মধ্যে নির্বাচন হবে: মির্জা ফখরুল
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪২ PM
দেশে এবার ‘দুই শক্তি’র মধ্যে নির্বাচন হবে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এইবারের নির্বাচনটা হবে দুটো শক্তির মধ্যে নির্বাচন। একটা শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি, এই শক্তি হচ্ছে উদার গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি, এই শক্তি হচ্ছে সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার শক্তি। আর আরেকটি শক্তি হচ্ছে, সেই পেছনে পড়া যারা আমাদেরকে সবসময় বিভ্রান্ত করতে ধর্মের কথা বলে।
রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকালে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপির উদ্যোগে ও এর আগে মুক্তিযোদ্ধাদলের আয়োজনে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলাদা আলাদা আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের উদ্যোগে বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘জাতির ক্রান্তি লগ্নে গণতন্ত্র রক্ষায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহারয’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা একাত্তর সালকে ভুলতে পারি না। আমরা যারা দেশের স্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, লড়াই করেছি, যুদ্ধ করেছি, এই দেশের জন্য একটা স্বাধীন ভূখণ্ড এনে দেয়া হয়েছে। যার ফলে আমরা এখানে বেঁচে আছি, টিকে আছি এই ভূখন্ডে। আমরা কি সেই শক্তির দিকে থাকবো নাকি আমরা যারা সেটাকে নস্যাৎ করতে চেয়েছিল তাদের দিকে থাকব?
আরও পড়ুন: ৪৩তম বিসিএসের নন-ক্যাডার ৮৫০১ পদ সংরক্ষণে নির্দেশ হাইকোর্টের
বিএনপি মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দেশের মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমরা মনে করি। সেই সিদ্ধান্ত হচ্ছে নির্বাচনে ধানের শীষের মার্কাকে বেঁছে নেয়া। এই কারণে এবারের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে যে পোলারাইজেশন সামনে এসছে অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ কোনটা বেছে নেবে? সে কি স্বাধীনতাকে বেছে নেবে, সার্বভৌমত্বকে বেছে নেবে, গণতন্ত্রকে বেছে নেবে? নাকি সে পিছিয়ে পড়া যারা অতীতে আমাদের স্বাধীনতা বিরোধীরা যেটা করেছে, আমাদের সমস্ত অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করার চেষ্টা করেছে সেই শক্তিকে বেছে নেবে?
ওরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে প্রশ্নগুলো আসছে এই জন্যে যে, এই শক্তিটি আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এই শক্তি আজকে আবার মানুষকে বিভ্রান্ত করছে সেই ধর্মের নামেই। একাত্তর সালেও কিন্তু সেই ধর্মের নামেই বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল। অথচ এই শক্তিটি ১৯৪৭ সালে যখন এই দেশের মুসলমানরা তাদের সেলফ ডিটারমিনেশন নিজেদের জেগে ওঠার, নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করবার যে ক্ষমতা সেটার জন্য যখন লড়াই করেছিল, স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিল তখন এই শক্তি আবার তার বিরোধিতা করেছিল। আমি খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, ১৯৪৭ সালে এই শক্তিটি সেদিন পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল। ওই শক্তি একাত্তর সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে।
ওরা ভোল পাল্টিয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সেই শক্তির ভোল পাল্টে, চেহারা পাল্টে তারা কিন্তু এমন ভাব দেখাচ্ছে যে, তারাই নতুন বাংলাদেশ করতে পারবে। সারা বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করতে পারে না। যারা আমার জন্মকে অস্বীকার করেছে, যে আমার স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছে তাকে বিশ্বাস করার কোন কারণ থাকতে বলে আমি অন্তত মনে করি না যারা আমার যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিলাম।
তিনি বলেন, আমরা বারবার পরীক্ষা দিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে। তার নিজের যে অধিকার সে অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করেছে, তার নিজের অস্তিত্বকে রক্ষা করবার জন্য লড়াই করেছে, আজকে থেকে না সেই মোঘল শাসনামল থেকে। আমরা বারো ভুঁইয়ার কথা জানি, আমরা তিতুমীরের কথা জানি, সবার কথাই আমরা জানি। তাই না? সেই জাতি কখনো মাথা নত করতে পারে না, সেই জাতি কখনো পরাজিত হতে পারে না।
একাত্তরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির পরিকল্পিত নীল নকশার ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, বুদ্ধিজীবী দিবসটি আমাদের কাছে খুব ভারাক্রান্ত। কারণ ঠিক দুইদিন আগে স্বাধীনতার পাওয়ার ১৬ ডিসেম্বরের দিনটির আগে অত্যন্ত পরিকল্পিত হবে একটা নীল নকশার মাধ্যমে একটা জাতিকে সম্পূর্ণ মেধাশুন্য করে দেয়ার একটা চক্রান্ত ছিল সেটা। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, যারা পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সেদিন যোগসাজস করেছিল তাদের প্রতিনিধি হয়ে এসে বাড়িতে বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারগুলোতে অথবা তাদের বাড়ি থেকে যারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল তারা ছিল কিন্তু বাঙালি সন্তান। আজকে আমরা খুব ভালো করে জানি যে, তারা কারা ছিলেন? আমাদের ইতিহাস প্রমাণ করে তখনকার সেই রাজনৈতিক শক্তি যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল তারাই সেদিন আমাদের সেই সূর্য সন্তানদেরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। এ বিষয়টিকে হালকা করে দেখার কোন কারণ নেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আমার বুদ্ধিজীবীদেরকে হত্যা করেছে, আমার সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তানদেরকে পাকিস্তান আর্মি সেদিন হত্যা করেছে অন্যায়ভাবে। আপনি ইতিহাসগুলো পড়েন। গোবিন্দ চন্দ্র দেবের মত একজন দার্শনিক, শহীদুল্লা কায়সারের মত একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক, আবদুল আলীমের মত একজন বিখ্যাত চিকিৎসক থেকে শুরু করে সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের মতো একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক। নারী-পুরুষ সকলকে তারা তুলে নিয়ে গিয়ে বধ্যভূমিতে হত্যা করেছিল আমাদের সকলের সেই ইতিহাস পড়া উচিত। আজকে সেজন্যই এদেরকে ক্ষমা করার কোন কারণ থাকতে পারে না।
তিনি বলেন, আমরা কিছুদিন আগে সংগ্রাম করেছি গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য। ফ্যাসিস্টদেরকে বিতাড়িত করেছি ছাত্র গণঅভ্যত্থানের মধ্য দিয়ে। তার মানে এই নয় যে আমরা আবার নতুন একটা ফ্যাসিস্টকে এনে আমাদের উপরে চড়ে বসতে দেব। আমরা আরেকটা শক্তি জানবো যে শক্তি আমাদেরকে পেছনে নিয়ে যেতে চায় সেই শক্তিকে আমরা কখনোই এখানে আসতে দিতে পারি না।
একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কি দেখছি? আমরা দেখছি ভয়াবহ একটা প্রতিহিংসার কথা। আজকে পরাজিত ফ্যাসিস্টরা পরাজয়কে মেনে নিতে না পেরে পালিয়ে গেছে, সেখান থেকে ষড়যন্ত্র করছে। ওদের এতটুকু শিক্ষা হয়নি যে ওই পরিণতির পরও। আজকে এ যে, হাদি ও এরশাদুল্লাহর ওপরে হত্যার অপচেষ্টা দিয়ে বাংলাদেশে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে ওরা। আমরা জানি বাংলাদেশের মানুষ তাদের এই চক্রান্তকে সফল হতে দেবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে নির্বাচনের তফসিল যখন ঘোষণা করা হলো তখনই হত্যা করার চেষ্টা করা হল হাদিকে (শরীফ ওসমান বিন হাদি)। একজন সৈনিক যে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। একটা ভয় আবার শুরু করতে চেয়েছে, যে ভয় ১৫ বছর আওয়ামী লীগ দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, ভয় দেখিয়ে আওয়ামীলীগ শাসন করার চেষ্টা করেছে, ত্রাস সৃষ্টি করেছে আবার সেই ভয় দেখিয়ে সে এইসব আমাদের গণতন্ত্রের যে সৈনিক তাদেরকে তারা ভয় দেখিয়ে স্তব্ধ করে দিতে চায়। কিন্তু ইতিহাস বলে যে সেই ভয়ে বিএনপি কখনো দমে যায় না। আমরা দমে যাবো না। আমরা তারেক রহমানের যে স্বপ্ন, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে স্বপ্ন, আমাদের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়ারের স্বপ্ন সত্যিকার অর্থেই একটি সুখী সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার সেই স্বপ্নকে আমরা অবশ্যই বাস্তবায়িত করব, ইনশাল্লাহ।
আরও পড়ুন: জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে ইনকিলাব মঞ্চ
ফখরুল বলেন, শুধু আহ্বান জানাতে চাই চতুর্দিকে ষড়যন্ত্র হবে, চক্রান্ত হবে। তার মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে বিএনপি। সে জয় লাভ করবেই ইনশাল্লাহ সে বিশ্বাস আমাদের আছে। বিএনপি একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, একটা উদারপন্থী গণতান্ত্রিক দল। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, গত দুই দিন আগে যে ঘটনাটি ঘটল একজনকে গুলি করার, এ ধরনের কাজ যারা করে একটি চিহ্নিত একটি দল, এই ধরনের অপকর্ম যারা করে তারা চিহ্নিত দল। এই দলটি বাংলাদেশকে কখনোই শান্তিতে থাকতে দেবে না। তবে বিএনপি সকল হত্যাকান্ড প্রতিরোধ করবে। আপনারা ভাববেন না আমরা নিরব আছি, নিরব থাকব। তার অর্থ এই না আঘাত আসলে আমরা আপনাদেরকে সালাম দিয়ে চলে যাব। এই কথা ভাবার সুযোগ নেই।
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহ উদ্দিন আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুব দলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
অন্যদিকে, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্ণেল জয়নুল আবেদিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের মিজানুর রহমান, নজরুল ইসলাম, এমএ হালিম, এমএ হাকিম খান, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের সদস্য সচিব কেএম কামরুজ্জামান নান্নু প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।