বিবিসি বাংলার অনুসন্ধান

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেভাবে লাইমলাইটে ওসমান হাদি

নির্বাচনী প্রচারের পোস্টার হাতে এই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন শরীফ ওসমান হাদি
নির্বাচনী প্রচারের পোস্টার হাতে এই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন শরীফ ওসমান হাদি  © বিবিসি বাংলা

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত-সমালোচিত নামগুলোর একটি হয়ে উঠেছিলেন শরীফ ওসমান হাদি। সম্প্রতি তার বক্তব্য আর কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি নিজে যেমন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন, কুড়িয়েছেন সমালোচনাও। অল্প সময়েই সমর্থকদের কাছে জনপ্রিয় এই যুবক প্রতিপক্ষের কাছেও হয়েছেন চক্ষুশূল।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের বিভিন্ন রায় নিয়ে সোচ্চার ছিলেন হাদি। সামাজিক মাধ্যম কিংবা বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুষ্ঠান-আলোচনায় তিনি নিয়মিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে শুরু করেন প্রচার-প্রচারণাও। এসব কাজের মাধ্যমে লাইমলাইটে চলে আসেন তিনি।

সম্প্রতি এমনই এক প্রচারাভিযানের সময় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত হন হাদি। রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কি এলাকার বক্স কালভার্ট রোডে হামলার শিকার হন ইনকিলাব মঞ্চের এই নেতা।

এর আগে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুরের সময় সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া কিংবা গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির নেতাদের ওপর হামলার পর হাদির বক্তব্যে অশালীন শব্দের ব্যবহার নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছিল। তার বক্তব্যে গণমাধ্যমে অপ্রকাশযোগ্য শব্দের ব্যবহার অনেকে যেমন সমালোচনার চোখে দেখেছেন। আবার তার সমর্থকেরা তাকে স্পষ্টভাষী হিসেবে প্রশংসাও করেছেন। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে তার বক্তব্য ভাইরাল হতে দেখা গেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর ইনকিলাব মঞ্চ নামে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক প্লাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হন ওসমান হাদি। সম্প্রতি প্রচারাভিযানের সময় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত হন তিনি।

শুরুতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় তাকে। পরে উন্নত আইসিইউ সাপোর্টের জন্য ভর্তি করা হয় ঢাকার এভায়কেয়ার হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তার অবস্থা ‘অত্যন্ত শঙ্কটজনক’।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সমর্থকদের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে আসছিলেন হাদি। কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টও দিয়েছিলেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তার ওপর এ হামলার ঘটনা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে লেখাপড়া শেষ করা শরীফ ওসমান হাদি। পাশাপাশি ইংরেজি শিক্ষার কোচিংয়েও ক্লাস নিতেন তিনি। শিক্ষাজীবন থেকেই রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন বরিশালের ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থেকে উঠে আসা এ যুবক।

ঝালকাঠির এন এস কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করা ওসমান হাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে চলে আসেন রাজধানীতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সক্রিয় কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দেখা যায়নি তাকে। ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান তাকে তুলে আনে রাজনীতির মঞ্চে।

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় নানা ভূমিকার মাধ্যমে আলোচনায় আসেন হাদি। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক প্লাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চ গঠন এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে তার দেওয়া নানা বক্তব্য আলোচনার জন্ম দেয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ, ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুরে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তিনি।

ইনকিলাব মঞ্চ গঠনের পর জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি রক্ষা, অপরাধীদের বিচার, আহত-নিহত ব্যক্তিদের স্বীকৃতি এবং জুলাই চার্টার ঘোষণার দাবি তুলে সভা সমাবেশ শুরু করেন হাদি, যা তাকে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে। ‘সমস্ত আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ’, ইনকিলাব মঞ্চের এ লক্ষ্য এবং প্ল্যাটফর্ম থেকে তার দেওয়া আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী নানা বক্তব্য তাকে তৈরি করে দেয় একটি সমর্থক গোষ্ঠী।

অবশ্য এর মাধ্যমে প্রতিপক্ষের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন। সামজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে কিংবা সভা-সামবেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি কয়েকবার ‘আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে’ বলেও দাবি করেন তিনি। একটি পোস্টে তিনি দাবি করেছিলেন, দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি ফোন নম্বর থেকে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তার বাড়িতে আগুন দেওয়াসহ মা, বোন ও স্ত্রীকে ধর্ষণের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা গণমাধ্যমে নানা কাজ ও বক্তব্যের মাধ্যমে যেমন আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন, তেমনি নানা কারণে বিতর্কিতও হয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি। আওয়ামী লীগ এবং ভারত-বিরোধী রাজনীতিতে সোচ্চার ছিলেন তিনি। এছাড়া রাজনীতির মাঠের বক্তব্যে কিংবা সামজিক মাধ্যমে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যেরও সমালোচনায় মুখর হতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন: মেডিকেল-ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার ফল নিয়ে সভায় কর্মকর্তারা

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে কিংবা নির্বাচনী প্রচারণায় কর্মী সমর্থকদের মধ্যে মুড়ি-বাতাসা বিতরণের ছবি নিয়েও সামাজিক মাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে প্রচারণার কৌশল কিংবা রাজনৈতিক নানা বক্তব্যের মধ্য দিয়েও তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।

ঢাকা-৮ সংসদীয় আসন (মতিঝিল, পল্টন, রমনা ও শাহজাহানপুর এলাকা) থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ওসমান হাদি। বেশ কিছুদিন ধরেই তার নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণাও চালাচ্ছিলেন। প্রচারণার নানা ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে দিয়েও আলোচনায় এসেছেন। সম্প্রতি প্রচারণার সময় হাদির পকেটে একজন টাকা ঢুকিয়ে দিচ্ছেন, এমন ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়।

এছাড়া ভোরে মসজিদের সামনে লিফলেট বিতরণ, নির্বাচনী ইশতেহার, ডোনেশনের মাধ্যমে ফান্ড কালেকশন কিংবা প্রচারণার সময় কেউ তাকে অর্থ দিচ্ছেন এমন নানা ভিডিও হাদি নিজেই সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করতেন। ওই আসনে নিজের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মির্জা আব্বাস, এনসিপি থেকে আলোচনায় আসা রিকশাচালক সূজন এবং জামায়াতের প্রার্থী হওয়ার আলোচনায় থাকা সাদিক কায়েমকে স্বাগত জানিয়েও আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন।

রাজনীতিতে ইতিবাচক আলোচনার যেমন জন্ম দিয়েছেন, তেমনি নানা কারণে বিতর্কের মুখেও পড়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের এই নেতা। গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি নেতাদের ওপর হামলা হলে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। সে সময়ও তার বক্তব্যে কুরুচিপূর্ণ এবং অশোভন শব্দ চয়ন সমালোচনার জন্ম দেয়।

হামলার নিন্দা জানিয়ে গোপালগঞ্জের প্রতিটি উপজেলা আশপাশের জেলায় যুক্ত করার দাবিও জানান তিনি। সে সময় হাদি বলেন, ‘বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকবে না যদি গোপালগঞ্জ বাইচা থাকে।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence