তফসিল ‘প্রত্যাখ্যান’ করলেও নির্বাচন বয়কট করছে না আওয়ামী লীগ

নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবন
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবন  © সংগৃহীত

বাংলাদেশে সদ্য ঘোষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিলেও নির্বাচন বয়কটের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ক্ষমতাচ্যুত ও বর্তমানে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ। দলটি ‘নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে’ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগের এক বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের জনগণের বৃহত্তম অংশের প্রতিনিধিত্বকারী শক্তিগুলোকে বাইরে রেখে ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রত্যাখ্যান করছে। দলটির ভাষ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন একটি অসাংবিধানিক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যা তারা অবৈধ নির্বাচন বলে মনে করে।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনাসহ দলের বহু শীর্ষ নেতা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। দলটির ভারতে অবস্থানরত নেতারা ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে তফসিল প্রত্যাখ্যান করা হলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন বয়কটের কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

এর আগে গত অক্টোবর মাসে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক ইমেইল সাক্ষাৎকারে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে যদি আগামী বছরের নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়া হয়, তাহলে দলের লাখ লাখ সমর্থক সেই নির্বাচন বয়কট করবে।

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন গত ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং দলটির নিবন্ধন স্থগিত থাকায় এই নির্বাচনে দলটি অংশ নিতে পারবে না।

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের ভারতে অবস্থানরত যেসব নেতার সঙ্গে বিবিসি বাংলা কথা বলেছে, তারা সবাই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এটা তো অসাংবিধানিক সরকারের অবৈধ নির্বাচন। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো সুযোগ আওয়ামী লীগের নেই।’

আরও পড়ুন: মিশনে আহত-নিহত বাংলাদেশি সেনাদের পরিচয় জানা গেল

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনই আওয়ামী লীগের মূল দাবি। নির্বাচন কমিশন গত মে মাসে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করায় দলীয় ব্যানার বা প্রতীকে কারও এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এর আগে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ পর্যায়ের বহু নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতৃত্ব বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। কেউ কেউ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশেও চলে গেছেন। দেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব প্রবাসে থেকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

ওবায়েদুল কাদের বলেন, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন সেটাকেই বলা হয়, যা অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ—যে দলকে বাংলাদেশের অর্ধেকেরও বেশি ভোটার সমর্থন করেন—তাদের বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন প্রহসন ছাড়া কিছু না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হলে তা জনগণই প্রত্যাখ্যান করবে এবং প্রতিহত করবে।’

একতরফা এই নির্বাচনের বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসা উচিত বলেও মন্তব্য করেন ওবায়েদুল কাদের। এ ক্ষেত্রে তিনি জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করলেও ভারতের নাম উল্লেখ করেননি।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার আগে আওয়ামী লীগ ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দুটি নির্বাচন ছাড়া দেশের বাকি সব জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এবারও দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে চায় বলে জানিয়েছে, যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে সে সুযোগ নেই বলেও দলটির নেতারা স্বীকার করেছেন।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আমরা নির্বাচনমুখী দল, নির্বাচনে বিশ্বাসী। সবসময়ই মোটামুটিভাবে ৪০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন আমাদের ছিল। সহযোগী দলগুলোর ভোট যোগ করলে তা প্রায় ৫০ শতাংশ।” তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রেখে দেওয়া হলে তা কোনো অর্থবহ নির্বাচন হতে পারে না। হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে জেলে রেখে এবং দলের নিবন্ধন বাতিল করে যে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, তা দল প্রত্যাখ্যান করছে।’

আরও পড়ুন: বুদ্ধিজীবীরা সবসময় আমাদের পথ দেখিয়েছেন: সাদিক কায়েম

আওয়ামী লীগের টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে দলটি দলীয় সরকারের অধীনে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজন করেছিল। প্রধান বিরোধী দলের বর্জনের কারণে দুটি নির্বাচন হয়েছিল একতরফা এবং অপরটিতে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে।

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকলেও দলটির শক্তিশালী ভোটব্যাংক রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। নৌকার সমর্থক ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মাঠপর্যায়ে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে নৌকা সমর্থকদের নিরাপত্তা, মামলা, হামলা বা হয়রানি থেকে রক্ষার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকায় দলটির ভোটারদের সমর্থন আদায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের মধ্যে নানা কৌশল ও তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি নেতাদের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে।

গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক নিয়ে ভিন্ন মূল্যায়ন করেছে। দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘নৌকার ভোটব্যাংক সেভাবে নেই, বর্তমানে এটি কমবেশি দশ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।’

নির্বাচনী তফসিল প্রত্যাখ্যান ও প্রতিহত করার কথা বললেও আওয়ামী লীগ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বয়কট করবে না বলেই একাধিক নেতা জানিয়েছেন। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২০২৪ সালে টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। সে নির্বাচন বিরোধী দলগুলো বর্জন করেছিল এবং তাদের শীর্ষ নেতারা তখন কারাগারে বা নির্বাসনে ছিলেন।

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং নির্বাচনে আস্থা রাখে। তিনি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, নির্বাচনে বিশ্বাসী। জনমতের ওপর আমাদের আস্থা আছে। মানুষ যাকে ভোট দেবে, তারাই শাসন করবে। এই নির্বাচনেও আমরা অংশ নিতে চাই, যদি তা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে নির্বাচন হলে মানুষই তাতে অংশ নেবে না।’

এদিকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, দলটি নির্বাচনে বিশ্বাস করে বলেই বয়কটের পথে যাচ্ছে না। 

তিনি বলেন, ‘আমাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে একটি অবৈধ সরকার আমাদের নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি বলেই বয়কট নয়, প্রতিহত করার কথা বলছি।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence