কাতার থেকে রাতেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পৌছাবে: মির্জা ফখরুল
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১৩ PM , আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১৮ PM
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যেতে কাতারের আমীরের দেয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রাতেই ঢাকায় পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, আপনারা ইতিমধ্যে শুনেছেন যে কাতার আমীর তার নিজের উদ্যোগে, তার মহানুভবতায় আমরা একটা অত্যন্ত উন্নতমানের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পেয়েছি। যেটা আজকে রাতের মধ্যেই এখানে এসে পৌঁছাবে এবং সম্ভবত খুব ভোরেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে তারা যুক্তরাজ্যে চলে যাবে। আনুষঙ্গিক যে সমস্ত কাজগুলো দরকার সেই কাজগুলো আমরা সেরে ফেলেছি এবং এখান থেকে আপনারা এর মধ্যে শুনেছেন যে কারা কারা যাচ্ছেন। ম্যাডামের সঙ্গে একটি চিকিৎসক দল যাচ্ছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কাতারের আমীরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি অত্যন্ত আধুনিক একটা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। এর মধ্যে অপারেশন থিয়েটার থেকে শুরু করে সব ব্যবস্থাই রয়েছে। আমরা পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলার কাছে এই দোয়া চাচ্ছি, যে আল্লাহ তাআলা তাকে যেন সুস্থভাবে নিয়ে যান, নিরাপদভাবে নিয়ে যান এবং সুস্থভাবে আমাদের মাঝে আমরা যেন তাকে ফিরে পেতে পারি।
বিএনপির পক্ষে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী এবং এই মুহূর্তে যিনি, দেশের দলমত নির্বিশেষে সমগ্র মানুষের কাছে যিনি একজন অভিভাবক হিসেবে পরিচিত এবং যার অসুস্থতার কারণে সারাদেশের প্রতিটি মানুষ তার জন্য দোয়া করছেন তার রোগ মুক্তির জন্যে। তার উন্নত চিকিৎসার জন্যে দেশি-বিদেশি ডাক্তারদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে দেশনেত্রীকে যুক্তরাজ্যের একটি উন্নত হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবও সায় জানিয়েছেন।
কাতারের আমীরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আগেই জানান তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন। ৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন থেকে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। ২০২০ সালে কারাগার থেকে মুক্তির পর দলের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তিনি সরাসরি অংশ নেননি।
তবে এবার লন্ডনে চিকিৎসা করিয়ে আসার পর তাকে ঘিরে বিএনপিতে নতুন করে উদ্দীপনা তৈরি হয়। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি তিনটি আসনে ভোট করবেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর মধ্যে গত ২৩ নভেম্বর রবিবার রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে ভর্তি করে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে নেওয়া হয় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে। সেই থেকে তিনি বিগত এগারদিন ধরে হাসপাতালে রয়েছেন।
অন্তর্বর্তী সরকার মঙ্গলবার খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’(ভিভিআইপি) ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয়।এর মধ্য দিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব এসএসএফকে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। এরপর মঙ্গলবারই এসএসএফ ও পিজিআর সদস্যরা এভারকেয়ার এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়।
তিন বাহিনীর প্রধানদের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান মঙ্গলবার রাতে এভারকেয়ারে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে আসেন। এরপর বুধবার রাতে সেখানে যান প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে এভারকেয়ার হাসপাতালের ১২ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসার তদারক করে আসছেন। চীন ও যুক্তরাজ্য থেকেও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গত কয়েক দিনে দেশে আসেন চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার জন্য।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল তার চিকিৎসায় নিয়োজিত মেডিকেল বোর্ড। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।