চবি শিক্ষার্থীদের উপর ভয়াবহ হামলার সেই উস্কানিদাতাকে দলে ভেড়াল বিএনপি

৩০ আগস্ট চবি শিক্ষার্থীদের ‘কুলাঙ্গার’ ডেকে সংঘর্ষে উস্কানি দেন সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া
৩০ আগস্ট চবি শিক্ষার্থীদের ‘কুলাঙ্গার’ ডেকে সংঘর্ষে উস্কানি দেন সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া  © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

গত ৩০ আগস্ট স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষার্থীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উস্কানি দিয়ে সমালোচিত সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। আজ শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উদয় কুসুমকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। তাকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ইতোপূর্বে দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পর্যায়ের পদ থেকে আপনাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। আপনার আবেদনের প্রেক্ষিতে দলীয় সিদ্ধান্তে আপনার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ ফিরিয়ে দেওয়া হলো। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে। এখন থেকে দলীয় নীতি ও শৃঙ্খলা মেনে দলকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে আপনি ভূমিকা রাখবেন বলে দল আশা রাখে।

চিঠির অনুলিপি দলের সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) হারুনুর রশিদ হারুন এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) ও হাটহাজারী আসনের এমপি প্রার্থী ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিনের কাছে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘ছেলে বাঁচি থাকি কিছু করি খাইতে পারবে না, তারপরও আমার জন্য বাঁচি থাকুক’

এর আগে গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন ও তৎকালীন প্রক্টর তানভীর হায়দার আরিফসহ কয়েকশ শিক্ষার্থী আহত হন। ওই সময় স্থানীয়দের পক্ষ নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়ার একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মামুন মিয়া
ধারালো অস্ত্রের আঘাতে চবি শিক্ষার্থী মামুন মিয়ার মাথার খুলি দীর্ঘদিন ফ্রিজে রাখতে হয়

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে বিএনপি নেতা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘কুলাঙ্গার’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘চট্টগ্রামের ভিসি সাহেব এসে দেখে গেছেন, তদন্ত করে গেছেন। আমরা বলতে চাই, এ ধরনের ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত, সড়ক অবরোধ থাকবে। কোনো আন্দোলনের কর্মসূচি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয় না। আমরা ভিসির সঙ্গে আলোচনা করলে, ভিসির বাপেও এ সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। এ উশৃঙ্খল কুলাঙ্গার ছেলেগুলো ভিসিকেও মানে না। আমরা বলতে চাই গতকাল সারারাত ধরে এই কুলাঙ্গার ছেলেরা আমাদের গ্রামের মা-ভাইবোনের ওপর নিরস্ত্র হামলা করেছে, এদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

আরও পড়ুন: ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’

তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন আমাদের মধ্যে ষড়যন্ত্র হতে পারে। কেউ কেউ দলের প্রশ্ন আনতে পারে। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, আমরা জুবরার সন্তান, এখানে কোনো দল নেই। আমরা সবাই এলাকার নাগরিক, আমাদের এলাকার নিরাপত্তার জন্য আমরা সবাই এক ও অভিন্ন। আমরা কোনো ধরনের ফ্যাসিস্ট শক্তির কাছে মাথা নত করব না। অনতিবিলম্বে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘২৪ ঘন্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে, আমরা জুবরার জনগণ বিশ্ববিদ্যালয় ঘেরাও করব। এর জন্য জীবন গেলে জীবন দেব। আমার মা-বোনের ইজ্জতের চেয়ে জীবন বড় নই, আমার এলাকার সন্তানের চেয়ে আমার জীবন বড় নই, সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়ার জন্য আমরা ২৪ ঘন্টা সময় দিয়েছি। এখন আমি ভিসির সঙ্গে কথা বলব।

আরও পড়ুন: গভীর রাতে দারোয়ান-ছাত্রীর মারামারিতে শুরু, বেড়েছে বাগছাসের ‘হিরোইজম’ ও পুলিশ-প্রশাসনের রহস্যময় ভূমিকায়

সমস্যা সমাধানে ২৪ ঘন্টা সময় দিচ্ছি, না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব এবং রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করব। সোজা আঙুলে ঘি উঠে না। কোনো আন্দোলন বা অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে, কোনো আলোচনা-আপোষের মাধ্যমে সমাধান পাবেন না। এ আন্দোলনে সবাইকে সম্পৃক্ত থাকার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’


সর্বশেষ সংবাদ