চট্টগ্রামে বিএনপির কমিটিতে ‘এস আলম কানেকশন’!
- চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৪ PM , আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৬ PM
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি ইউনিটে নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া ঘিরে ফের বিতর্কের আগুন জ্বালিয়েছে বহুল আলোচিত ‘এস আলম কানেকশন’। বিশেষ করে পটিয়া উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির নেতৃত্বে এস আলম গ্রুপের প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর অভিযোগে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
দল ইতোমধ্যে জেলা কমিটি পদপ্রত্যাশীদের বৃত্তান্ত সংগ্রহের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ জানানোর সুযোগও দিয়েছে। এ প্রক্রিয়া সামনে আসতেই নতুন কমিটিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে ব্যাপক তোড়জোড়। কেউ কেউ কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে ধরনা দিচ্ছেন, আবার বিতর্কিত কিছু নেতাও হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তদবিরের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের জন্য পদ নিশ্চিত করতে নেওয়া অপচেষ্টা থেমে নেই।
তৃণমূল নেতারা সতর্ক করেছেন, ত্যাগী, দক্ষ এবং দুঃসময়ে পরীক্ষিত পদপ্রত্যাশীদের এড়িয়ে যদি এস আলম গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্টরা কমিটিতে স্থান পান, তবে দল ভেতর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে নেতাকর্মীরা হতাশ হবেন এবং দলের অভ্যন্তরে নতুন রাজনৈতিক গ্রুপিং তৈরি হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এস আলমের লোকজন কমিটিতে ঢুকবে এমন কোনো সুযোগ নেই। যোগ্য, দক্ষ এবং দুঃসময়ে পরীক্ষিত নেতারাই মূল্যায়িত হবেন। সুবিধাবাদীদের বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। যাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আছে, তাদের কমিটিতে কোনো স্থান হবে না।’
গত ৮ অক্টোবর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া এক লিখিত অভিযোগে পটিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ কলিম উল্লাহ চৌধুরী উল্লেখ করেন, পটিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব খোরশেদ আলম কল-কারখানায় চাঁদাবাজি ও মামলা বাণিজ্যে জড়িত। এস আলম গাড়ি সরানোর ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা ছিল, যা তিনি নিজেই এক সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, একটি অডিও ক্লিপে দেখা গেছে তিনি শ্রমিক লীগ নেতাকে মামলার আসামি না করার গ্যারান্টি দিচ্ছেন।
২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা অভিযোগ করেন, এনামুল হক আওয়ামী লীগ আমলে ব্যবসায়ী হিসেবে রাজনৈতিক আঁতাত করেছেন এবং দলের দুঃসময়ে সুবিধাভোগী ছিলেন। যদিও পরবর্তীতে বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে এনামুল হকসহ তিন নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
২০২৫ সালের ৬ মে মো. ইদ্রিস মিয়াকে আহ্বায়ক ও লায়ন হেলাল উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে ৫৪ সদস্যবিশিষ্ট দক্ষিণ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এর পর থেকেই বিতর্কিত নেতারা আবারও তৎপর হয়ে উঠেছেন। অভিযোগ রয়েছে, এস আলম গ্রুপ রাজনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করতে তাদের ঘনিষ্ঠদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে মরিয়া।
কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যারা দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন, মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছেন, কেবল তারাই নতুন কমিটিতে স্থান পাবেন।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট রাতে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বিসিক এলাকায় মীর গ্রুপের গুদাম থেকে ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় ২ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এসএম মামুন মিয়াকে দল থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়।