লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা-তারেকের বৈঠক: সন্তুষ্ট উভয় পক্ষই
নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও আমীর খসরুর যৌথ সংবাদ সম্মেলন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৫, ০৯:৩১ PM , আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫, ১০:৩৫ AM

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার দেড় ঘণ্টার বৈঠকের পর একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এসময় দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা তাদের সন্তুষ্টির কথা জানান। শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের সাক্ষাতের পরে অনুমোদিত যৌথ বিবৃতি পড়ে শোনান নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং আমীর খসরু যৌথভাবে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
এর আগে, লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা) অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টা) বৈঠক শেষ হয়। পরে বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটার দিকে ওই হোটেলেই যৌথ সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে কথা বলেন খলিলুর রহমান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন।
যৌথ বিবৃতিতে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও মনে করেন, ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচার বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে। তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এ অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাঁকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্রের পথে মেঘ জমলে বৃষ্টি হয়ে আসে জিয়া পরিবার: নাছির
লিখিত বিবৃতি পড়ে শোনানোর পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, সাতটি প্রশ্ন নেওয়া হবে। আপনারা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে প্রশ্নগুলো করবেন। এরপর প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়।
এ পর্বে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকে জুলাই সনদ নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না। এ প্রশ্নের উত্তর দেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে তো ইতিমধ্যে আলোচনা চলছে দেশে এবং এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যে ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত আছে যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ হবে। তিনি আরও বলেন, সংস্কারের ব্যাপারেও একই উত্তর আমাকে দিতে হয় যে ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সংস্কার ও জুলাই সনদ—দুটোই করব। সবার ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং আমি নিশ্চিত, খুব কম সময়ের মধ্যে আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারব। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সম্পূরক প্রশ্নেরও জবাব দেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, ঐকমত্য যেখানে হবে, স্বাভাবিকভাবে ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে যে সিদ্ধান্ত হবে, স্বাক্ষরিত তো হবেই, না হওয়ার কোনো কারণ তো নেই।
নির্বাচনের একটি সঠিক তারিখ নির্ধারণে আসলে সমস্যাটা কোথায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, এর কোনো সমস্যাই নেই। আমরা কোনো সমস্যা দেখছি না, কেউ দেখলে পরে এটা ভুল দেখছেন। নির্বাচনের সম্পর্কে আজকে যৌথ বিবৃতিতে আমরা বলে দিয়েছি দুই পক্ষই এবং আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন শিগগিরই একটা তারিখ ঘোষণা করবে।
আরও পড়ুন: আগামী ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে
বৈঠকে কি শুধু নির্বাচন নিয়েই কথা হয়েছে, নাকি দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও অন্যান্য বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, সব বিষয়ে আলোচনা তো হবে, স্বাভাবিক। আমরা তো নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছি। সবাই আমরা চাই, দেশ গড়ার যে প্রত্যয় আমরা নিয়েছি, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই কাজটা করব।
তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে এখানে (লন্ডন) অবস্থান করছেন এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও বলেছেন, তার দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই। তার এ ব্যাপারে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না বা তিনি কবে দেশে ফিরতে পারেন? এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ ব্যাপারে আলোচনার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমরা মনে করি না। তারেক রহমান সাহেব যখনই ইচ্ছা দেশে ফিরে যেতে পারবেন। সুতরাং এটার সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন, সময়মতো।
সংবাদ সম্মেলনে এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা বৈঠকে উভয় পক্ষ সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে খলিলুর রহমান ও আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট। এর সঙ্গে আমীর খসরু বলেন, আমরা তো বলছি নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরও নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনের শেষ বাক্যে খলিলুর রহমান বলেন, সন্তুষ্ট না হলে তো যৌথ ঘোষণা আসার কথা নয়।