নির্বাচনের পরই সেনা অভ্যুত্থান দেশটিতে, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল, প্রেসিডেন্ট গ্রেপ্তার

গিনি-বিসাউয়ের প্রেসিডেন্ট পদচ্যুত, ক্ষমতা দখল সেনাবাহিনীর
গিনি-বিসাউয়ের প্রেসিডেন্ট পদচ্যুত, ক্ষমতা দখল সেনাবাহিনীর  © সংগৃহীত

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে তীব্র রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনি-বিসাউয়ে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। বুধবার রাতে ‘হাই মিলিটারি কমান্ড ফর দ্য রেস্টোরেশন অব অর্ডার’ নামের নতুন সেনা জোট ঘোষণা করে, তারা ‘সফলভাবে’ ক্ষমতা দখল করেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে সরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত বিবৃতিতে তারা দেশের উপর ‘নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় এবং প্রেসিডেন্ট উমারো সিসোকো এমবালোকে গ্রেপ্তারের কথা জানায়।

বুধবার রাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া বিবৃতিতে নিজেদের ‘শৃঙ্খলা পুনর্বহালের জন্য উচ্চ সামরিক কমান্ড’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে সেনা কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন প্রক্রিয়া ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ স্থগিত থাকবে। একই সঙ্গে দেশের সব স্থল, আকাশ ও নৌসীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং রাতের জন্য কারফিউ জারি করা হয়।

এর আগেই রাজধানী বিসাউয়ে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়, প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আশপাশে টানা গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।

রবিবার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় বর্তমান প্রেসিডেন্ট উমারো সিসোকো এমবালো এবং তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ফার্নান্দো দিয়াসের মধ্যে। ফ্রান্স ২৪–কে ফোনে এমবালো নিশ্চিত করেন, তাকে ‘ক্ষমতাচ্যুত’ করা হয়েছে এবং তিনি জেনারেল স্টাফ সদর দপ্তরে আটক অবস্থায় আছেন।

আল–জাজিরা জানায়, শুধু এমবালো নয়, প্রধান বিরোধী দল পিএআইজিসি–র নেতা ডমিঙ্গোস সিমোইস পেরেইরাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিবেদক নিকোলাস হক বলেন, সেনাবাহিনী ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে এবং রাজধানীতে কারফিউ চলছে। তিনি আরও জানান, অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডেনিস এন’কানহা—যিনি প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর প্রধান ছিলেন।

১৯৭৪ সালে স্বাধীনতার পর গিনি-বিসাউতে সামরিক অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থানচেষ্টার ইতিহাস দীর্ঘ। এই নির্বাচনের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল সিভিল সোসাইটি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংগঠনগুলো, কারণ প্রধান বিরোধী দল পিএআইজিসি–কে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।

এম্বালো এবং দিয়াস—দুই প্রার্থীই ফল প্রকাশের আগেই নিজের বিজয় দাবি করেন। এমবালোর প্রচার শিবিরের মুখপাত্র অস্কার বারবোসা দাবি করেন, দ্বিতীয় দফার প্রয়োজন হবে না এবং প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় মেয়াদে বিজয়ী হবেন। অন্যদিকে দিয়াস সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে বলেন, ‘প্রথম দফাতেই জয় নিশ্চিত।’

অভ্যুত্থানের পর পশ্চিম আফ্রিকার আঞ্চলিক জোট ইকোওয়াস, আফ্রিকান ইউনিয়ন, জাতিসংঘ এবং পর্তুগাল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইকোওয়াস ও এউ’র যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, দুই শীর্ষ প্রার্থী জনগণের রায় মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এর ঠিক পরেই সেনা দখলের ঘোষণা ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’। আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তি এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে নিতে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান তারা।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও সব পক্ষকে সংযম দেখাতে ও আইনের শাসন মানতে আহ্বান জানিয়েছেন। পর্তুগাল সরকার একইভাবে সকল পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানায় এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাভাবিকভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার কথা বলে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence