শান্তিতে নোবেল পেতে পারেন সম্ভাব্য যে ১০ প্রার্থী
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০২:১৫ PM , আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩৪ PM
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই, বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় ঘোষণা করা হবে ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার। ঘোষণার আগেই বিশ্বজুড়ে চলছে জল্পনা–কল্পনা, কে পাচ্ছেন এবারের মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরে যেমন আলোচনার ঝড় উঠেছে, তেমনি প্রকৃত অর্থে শান্তিতে অবদান রাখা সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়েও কৌতূহলের শেষ নেই।
আগের বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন ইরানি মানবাধিকারকর্মী নার্গেস মোহাম্মদী (২০২৩), দালাই লামা (১৯৮৯) ও মার্টিন লুথার কিং (১৯৬৪)। এবারও সেই তালিকায় যুক্ত হওয়ার আশায় আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে দায়িত্ব পালনকালে ‘আটটি যুদ্ধ’ শেষ করার দাবি তুলে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। তবে তার দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা, পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি, আন্তর্জাতিক সাহায্য কমিয়ে দেওয়া ও অভিবাসন নির্বাসনের মতো পদক্ষেপ তাকে ঘিরে বিতর্কও সৃষ্টি করেছে।
এসব আলোচনা পেছনে ফেলে শুক্রবার (১০ অক্টোবর) নরওয়ের অসলোতে নোবেল কমিটি যে ১০ জনকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন মানবিক সংগঠন, রাজনৈতিক নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুন: শান্তিতে নোবেলের জন্য ট্রাম্পকে যেসকল রাষ্ট্র সুপারিশ করেছে
১. দ্য ইমারজেন্সি রেসপন্স রুমস (ERRs)
সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধে আক্রান্ত জনগণের পাশে থাকা তরুণদের এই তৃণমূল সংগঠনটি বর্তমানে ৭০০-রও বেশি কমিউনিটি-ভিত্তিক গ্রুপের সমন্বয়ে কাজ করছে। তারা চিকিৎসা সহায়তা, কমিউনাল রান্নাঘর পরিচালনা, মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া এবং সংঘাতের নথিপত্র সংরক্ষণসহ বহু মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জাতিসংঘ যাকে বলেছে “বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট,” সেই প্রেক্ষাপটে ERR-এর কাজ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত।
২. ভলোদিমির জেলেনস্কি
রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত কয়েক বছর ধরেই শান্তি পুরস্কারের আলোচনায় আছেন। ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় কিয়েভ–মস্কো শান্তি আলোচনায় স্থবিরতা থাকা অবস্থায়, জেলেনস্কিকে পুরস্কৃত করা ইউক্রেনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থনকে আরও জোরদার করতে পারে।
৩. রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (RSF)
তথ্যের স্বাধীনতা ও মুক্ত সাংবাদিকতার পক্ষে লড়াই করা এই আন্তর্জাতিক সংগঠনটি ২০২১ সালে মারিয়া রেসা ও দিমিত্রি মুরাতভের পুরস্কার পাওয়ার পর আবারও আলোচনায় এসেছে। বিশেষত গাজায় চলমান যুদ্ধে সাংবাদিকদের ঝুঁকি এবং বিশ্বজুড়ে স্বাধীন গণমাধ্যমের সংকটকে সামনে রেখে RSF-কে পুরস্কৃত করা হলে তা প্রতীকী তাৎপর্য বহন করবে। গত দুই বছরে গাজায় অন্তত ২১০ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে RSF।
৪. মাহরং বালুচ
পাকিস্তানের বেলুচ মানবাধিকারকর্মী মাহরং বালুচ দীর্ঘদিন ধরে অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে লড়ছেন। বর্তমানে তিনি সন্ত্রাসবাদ, রাষ্ট্রদ্রোহ ও হত্যার অভিযোগে কারাবন্দি। ৩০ বছর বয়সী এই সার্জন মালালা ইউসুফজাইয়ের পর দ্বিতীয় পাকিস্তানি নারী হিসেবে নোবেলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন।
৫. আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC)
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুসহ দুই ইসরাইলি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করায় যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে ICC। তবু বিশ্বজুড়ে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার বিচারে এর ভূমিকা নোবেল কমিটির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আদালত ইতিমধ্যে বহু রাষ্ট্রপ্রধান ও যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করেছে।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের নোবেল পাওয়ার ভাগ্য যে পাঁচ বিচারকের হাতে
৬. ইউলিয়া নাভালনায়া
রুশ বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া স্বামীর আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি “ফিউচার অব রাশিয়া” নামে একটি টেলিভিশন চ্যানেল চালু করেছেন, যা ক্রেমলিনের প্রচারণার বিপরীতে রুশ নাগরিক সমাজের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। তাঁর নাম এ বছরও আলোচনায় আছে।
৭. চৌ হ্যাং-তুং
হংকংয়ের আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী চৌ হ্যাং-তুং তিয়ানআনমেন স্কয়ার হত্যাযজ্ঞ স্মরণে আয়োজিত বার্ষিক সভার সংগঠক দলের সহসভাপতি ছিলেন। ২০২১ সালে সংগঠনটি চীনা চাপের মুখে বিলুপ্ত হয়। পরবর্তী সময়ে সামাজিক মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে মন্তব্যের অভিযোগে চৌ বারবার গ্রেপ্তার হন। তাঁর লড়াই হংকংয়ের গণতন্ত্র আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
৮. স্ট্যান্ডিং টুগেদার
ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনি নাগরিকদের নিয়ে গঠিত এই শান্তি সংগঠনটি ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি স্থাপন বন্ধ, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিতের দাবিতে তারা ধারাবাহিক আন্দোলন চালাচ্ছে। সংগঠনটির ৫,৩০০ সদস্য সক্রিয়ভাবে মাঠে কাজ করছেন।
৯. শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল-থানি
কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আল-থানি হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সফলভাবে সম্পন্ন করেন। তিনি আফগানিস্তান, লেবানন, সুদান ও ইয়েমেনসহ বিভিন্ন সংঘাতে মধ্যস্থতার ভূমিকা রেখেছেন। নোবেল পুরস্কার তাঁর নেতৃত্বাধীন কূটনীতিকে আঞ্চলিক শান্তির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরতে পারে।
১০. ন্যাটো
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর নামও আলোচনায় এসেছে, যদিও এটি বিতর্কিত প্রস্তাব। নোবেল কমিটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক দক্ষিণের প্রার্থীদের প্রাধান্য দিচ্ছে। তবু ন্যাটোকে পুরস্কার দেওয়া হলে তা প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধিকে শান্তির পথে বাধা হিসেবে বিবেচনার বার্তা বহন করতে পারে।
সূত্র: ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর