এবার আরেক দেশে শুরু হয়েছে জেন জি বিপ্লব

 মরক্কোতে বিক্ষোভ
মরক্কোতে বিক্ষোভ  © সংগৃহীত ছবি

আফ্রিকার দেশ মরক্কোতে শুরু হয়েছে জেন জি বিপ্লব। বাংলাদেশ, নেপাল, মাদাগাস্কারের পর নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়েছে দেশটিতে। ‘জেন জি ২১২’ নামে একটি তরুণ সংগঠনের ডাকে বিক্ষোভ চলছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি কমানোর দাবি জানিয়েছে। তাদের স্লোগান ‘বিশ্বকাপ নয়, স্বাস্থ্যসেবা অগ্রাধিকার হোক’ এবং ‘আমরা চাই হাসপাতাল, স্টেডিয়াম নয়’।

মরক্কো বর্তমানে ২০৩০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ যৌথ আয়োজনের অংশ হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণ করছে, যার আসন সংখ্যা প্রায় এক লাখ পনের হাজার এবং নির্মাণের খরচ আনুমানিক ৫ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আন্দোলনকারীরা এই ব্যাপক খরচকে সরকারের অগ্রাধিকার ভুল বলছেন। সেতত শহরের ২৫ বছর বয়সী কমিউনিকেশন ম্যানেজার হাজর বেলহাসান বলেন, তিনি তার দেশের উন্নতির জন্য প্রতিবাদ করছেন এবং মরক্কোতে থাকতে চান।

এই আন্দোলনের সমন্বয় করছে ‘জেন জি ২১২’ নামের গোষ্ঠী, যা দেশটির আন্তর্জাতিক ডায়ালিং কোড থেকে নামকরণ হয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন ডিসকর্ড, টিকটক ও ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে প্রতিবাদের আয়োজন করছে। নেপালের সাম্প্রতিক যুব আন্দোলনের প্রভাবও এই আন্দোলনে লক্ষণীয়। তারা সরকারের কাছে তাদের সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান ও কার্যকর পদক্ষেপ চান।

স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, কিছু বিক্ষোভকারী নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পাথর নিক্ষেপ করেছে এবং ভিডিও ফুটেজে গাড়ি ও ব্যাংকে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ধরা পড়েছে। তবে মরক্কোর মানবাধিকার সংগঠন এএমডিএইচ অভিযোগ করেছে, নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছে এবং নির্বিচারে গ্রেফতার করছে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ম্যাপ জানিয়েছে, ওউজদা শহরে এক বিক্ষোভকারী পুলিশ গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়েছেন।

‘জেন জি ২১২’ সংগঠন বিক্ষোভে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং অংশগ্রহণকারীদের শান্তিপূর্ণ থাকার আহ্বান জানিয়েছে। তারা তাদের ন্যায্য দাবির বৈধতাকে অবমূল্যায়ন না করার অনুরোধ করেছে।

বিক্ষোভকারীরা উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্মত শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের দাবি তুলেছেন। কেউ কেউ ফিফা বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম নির্মাণের ব্যয় নিয়েও সমালোচনা করেছেন। এক বিক্ষোভকারীর প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, “অন্তত ফিফা স্টেডিয়ামে ফার্স্ট এইড কিট থাকবে! আমাদের হাসপাতালগুলোতেও সেটাই নেই।”

এই বিক্ষোভের সঙ্গে চলতি বছর এশিয়া ও আফ্রিকার অন্য দেশগুলোতে তরুণদের নেতৃত্বে হওয়া আন্দোলনের মিল পাওয়া যায়। নেপালে আন্দোলনের চাপের কারণে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, আর মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট সরকার ভেঙে দিয়েছেন।

এ পর্যন্ত মরক্কোতে অনেক বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তবে অধিকাংশকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এএমডিএইচ জানিয়েছে, এখনও ৩৭ জন তরুণের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

 

 


সর্বশেষ সংবাদ