ফ্লোটিলা বহরের সর্বশেষ জাহাজ ‘ম্যারিনেট’ গাজার পথে, কখন পৌঁছাবে?

ফ্লোটিলা বহরের সর্বশেষ জাহাজ ‘ম্যারিনেট’ গাজার পথে
ফ্লোটিলা বহরের সর্বশেষ জাহাজ ‘ম্যারিনেট’ গাজার পথে  © টিডিসি সম্পাদিত

ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলা ও ৪২টি জাহাজ অবরুদ্ধ হওয়ার পরও গাজার উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলেছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার শেষ জাহাজ ‘ম্যারিনেট’। জাহাজটি বর্তমানে গাজার উপকূল থেকে প্রায় ৪৩ নটিকেল মাইল বা ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। বর্তমানে এটি ঘণ্টায় ৩ দশমিক ৭৮ নটিকেল মাইল গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। এ গতিতে চলতে থাকলে গাজার উপকূলে পৌঁছাতে আরও প্রায় সাড়ে ১১ ঘণ্টা সময় লাগবে (বাংলাদেশ সময় সাড়ে ১০টার সর্বশেষ তথ্য)।

জাহাজের বর্তমান অবস্থান সরাসরি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। এই বহরে ছিলেন বিভিন্ন দেশের রাজনীতিক ও অধিকারকর্মীরা, যাদের মধ্যে সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও রয়েছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, বর্তমানে গাজায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ছে, আর সেই পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর লক্ষ্যে এ ফ্লোটিলার অভিযান।

এদিকে ইসরায়েলি নৌবাহিনী বুধবার থেকে ফ্লোটিলার জাহাজগুলো আটকাতে শুরু করে। একদিন পর বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের একজন কর্মকর্তা জানান, ৪০০ জনের বেশি যাত্রী থাকা একাধিক জাহাজকে উপকূলীয় এলাকায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা এক বিবৃতিতে জানায়, তাদের ৪২টি জাহাজ ‘বেআইনিভাবে ইসরায়েলি বাহিনী আটক করেছে’ এবং যাত্রীদের ‘অবৈধভাবে অপহরণ’ করা হয়েছে।

তবে একমাত্র জাহাজ ‘ম্যারিনেট’ এখনো মিশন অব্যাহত রেখেছে বলে ফ্লোটিলার ট্র্যাকারে নিশ্চিত করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টে ফ্লোটিলা জানায়, ‘বিশ্ব দেখেছে কীভাবে ইসরায়েলের অবরোধ চ্যালেঞ্জ করলে তার পরিণতি কী হয়। তবু ম্যারিনেট এগিয়ে চলেছে। সে জানে তার সঙ্গীদের কী হয়েছে, জানে তার সামনে কী অপেক্ষা করছে, কিন্তু তবু সে থামে না।’

ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বৃহৎ বিক্ষোভ হয় বৃহস্পতিবার। বার্সেলোনায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়ে স্লোগান দেয়: ‘গাজা, তুমি একা নও’, ‘ইসরায়েলকে বয়কট করো’ এবং ‘ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চাই’।

আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্ট ভবনের সামনেও শত শত মানুষ বিক্ষোভ করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মিরিয়াম ম্যাকন্যালি, যার কন্যা এই ফ্লোটিলায় যাত্রা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে আছি।’

প্যারিস, বার্লিন, দি হেগ, তিউনিস, ব্রাসিলিয়া ও বুয়েনস আইরেসেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এই অভিযানে অংশ নেওয়া নৌবাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা করেছেন। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ইউম কিপ্পুরের দিনে ইসরায়েলি নৌবাহিনী অত্যন্ত পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে। তাদের এ পদক্ষেপ যুদ্ধক্ষেত্রে বহু জাহাজ প্রবেশের চেষ্টা প্রতিহত করেছে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পরিচালিত একটি অপপ্রচারে রুখে দিয়েছে।’

এদিকে, গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস’–এর এক কর্মীও ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর ইসরায়েল–গাজা যুদ্ধ শুরু হয়। ওই হামলায় ১,২১৯ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। এর পাল্টা অভিযানে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৬৬,২২৫ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যেও বেশিরভাগই বেসামরিক, এমন তথ্য দিয়েছে হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, যা জাতিসংঘ নির্ভরযোগ্য হিসেবেই বিবেচনা করে।


সর্বশেষ সংবাদ