শিক্ষাব্যবস্থার একটি মডেল প্রস্তাব

ড. কামরুল হাসান মামুন
ড. কামরুল হাসান মামুন  © ফাইল ফটো

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি চাইলে ফাউন্ডেশন লেভেলে অর্থাৎ স্কুল লেভেলে প্রথমে হাত দিতে হবে। প্রাইমারী এবং মাধ্যমিক স্কুলের উন্নতির জন্য ফিনল্যান্ডের মডেল চালু করতে হবে আগে। সেটা করতে হলে বিপুল পরিমান শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে একটি মূল্যায়ন পরীক্ষার মাধ্যমে মানহীন শিক্ষকদের যথাযথ আর্থিক প্যাকেজের মাধ্যমে অবসরে পাঠাতে হবে। নিয়োগ দিতে হবে অত্যন্ত উচ্চমানের শিক্ষক। স্কুল হবে আনন্দময়। স্কুলের শিক্ষকরাই হতে পারে সত্যিকারের মোটিভেটর।

স্কুল হবে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। প্রতিটি স্কুল হবে মনোরম পরিবেশে আর অত্যন্ত মেধাবীদের যথেষ্ট বেতন দিয়ে ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। কলেজ হবে নবম থেকে দ্বাদশ প্লাস দুই বছরের বিএ/বিএসসি ডিগ্রী। নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত শ্রেণীটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নবম-দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা যদি বর্তমান কলেজের শিক্ষকদের শিক্ষক হিসাবে পায় আমার ধারণা শিক্ষার মানের আমূল পরিবর্তন ঘটবে। সাধারণ কলেজে অনার্স মাস্টার্স পড়ানো একদম বন্ধ করে দিয়ে পুরাতন সেই দুই বছরের বিএ/বিএসসি ডিগ্রী চালু করা উচিত।

পড়ুন: ঢাবির অধিভুক্ত সাত কলেজের সমস্যা সমাধানের উপায়

আমাদের কলেজগুলোর অনার্স-মাস্টার্স পড়ানোর সক্ষমতা নাই। অনার্স মাস্টার্স পড়াতে হলে পিএইচডি ধারী শিক্ষক দরকার। মাস্টার্সে থিসিস করানোর যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক দরকার। সেইটা করতে হলে ল্যাব এবং গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টির দরকার। বর্তমানে কলেজগুলোর প্রতিটি বিভাগে শিক্ষক সংকট চরমে। ঢাকা কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগে অনার্সে ৫টি ব্যাচ এবং মাস্টার্সের ২টি ব্যাচ।

পরিসংখ্যানে সব মিলিয়ে শিক্ষক সংখ্যা ৫ জন। একই রকম অবস্থা বলা চলে ইডেন মহিলা কলেজ, তিতুমীর কলেজসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৭ কলেজের। এই ৭টি কলেজকে বলা চলে এলিট কলেজ। হয়ত একই অবস্থা আনন্দমোহন কলেজ, মদনমোহন কলেজ, বিএম কলেজ, বিএল কলেজ। এর বাহিরে যত কলেজ আছে একটু ভেবে দেখুন কি দুরবস্থা। শিক্ষক নাই, ল্যাব নাই, লাইব্রেরি নাই কিন্তু বছরের পর বছর ধরে অনার্স মাস্টার্স দিয়ে যাচ্ছে।

ঢাকার ৭টিসহ অন্যান্য বড় শহরের কিছু বড় কলেজ ছাড়া বাকি সকল কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পূর্ণ উঠিয়ে দেওয়া উচিত। এর পরিবর্তে দুই বছরের বিএ/বিএসসি ডিগ্রী চালু করা উচিত। আমাদের পুরোনো সিস্টেমে এটাই ছিল এবং এই সিস্টেমে আমরা ভালো মানের স্কুল শিক্ষক তৈরী করতে পারতাম। তৎকালীন অনেক বিএসসি শিক্ষক ছিলেন তারা আসলেই স্কুলের জন্য দুর্দান্ত ছিলেন।

যেইসব বড় বড় কলেজে অনার্স-মাস্টার্স থাকবে সেখানে উচ্চতর ডিগ্রী সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বড় বড় এই কলেজগুলোর প্রত্যেকটিকে একেকটি বিশ্ববিদ্যালয় বলা যায়। প্রশ্ন হলো সেখানে অনার্স এবং মাস্টার্সে পড়ানোর মত যোগ্য শিক্ষক কি যথেষ্ট আছে? মাস্টার্সের ছাত্রদের থিসিস করানোর মত শিক্ষক কি আছে? এই জায়গাটায় আমাদের অনেক কিছু করার আছে। ইউরোপ আমেরিকা থেকে পিএইচডি ডিগ্রীধারীদের সরাসরি সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগসহ অন্যান্য সুবিধাদি দিয়ে নিয়োগের মাধ্যমে এইসব কলেজের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ