এনটিআরসিএর ভাইভার ফাঁদে ২০ হাজার প্রার্থী, আরবিতে ফেল এত বেশি কেন?

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ  © টিডিসি সম্পাদিত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবের্ডের অধীনে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে স্টারমার্ক পেয়ে দাওরায়ে হাদিস পাস করা আরিফুল ইসলাম আব্বাদ (ছদ্মনাম) ১৭তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রাজধানীর একটি স্বনামধন্য মাদরাসায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। তিনি ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় আরবি প্রভাষক (বিষয় কোড: ৪২৯) প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় পাস করে ভাইভায় অংশগ্রহণ করেন। তাকে ভাইভায় নাহু-সরফ (আরবি গ্রামার) থেকে মোট ১৭টি প্রশ্ন করা হয়, তিনি ১৫টিরই সঠিক উত্তর দেন। সনদপত্রে কোনো সমস্যা নেই, ভাইভাও ছিল প্রাণবন্ত। তিনি ভাবতেই পারেননি তিনি অনুত্তীর্ণ হবেন। ফল প্রকাশের পর দেখা গেল তিনি অনুত্তীর্ণ।

আরিফুল ইসলামের মতোই প্রায় ২ হাজার চাকরি-প্রত্যাশী প্রভাষক আরবি পদে ভালো ভাইভা দিয়েও অনুত্তীর্ণ হয়েছেন। আরবি প্রভাষকে (মাদরাসা) প্রায় ৪৭ শতাংশ প্রার্থীই ফেল করেছেন। শুধু আরবি বিষয়েই নয়, অন্যান্য বিষয় মিলে ২০ হাজারেরও বেশি প্রার্থী অনুত্তীর্ণ হয়েছেন, যা শিক্ষক নিবন্ধনের ইতিহাসে একদমই বিরল। ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় আরেকটি বড় সমস্যা হয়েছে এনটিআরসিএ কর্তৃক প্রকাশিত ‘প্রশ্নের ধারা ও মানবণ্টন’-বহির্ভূত প্রশ্ন করা। নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর, কিন্তু এরও ৫ মাস পর ২০২৪ সালের ১৭ এপ্রিল এনটিআরসিএ তাদের ওয়েবসাইটে পরিবর্তিত ‘সিলেবাস, প্রশ্নের ধারা ও মানবণ্টন’ প্রকাশ করে। কিন্তু দুঃখজনক, প্রার্থীদের প্রস্তুতির সাড়ে ৫ মাস সময় অতিবাহিত হওয়ার পর প্রকাশিত সে পরিবর্তিত ‘সিলেবাস, প্রশ্নের ধারা ও মানবণ্টন’ অনুযায়ী প্রশ্ন করেনি। প্রভাষক আরবি, মাদরাসার (বিষয় কোড: ৪২৯) বিষয়ে প্রকাশিত ওই সিলেবাস, প্রশ্নের ধারা ও মানবণ্টন অনুযায়ী আত-তাফসীর অংশের মান ২০। সেখানে অনুবাদে ৮ নম্বর রাখা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে অনুবাদে ২টি অংশ থাকবে, ১টির উত্তর দিতে হবে। ১৩ জুলাই অনুষ্ঠিত প্রভাষক আরবির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ২টি অংশ ছিল না, ১টিই ছিল। তার চেয়ে বড় সমস্যা হলো স্ববিরোধী প্রশ্ন। অনুবাদের ৮ নম্বর যাওয়ার পর নিচে ৩টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন দিয়ে ৩টি থেকে যেকোনো ২টি প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয়েছে। কিন্তু ৩টি প্রশ্নের সঙ্গেই ৪ করে নম্বর করে দেওয়া আবার উত্তর চাওয়া হয়েছে দুটির। উপরে লেখা ‘২টি প্রশ্নের উত্তর দিন’ অনুযায়ী উত্তর দিলে প্রশ্নের পাশে দেওয়া নম্বর হয় ৮। তা ছাড়া তাহকিকের জন্য প্রশ্নের ধারা ও মানবণ্টনে বলা হয়েছে, ‘৬টি শব্দ থাকবে; ৪টির তাহকিক করতে হবে’। কিন্তু প্রশ্নপত্রে ৬টি শব্দ ছিল না, ৪টিই ছিল। প্রশ্নপত্রে কুরআনের সুরা হুজুরাতের ১১নং আয়াতের অনুবাদ করতে বলা হয়। কিন্তু সে আয়াতের শব্দ ‘তালমিযু’-এর স্থলে ‘তালতামিযু’ দেয়। হাদিস অংশে অন্তত ৩টি শব্দ ভুল দেয়। তা ছাড়া হাদিস অংশের অনুবাদের জন্য প্রদত্ত প্রশ্নের ধারা ও মানবণ্টনে বলা হয়েছে, ‘২টি হাদিস থাকবে; ১টির অনুবাদ লিখতে হবে’। কিন্তু প্রশ্নপত্রে ২টি হাদিস ছিল না। এ অংশে তাহকিকের জন্য প্রদত্ত প্রশ্নের ধারা ও মানবণ্টনে বলা হয়েছে, ‘৬টি শব্দ থাকবে; ৪টির তাহকিক করতে হবে’। কিন্তু প্রশ্নপত্রে ৬টি শব্দ ছিল না, ৪টি ছিল।

আরও পড়ুন: জার্নাল কোয়ার্টাইল র‍্যাংকিং: গবেষণার মান যাচাইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক

আল-ফিকহ অংশের প্রশ্নের ধারা ও মানবণ্টনে বলা হয়েছে, ‘৬টি প্রশ্ন থাকবে; যেকোনো ৪টির উত্তর লিখতে হবে’। কিন্তু প্রশ্নপত্রে ৬টি প্রশ্ন ছিল না। ছিল ৪টিই। এ অংশের উত্তর আরবিতে চাওয়ার কথা, প্রশ্নপত্রে আরবিতে উত্তর দেওয়ার কথা লেখা নেই। আরবি ভাষা অংশে গদ্যাংশের অনুবাদের জন্য প্রদত্ত প্রশ্নের ধারা ও মানবণ্টনে বলা হয়েছে, ‘২টি অংশ থাকবে; ১টির বাংলায় অনুবাদ লিখতে হবে’। কিন্তু প্রশ্নপত্রে ২টি অংশ ছিল না, ১টিই ছিল। এ অংশে পদ্যাংশের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘২টি অংশ থাকবে; ১টির আরবিতে ব্যাখ্যা লিখতে হবে’। কিন্তু এখানেও ২টি অংশ ছিল না, ছিল ১টি। আরবি ব্যাকরণ অংশের কাওয়াইদ যাচাইয়ের জন্য প্রদত্ত প্রশ্নের ধারা ও মানবণ্টনে বলা হয়েছে, ‘১টি বিষয়ের ওপর ৭টি প্রশ্ন থাকবে; ৫টির উত্তর লিখতে হবে’। কিন্তু প্রশ্নপত্রে ৭টি প্রশ্ন ছিল না, ৫টি ছিল। এ অংশে বাক্যশুদ্ধিতে বলা হয়েছে, ‘৭টি বাক্য থাকবে; ৫টি বাক্য শুদ্ধ করে লিখতে হবে’। কিন্তু দুঃখজনক, এখানেও ৭টি বাক্য ছিল না, ছিল ৫টি। এ অংশের ৩ এ বাংলা হতে আরবিতে অনুবাদে ২টি বাংলা উদ্ধৃতি থাকার কথা, ২টি ছিল না; ছিল ১টিই। এ অংশের ৪ এ দরখাস্ত/পত্র লিখন ২টি বিষয় থাকার কথা। সেখান থেকে ১টির উত্তর চাওয়ার কথা। ২টি ছিল না, ১টি ছিল। এসবের কোনো ব্যাখ্যা এনটিআরসিএ দেয়নি। উপরন্তু ‘প্রশ্নের ধারা’-বহির্ভূত প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে পাস করে আসা প্রার্থীদের বিধিবহির্ভূতভাবে ফেল করানো হয়েছে।

এনটিআরসিএর বিধি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভায় ৪০ শতাংশ নম্বর পেলেই পাস। ভাইভার দুটি অংশে (সনদপত্রে ১২ এবং প্রশ্নে ৮) আলাদা ৪০ শতাংশ নম্বর পাওয়ার বাধ্যবাধকতার কথা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করলেও এনটিআরসিএর আইনে তা পাওয়া যায়নি। ২২ অক্টোবর, ২০১৫ প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়েছে, ‘কোন প্রার্থী লিখিত এবং মৌখিক-উভয় ক্ষেত্রে পৃথকভাবে অন্যূন শতকরা ৪০ (চল্লিশ) নম্বর না পাইলে তিনি কোনো মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্তির যোগ্য হইবেন না’। এখানে মৌখিকের সনদ অংশে ১২ এবং প্রশ্ন অংশে ৮ এ উভয় অংশে পৃথকভাবে ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে এমন কথা বলা নেই। যেমন প্রিলিমিনারিতে ৪টি অংশ; বাংলায় ২৫, ইংরেজিতে ২৫, গণিতে ২৫ এবং সাধারণ জ্ঞানে ২৫, মোট ১০০ নম্বর। এ মোট ১০০ নম্বরের ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ ৪০ পেলেই পাস। প্রতি অংশে আলাদা আলাদা ২৫ নম্বরের ৪০ শতাংশ (বাংলায় ১০, ইংরেজিতে ১০, গণিতে ১০ ও সাধারণ জ্ঞানে ১০) পাওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বিজ্ঞপ্তিতে এ শর্ত দিয়ে সনদপত্রে ১২-এর মধ্যে ১২ পাওয়া প্রার্থীকেও বাকি ৮ নম্বরে ৪০ শতাংশ নম্বর না দিয়ে ফেল করানো হয়েছে। অথচ সনদপত্রে ১২ পেলে ভাইভার মোট নম্বর ২০ এর ৬০ শতাংশ হযে যায়। এর পরও কেন একজন শিক্ষার্থীকে ১৫-১৭টি প্রশ্নের উত্তর দেবার পরও প্রশ্ন অংশের ৮ নম্বরের ৪০ শতাংশ (৩.২ নম্বর) দেওয়া হবে না এবং সার্টিফিকেটেই ভাইভার মোট নম্বরের ৬০ শতাংশ পাওয়ার পরও আলাদাভাবে সেই প্রশ্ন অংশের নম্বরের জন্য একজন প্রার্থী অনুত্তীর্ণ হবেন, প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষক সংকট তীব্র হবে আর হাজার হাজার মানুষ বেকার থাকবে?

আরও পড়ুন: অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে শিক্ষা

শিক্ষক নিবন্ধনের ভাইভা অন্যসব চাকরির পরীক্ষার ভাইভার মতো না। এ ভাইভার নম্বর মূল নম্বরের সঙ্গে একদমই যুক্ত হয় না এবং মেধাতালিকায়ও ভাইভার নম্বরের ভিত্তিতে কোনো প্রভাব পড়ে না। ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর উত্তীর্ণদের যে ই-সনদ দেওয়া হয়েছে, তাতেও ভাইভার নম্বর উল্লেখ নেই, কেবল লিখিত পরীক্ষার নম্বরই সনদপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এ নম্বরের ভিত্তিতেই মেধাতালিকা করা হবে। অত্যন্ত দুঃখজনক, যে ভাইভার নম্বর সনদপত্রে উল্লেখ নেই, যে ভাইভার নম্বর মেধাতালিকায় প্রভাব ফেলে না সে ভাইভার অজুহাতে ২০ হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থীকে ফেল করানো হয়েছে। অথচ লিখিত পরীক্ষায় পাস করে ভাইভায় অংশগ্রহণকারী যেসব প্রার্থীর সনদপত্র ও মৌলিক কাগজপত্রে কোনো সমস্যা নেই তাদের সবাইকে পাস করালেও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে সব শূন্যপদ পূরণ হতো না। এনটিআরসিএর গণবিজ্ঞপ্তি তা স্পষ্ট করেছে। ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে শূন্যপদ ১ লাখ ৮২২টি আর এনটিআরসিএ পাস করিয়েছে মাত্র ৬০ হাজার প্রার্থীকে। এভাবে ফেল করানোর কারণে একদিকে হাজার হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য থাকবে, অন্যদিকে হাজার হাজার মানুষ বেকার থাকবে।

শিক্ষক নিবন্ধনের ভাইভা মূলত ছিল সনদপত্রসমূহ ও মৌলিক কাগজপত্র ঠিক আছে কি-না তা যাচাই করার মধ্যম। ভাইভার নম্বরবন্টনও তা-ই বলে। ভাইভায় মোট নম্বর ২০। সনদপত্রে ১২ নম্বর এবং উপস্থাপন ও প্রশ্নে ৮ নম্বর। মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এসব পর্যায়ে প্রথম বিভাগ থাকলে একজন প্রার্থী সনদপত্রে ১২ নম্বর পান। বিগত শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষাগুলোতে ভাইভাকে কঠিন করে দেখা হতো না। সদনপত্র ও মৌলিক কাগজপত্র ঠিক থাকলে মৌলিক দুএকটি প্রশ্ন করে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশ্ন না করেই ভাইভায় পাস করানো হয়েছে। আগের দুটি নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফলে তা স্পষ্ট। ১৬তম নিবন্ধন পরীক্ষার ভাইভায় পাসের হার ছিল ৯২.১৫ শতাংশ এবং ১৭তম নিবন্ধন পরীক্ষায় পাসের হার ৯৫.২ শতাংশ। ওই নিবন্ধন পরীক্ষাগুলোতে যাদের সনতপত্র ও মৌলিক কাগজপত্রে ত্রুটি ছিল না তাদের পাস করানো হয়েছে। শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনেও শিক্ষক নিবন্ধনের ভাইভাকে সহজভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষা বিষয়ক পত্রিকা আমাদের বার্তার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘শিক্ষক নিবন্ধনের ভাইভা পরীক্ষায় ফেল করার সুযোগ নেই বললেই চলে। সনদসহ বিভিন্ন ডকুমেন্টে তথ্যগত কোনো ভুল না থাকলে এবং অস্বাভাবিক আচরণ না করলে ভাইভা পরীক্ষায় সহজেই উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব।’ (দৈনিক আমাদের বার্তা: ২৭ অক্টোবর, ২০২৪)। দৈনিক প্রথম আলোয় ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘... অনেকেই মৌখিক পরীক্ষায় পাস নম্বর নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। ভাইভায় অকৃতকার্য হওয়ার আশঙ্কা খুব কম। যদি না কাগজপত্রে তথ্যগত কোনো অসামঞ্জস্য থাকে।’ যে ভাইভাকে বিগত নিবন্ধন পরীক্ষাগুলোতে সহজভাবে দেখা হয়েছে, যে ভাইভার নম্বরে মেধাতালিকায় কোনো প্রভাব পড়ে না সে ভাইভায় এবার ২০ হাজার প্রার্থীকে ফেইল দেওয়া হয়েছে। ৯২-৯৫ শতাংশ থেকে হঠাৎ পাসের হার নেমে এল ৭০ শতাংশে! আরবি প্রভাষক ভাইভাতে পাসের হার আরো কম। ৫৩.৪৭  শতাংশ। যাকে একদমই অস্বাভাবিক মনে করে ফল পুনর্বিবেচনার দাবি করেছেন প্রার্থীরা।

আরও পড়ুন: প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের জলকামান–সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

ভাইভা বোর্ডে থাকা বিষয় বিশেষজ্ঞদের খামখেয়ালির কারণে এমন হয়েছে বলে মনে করছেন অনুত্তীর্ণরা। এবারের ভাইভা ছিল লটারির মতো; ভাগ্যের খেলা। একেক বোর্ড প্রার্থীদের ভাইভা একেকভাবে নিয়েছেন বোর্ডের সদস্যরা। কেউ আগের মতোই ভাইভাকে কাগজপত্র যাচাই ও একেবারেই মৌলিক বিষয় যাচাইয়ের মাধ্যম হিসেবে সহজভাবে নিয়েছেন আবার কেউ প্রিলিমিনারি ও লিখিততে পাস করে আসা এ প্রার্থীদের ২-৩ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষাকেই যোগ্যতা পরিমাপের মাধ্যম হিসেবে নিয়েছেন। এ কারণেই একই বিষয়ের কোনো বোর্ডে পাস করেছেন ৩০ জনের ২৯ জন, আবার কোনো বোর্ডে ৩০ জনের মাত্র ২ জন। কোনো বোর্ডে বিষয়ভিত্তিক কোনা প্রশ্ন না করে নাম-ঠিকানা, কোন বিষয়ে পড়েছেন তা জিজ্ঞেস করেই পাস করিয়েছেন আবার কোনো বোর্ডে অনেকগুলো কঠিন কঠিন প্রশ্নের উত্তর দেবার পরও মাত্র দুয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারায় ফেল করিয়েছেন। ফলে অনেকের লিখিত পরীক্ষায় অনেক কম নম্বর থাকার পরও কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি না হয়েই ভাইভার গণ্ডি পেরিয়েছেন আবার অনেকবগুলো কঠিন কঠিন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পরও লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ভালো নম্বর পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী প্রার্থীটিও ফেল। লিখিত পরীক্ষা এত ভালো হওয়ার পরও ভাইভায় ফেল করায় তা মূল্যহীন। বিপুলসংখ্যক প্রার্থীর অভিযোগ, তাদের ১০-১৫টি প্রশ্নের উত্তর দেবার পরও মাত্র দুয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারায় ফেল দেওয়া হয়েছে। অনেকে বলেছেন, সবগুলো প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেবার পরও ফেল করেছেন। একজন প্রার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স পাস করে নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় পাস করে সনদপত্রের ১২ নম্বরে ১২ নম্বরই পেয়ে বিষয়ভিত্তিক ১৭টি কঠিন প্রশ্নের ১৫টিরই সঠিক উত্তর প্রদানের পরও যদি তাকে ভাইভার অবশিষ্ট ৮ নম্বরের ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ ৩.২ নম্বরও না দিয়ে তাকে ফেল করানো হয়, তাহলে তাকে পাস করার জন্য আর কী করতে হবে?

লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট

 


সর্বশেষ সংবাদ