জার্নাল কোয়ার্টাইল র‍্যাংকিং: গবেষণার মান যাচাইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক

মো. আদনান রহমান, পিএইচডি
মো. আদনান রহমান, পিএইচডি  © টিডিসি সম্পাদিত
বিশ্বজুড়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মান নিশ্চিত করতে একাডেমিক জার্নালগুলোকে গুণগত মান ও প্রভাবের ভিত্তিতে শ্রেণিবিন্যাস করার প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে জার্নাল কোয়ার্টাইল র‍্যাংকিং বর্তমানে একটি বহুল প্রচলিত ও স্বীকৃত পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
 
প্রকাশিত গবেষণার মান যাচাই, প্রাসঙ্গিক তথ্য আহরণ এবং মানসম্মত জার্নাল নির্বাচনের জন্য এ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সাধারণত Scopus ও Web of Science এর মতো আন্তর্জাতিক ডেটাবেস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন সূচকের উপর ভিত্তি করে এই র‍্যাংকিং নির্ধারিত হয়।
 
প্রতিটি জার্নালকে নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর (subject area) অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য জার্নালের সাথে তুলনা করে চারটি কোয়ার্টাইলে ভাগ করা হয়, যথা: Q1, Q2, Q3 ও Q4। এই শ্রেণিবিন্যাস জার্নালের গুণমান, প্রভাব ও আস্থা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং গবেষকগণ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য নির্ভরযোগ্য মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।
 
কোয়ার্টাইল নির্ধারণে ব্যবহৃত প্রধান সূচকসমূহ
 
জার্নাল কোয়ার্টাইল র‌্যাংকিং নির্ধারণে সাধারণত নিম্নলিখিত সূচকসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:
• Impact Factor (IF) — Web of Science থেকে প্রাপ্ত।
• CiteScore, SCImago Journal Rank (SJR) এবং Source Normalized Impact per Paper (SNIP) — Scopus ডেটাবেসভিত্তিক।
 
এগুলো জার্নালের উক্ত বিভাগের অন্যান্য জার্নালের সাথে তুলনামূলক অবস্থান নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়।
 
কোয়ার্টাইলের শ্রেণিবিন্যাস
 
১️. Q1 (শীর্ষ কোয়ার্টাইল):
প্রতিটি বিষয়ে শীর্ষ ২৫% জার্নাল এই শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এরা সাধারণত সর্বাধিক প্রভাবশালী এবং উচ্চমানের গবেষণা প্রকাশ করে।
 
২️. Q2 (উচ্চ-মধ্যম কোয়ার্টাইল):
২৬% থেকে ৫০% এর মধ্যে অবস্থানকারী জার্নালসমূহ। মান ও প্রভাবের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য, যথেষ্ট মানসম্মত peer-review প্রক্রিয়া অনুসরণ করে।
 
৩️. Q3 (নিম্ন-মধ্যম কোয়ার্টাইল):
৫১% থেকে ৭৫% এর মধ্যে অবস্থানকারী জার্নালসমূহ। গুণগত মান মধ্যম পর্যায়ের, তবে নির্দিষ্ট বিষয়ের জন্য গঠনমূলক গবেষণা প্রকাশ করে থাকে।
 
৪️. Q4 (নিম্নতম কোয়ার্টাইল):
৭৬% থেকে ১০০% এর মধ্যে র‌্যাঙ্কভুক্ত জার্নালসমূহ। এদের impact factor তুলনামূলকভাবে কম এবং প্রভাব সীমিত।
 
Z মান নির্ধারণের পদ্ধতি
কোনো জার্নালের অবস্থান Z মান দ্বারা প্রকাশ করা হয়: Z = \frac{X}{Y}
 
যেখানে:
• X = ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর অনুযায়ী জার্নালের ক্রমিক অবস্থান
• Y = সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তুর মোট জার্নালের সংখ্যা
 
Z মানের ভিত্তিতে কোয়ার্টাইল শ্রেণিবিন্যাস নিম্নরূপ:
• Q1: ০% < Z ≤ ২৫%
• Q2: ২৫% < Z ≤ ৫০%
• Q3: ৫০% < Z ≤ ৭৫%
• Q4: ৭৫% < Z ≤ ১০০%
 
উদাহরণ
• উদাহরণ ১: কোনো বিষয়ের অধীনে মোট ৩১৪টি জার্নালের মধ্যে কোনো জার্নালের অবস্থান যদি ৭৮ হয়, তবে
Z = ৭৮ ÷ ৩১৪ = ০.২৪৮ (২৪.৮%)। সুতরাং, এটি Q1 কোয়ার্টাইলে অন্তর্ভুক্ত হবে।
 
•উদাহরণ ২: মোট ২০৪টি জার্নালের মধ্যে কোনো জার্নালের অবস্থান যদি ১০২ হয়, তবে
Z = ১০২ ÷ ২০৪ = ০.৫ (৫০%)। সেক্ষেত্রে এটি Q2 কোয়ার্টাইলে অন্তর্ভুক্ত হবে।
 
গবেষণার মান ও স্বীকৃতিতে ভূমিকা
গবেষকদের জন্য জার্নালের কোয়ার্টাইল মান জানা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাংকিং, গবেষণা অনুদান, পদোন্নতি কিংবা পিএইচডি থিসিসের মান যাচাইসহ সবকিছুতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের গবেষকদের জন্য এটি গাইডলাইন হিসেবে কাজ করে, কোন জার্নালে লেখা জমা দিলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সিটেশন বেশি পাওয়া যেতে পারে। 
 
এরসাথে গবেষণার গুণমান, স্বচ্ছতা ও বিশ্বমান নিশ্চিত করতে জার্নাল কোয়ার্টাইল র‍্যাংকিং অনস্বীকার্য। তাই গবেষক ও শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া সময়ের দাবী।
 
লেখক: ডিরেক্টর, অফিস অব ব্র্যান্ড এন্ড কমিউনিকেশন, এ‍্যাসোসিয়েট প্রোফেসর, স্কুল অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ঢাকা, বাংলাদেশ। 

সর্বশেষ সংবাদ