ফেল করা শিক্ষার্থীদের ‘আত্মহত্যা’ থেকে রক্ষা করুন
- মুহম্মদ সজীব প্রধান
- প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৪:০৭ PM , আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৪:০৭ PM
বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী। তিনি তাঁর বই পড়া প্রবন্ধে বলেছেন, বর্তমানে আমাদের স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে জীর্ণশীর্ণ হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে। বহুবছর পরেও তাঁর কথার উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি আমরা দেখতে পাই যখন কোনো পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়।
পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পথে পা বাড়ানোর শব্দ কি আমরা শুনতে পাই? এইতো দেড় মাস আগে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর নরসিংদী ও খুলনায় ২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। কতইনা নির্মম! বর্তমানে কৃতী শিক্ষার্থী বলতে কেবল জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদেরকেই আমরা বুঝি অন্যদিকে অকৃতকার্য বলতে এখন আর শুধু ফেল করাকে বুঝায় না বরং জিপিএ-৫ না পাওয়াও বর্তমানে অকৃতকার্য হওয়ার অন্তর্ভুক্ত।
আসলে শিক্ষা যে এমন এক আলো যার সংস্পর্শে আমাদের জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্র বিকশিত হয় সেটা হয়তো আমরা এখন ভুলে যাচ্ছি। বর্তমানে জিপিএ-৫ অর্জনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা দেখে মনে হয় পড়াশোনার একমাত্র লক্ষ্যই বোধহয় জিপিএ-৫ হাসিল করা। এক্ষেত্রে অভিভাবকরা জিপিএ-৫ অর্জনে শিক্ষার্থীদের প্রেরণার বাতিঘর হিসেবে কাজ করেন। অভিভাবক, শিক্ষার্থী এমনকি শিক্ষকরাও অবৈধ পন্থা অবলম্বন করতে দ্বিধা করেন না।
আরও পড়ুন: ৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই ফেল
প্রশ্ন ফাঁস, নকল সরবরাহ এবং টাকার বিনিময়ে জিপিএ-৫ ক্রয়ের উদাহরণ আমরা গণমাধ্যমে প্রায় দেখি। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন জিপিএ-৫ এর গুরুত্ব কতখানি? যারা বইয়ের খুঁটিনাটি সবকিছু বুঝে বুঝে পড়ে পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে তারা অবশ্যই মেধাবী।
কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা জিপিএ-৫ অর্জনের জন্য পুরো বই না পড়ে সংক্ষিপ্ত সাজেশন অনুসরণ করে ফলে তাদের জানার পরিধি এবং মেধার বিকাশ প্রস্ফুটিত হতে পারে না।
অনেকে মনে করেন জিপিএ-৫ না পেলে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া যাবে না এবং ভবিষ্যতে উচ্চপদস্থ চাকরি করতে বেগ পেতে হবে, কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রতিবছর দলে দলে শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ না পেয়েও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা সেরা বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে এবং চাকরির বাজারেও বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রকৃত মেধাবীরা মেধার জোরে নিজের শক্ত অবস্থান করে নিচ্ছে।
অভিভাবক ও শিক্ষকদের বুঝা উচিৎ জিপিএ-৫ অর্জনের আকাঙ্ক্ষা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জীবনে অভিশাপ বয়ে আনতে পারে। কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জনে ব্যর্থ হলে অনেক শিক্ষার্থীই মানসিক ব্যাধিতে ভোগে, যা পড়াশোনা ও জ্ঞানার্জনের অন্তরায়।
এমন পরিস্থিতিতে অনেক নক্ষত্র শিক্ষার্থী সমাজের কাছে নিজেকে জিপিএ-৫ এর মাপকাঠিতে মেধাবী প্রমাণ করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এমন ভয়াবহতা থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে সবার আগে অভিভাবক এবং শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে। কোনো শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হলে কোনোভাবেই পাশের বাসার ভাবির মেয়ের সাথে তুলনা করে বকাঝকা কিংবা ছোট করা যাবেনা।
জিপিএ-৫ না পেলে এমনকি ফেল করলেও তাকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। এমনও হতে পারে ফেল করা একজন শিক্ষার্থী জীবনে অন্যদের চেয়েও অনেক বেশি সফল হবে। মনে রাখতে হবে জিপিএ-৫ কখনোই মেধা ও সফলতার একমাত্র মাপকাঠি নয়। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, বিজ্ঞানচিন্তা এবং আবিষ্কারে উৎসাহিত করতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় জন্ম নেবে টমাস এডিসন, নিউটন কিংবা আইনস্টাইনের মতো বিশ্ববিখ্যাত প্রতিভাবান।
লেখক: শিক্ষার্থী আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়