ডাক্তার-নার্সের ভুলেই চলে যান আমার ডাক্তার মা: স্ট্যাটাস ভাইরাল
- বর্ণা সিদ্দিকা
- প্রকাশ: ২৮ মে ২০২০, ০৭:০৪ PM , আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:২৪ PM
আমার মা ডাঃ আমিনা খানের চলে যাওয়া ও আমাদের শিখন। স্থান: ঢাকা মেডিকেল করোনা আইসিইউ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়কে ধন্যবাদ করোনা আক্রান্তদের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ দিয়েছেন। তাদের দায়িত্ব দিয়েছেন কিন্তু তাদের কি সে সক্ষমতা আছে কি না এটা আমার প্রশ্ন? পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটর ও অন্যান্য মেডিকেল ইকুইপমেন্ট দিয়েছেন আইসিইউ ওয়ার্ডের জন্য যা বেডের ও রুগির তুলনায় অনেক বেশি তাহলে সার্ভিস মনিটরিং হচ্ছে কোথায়?
গত ২০-২৬ মে ২০২০ পর্যন্ত আমার মা ডা. আমিনা খান সিনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি, নারায়ণগঞ্জে জনগনকে স্বাস্থসেবা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হন। আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি নিজ বাসায় আইসলেশনে ছিলেন এবং চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেলে করোনার আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। উক্ত আইসিইউতে ঘটে যাওয়া ও আমাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছি।
প্রতি শিফটে (৬ ঘন্টা দিন ও রাতে ১২ ঘন্টা) ৫ জন নার্স একসাথে থাকার কথা কিন্তু ৫ জন এসে ৩ জন ভিতরে নার্সেস রুমে বসে থাকে। ২ জন ৩-৪ ঘন্টা করে চলে যায় পরে আবার ২-৩ জন আসে। এভাবে তারা তাদের শিফট ম্যানেজ করে। (সূত্রঃ ডিউটি নার্স)
এখানে কথা হচ্ছে আইসিইউ এমন একটা জায়গায় যেখানে রোগীর জীবনের অনেক সংশয় থাকে। যারা যখন ডিউটিতে আসে তারা কেউ কারো কাছে ডিউটি হ্যান্ডওভার করে না। হ্যান্ডওভার রেজিস্ট্রার থাকলেও কোন আপডেট করা হয় না। যা দেখে পরবর্তী জন কোন কাজ করবে তা লেখা থাকে না। এসে রোগীর লোককে জিজ্ঞাসা করে কি ঔষধ পাইছে আর এখন কি পাবে। এজন্য কখনো রুগীকে ওভার ডোজ কখনো আন্ডার ডোজ ঔষধ দেয়া হয়। ২০০ এম.জি দেয়ার ডোজ ২০ এম.জি দিয়ে চলে যায়। আবার কখনো ঔষধ দেয়াও হয় না। ডাক্তার-নার্স শূন্য আইসিইউ থাকে অনেক সময়। তাহলে কি তারা ইচ্ছা করে রুগীর জীবন নিয়ে খেলা করছে নাকি সরকারকে বেকায়দায় ফেলছেন?
দু একজন ডাক্তার ও নার্স ছাড়া আইসিইউ হ্যান্ডেল করার মত সক্ষমতা তাদের নাই। কোন ভেন্টিলেটর ও ইনফিউশান পাম্প চালানোর মত দক্ষতা ও তাদের নাই। কারণ এ কয়দিন এ যা দেখলাম তা হলো আইসিইউ বেড ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন চালানোর কোন জ্ঞান ও তাদের নাই। তাহলে নাম কা ওস্তে আইসিইউ কেন?
আমাদের প্যাশেন্ট যে বেডে ছিলেন সেটা ভেন্টিলেশন দেওয়ার জন্য যে সকল সুবিধা থাকার কথা তা ছিল না বা থাকলেও তা কাজ করছিলও না। তাহলে বেড যারা সাপ্লাই দিয়েছে আর যারা এটা গ্রহণ করেছে তারা কি দেখে করেছে? (সবগুলো নতুন বেড) যেহেতু বেডটা ভেন্টিলেশনের উপযোগী ছিল না তাই বেড শিফটের প্রয়োজন ছিল। এ সময় তিনি প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট ও রেষ্টলেস অবস্থায় ছিলেন। এমতাবস্থায় ডাঃ এর পরামর্শক্রমে বেড শিফট করতে যেয়ে এ্যাসপিরেশন হয় এবং উনি কার্ডিয়াক এরেস্ট হন। তখন যিনি ডিউটিতে ছিলেন তিনি সিপিআর দেন ও ৪-৫ মিনিটের ভিতর রোগী আবার ফেরত আসেন।
এক্ষেত্রে কোন কিছুই (ইকুইপমেন্টস) সঠিকভাবে চেক না করেই তাকে শিফট করা হয়। যার ফলে তখন বেডের কাছে কোন অক্সিজেন লাইন কাজ করছিল না। কোনভাবে সেন্ট্রাল লাইনের অক্সিজেন কাজ করছিল না। লাইন কেউ লাগাতে পারছিলেন না পরে আমার ভাইয়া (পলাশ) বলে, ‘দেন আমি চেষ্টা করি’ ও পরে তিনি সংযোগ দিতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে ডাক্তার সফলভাবে ভেন্টিলেশন দিতে সক্ষম হন। তারপর আর ও ২টা লাইন লাগানোর জন্য ভাইয়াকে বললে সেটা করে দেন। উক্ত ডাক্তার তার ডিউটি আওয়ার শেষ করে চলে যায়।
পরের শিফটে একজন নারী ডাক্তার আসেন এবং বলেন আমি হলে কোন করোনা রোগীকে সিপিআর দিতাম না। আমার প্রশ্ন ডাক্তার হিসেবে না উনি কি উনার মা হলেও দিতেন না? তাহলে উনার কি কাজ এর মধ্যে উনি যেটা করলেন সেটা হলো সিভি লাইন করতে যেয়ে আর্টারিতে লাইন দিয়ে চলে গেলেন। যা ভেইনে দিবেন তা আর্টারীতে দিলেন। উনি তাহলে কি কাজ শিখে আইসিইউর দায়িত্ব পেলেন?
এখানে ডাক্তারের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। অধিকাংশ ডাক্তার আইসিইউতে একবার নিজের চেহারাটা দেখিয়ে কোথায় যে উধাও হয়ে যায় আর খুঁজে পাওয়া যায় না। ওয়ার্ড বয় আয়া তো সে অনেক দূর। নার্সদের কে বললে ডাক্তার ডাকার নাম করে হাওয়া হয়ে যায় প্রায় ঘন্টা পর ফিরে। এর মধ্যে শিফট পরিবর্তন হয়ে যায় পরের শিফটে যে ডাক্তার আসলেন তিনি ঐ নারী ডাক্তারের কাজ নিয়ে প্রশ্ন করলেন ও আমাদেরকে ঐ কাজ যে ভুল হয়েছে তা বললেন। ততক্ষণে ৫-৬ ঘন্টা হয়ে গেছে পরে উনি ওটা খুলে দিয়ে আর একটা সিভি লাইন করলেন পায়ে।
ভেন্টিলেশন দেওয়ার ২ দিনের মধ্যে রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ১০০% হয় এবং অন্যান্য শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়। ভেন্টিলেশনের রোগীকে কিছু ইনজেকশন ইনফিউশন পাম্পের মাধ্যমে দিয়ে সিডেট ও মাসল রিল্যাক্স করে রাখা হয় যার মাধ্যমে গভীর ঘুমে থাকে। এ দু’দিন পর আর আর্ডার আপডেট না করা ও ফ্রেস ওর্ডার না করার দরুন কোন নার্স পূর্বের অর্ডার ফলো না করে ইনফিউশান পাম্পে যে ইনজেকশন পাওয়ার কথা তা বন্ধ করে দেয় এবং রোগীর সেন্স চলে আসে। পরবর্তীতে নিজেই ভেন্টিলেশন ও এনজি পাইপসহ সবকিছুই খুলে ফেলে।
তখন আইসিইউতে কোন ডাক্তার বা নার্স ছিল না কোন অক্সিজেনও চালু করা যাচ্ছিল না। অনেক ডাকাডাকির পর ডাক্তার নার্স প্রায় ১৫-২০ মিনিট পর আসে। এভাবে অব্যবস্থাপনার ফলে তিনি আবার সংকটাপন্ন হয়ে যান ফলে পুনরায় ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। আমি নিজে ডাক্তার হয়েও চিকিৎসা-খাতের এ অব্যবস্থাপনা দেখে একটাই প্রশ্ন এ দায় কার? তাই সবার কাছে অনুরোধ যে যে দায়িত্বে আছেন তারা তাদের মিনিমাম দায়িত্বটুকু পালন করবেন।
নিয়মিতভাবে অর্ডার আপডেট তো হয়ই নাই। ২০ তারিখের পর ২১ তারিখে আপডেট করেছে আর ২৬ তারিখ তিনি মারা গিয়েছেন। কেউ ২০ তারিখেরটা ফলো করে কেউ ২১ তারিখেরটা। প্রতিদিন অর্ডার শিট আপডেট করা ডাক্তারদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। যা মেইনটেন করা জরুরী।
ইনফিউশান পাম্প চালানোর মত দক্ষতা নার্সদের তো নাই দু একজন ডাক্তারের ছিল। আমাদের রোগীর পাম্পে যে ইনজেকশন পাওয়ার কথা তা কোনভাবে ফলো তো করাই হয়নি এমন কি আমরা যখন বুঝতে পেরেছি ততক্ষণে ভাল মানুষটার অবস্থার অবনতি হয়ে গেছে। পরে যতটা পাম্প চালানোর হয়েছে কোনটা ঠিকমত কাজই করে নাই। অপারেট ও করতে পারে না। বলে সব নষ্ট তাহলে এ নষ্ট পাম্প কারা দিলো আর কারা গ্রহণ করলো আর কারা অপারেট করলো।
* আমরা আমাদের অভিভাবক হারালাম।
* দেশ ও জাতি একজন দক্ষ ও যোগ্য ডাক্তার হারালো।
* ডিএমসিএইচ এর করোনা আইসিইউ তে দক্ষ ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ করা জরুরী ।
* করোনা আইসিইউ এ সচল ইকুইপমেন্ট রাখা ও চালানো শিখানো।
* করোনা আইসিইউ তে ডাক্তার নার্সদের ডিউটিতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা।
* ডাক্তার ও নার্সদের এত (১০০% PPE) নিরাপত্তা ও সুযোগ সুবিধা দেওয়ার পরও সেবা পরায়ন মনোভাব নিয়ে সেবা নিশ্চিত করা। যেন আর কোন পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
কোন অভিযোগ নয় এটা একটা সতর্কতা আমাদের সবার জন্য।
লেখক: সিনিয়র মেডিকেল অফিসার; শান্তি অনকোলজি অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইউনিট, আহমদ মেডিকেল সেন্টার