দেশের ক্রান্তিলগ্নে অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে চাই

  © টিডিসি ফটো

করোনারভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পুরো বিশ্ব এখন আতঙ্কিত। দেশেও পড়েছে এর প্রভাব। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো। দেশের ক্রান্তিলগ্নে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) ভেটেরিনারী এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছেন।

প্রথমে সংগঠন ছাড়াই কয়েকজন যুবককে সাথে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা চালান। কিন্তু সেটা ওভাবে শুরু করতে পারেনি। পরে সাতজনকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘স্টান্ড বাই’ নামক একটি সংগঠন। এরপরে পুরো দমে চলছে অর্থ সংগ্রহ এবং সাহায্যের কাজ। মোস্তাফিজুর রহমান ও তার সংগঠনের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে তুলে ধরছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের গবি প্রতিনিধি তানভীর আহম্মেদ-

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্ট্যান্ড বাই কোন ধরনের সংগঠন এবং এটি কিভাবে পরিচালিত হয়?

মোস্তাফিজুর: ‘স্ট্যান্ড বাই’ একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। কয়েকজন বন্ধু মিলে সংগঠনটি পরিচালনা করি। এ সংগঠনের পরিচালনায় থাকা সবাই কোনো না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত। স্ট্যান্ড বাই এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সংগঠনের কার্যক্রমের বিভিন্ন পোস্ট করা হয় এবং এর মাধ্যমেই মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এ সংগঠনের প্রধান উদ্দেশ্য হল দেশের ক্রান্তিলগ্নে গরীব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্ট্যান্ড বাই এর যাত্রা শুরু কিভাবে?

মোস্তাফিজুর: পথচলা শুরু হয় চলতি বছরে। করোনাভাইরাসের মহামারীতে যখন সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় তখন আমি গ্রামের বাড়িতে চলে আসি এবং ফেসবুক, ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে করোনা সম্পর্কিত বিষয়গুলোর উপর সবসময় নজর রাখতে শুরু করি। তারপর ২/৩ টি ফেসবুক গ্রুপের এডমিন, মডারেটর হিসেবে যোগ দেই। গ্রুপের মাধ্যমে ফেসবুকের সিটিজেনদের সচেতন করি, দাতব্য কাজে উৎসাহ প্রেরণ করে পোস্ট দিতে থাকি। হঠাৎ করে দেখলাম, ২টা পোস্ট অনেক বেশি শেয়ার হয় (প্রায় ৩০ হাজারের মত)। জনগণের এত সাড়া দেখে মনে হল, যে উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছি তা কিছুটা  হলেও সফল হবে। মানুষকে উপকৃত করতে পারবো।  সপ্তাহখানেক পর ফেসবুকে গরীব-দুঃখীদের কষ্ট নিয়ে কিছু নিউজ পড়ার পর মনে হল কর্পোরেট দুনিয়া আর নিজের পরিচিতদের কাজে লাগিয়ে কিছু একটা করতে হবে। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ক্যাম্পাস সাংবাদিক অনিক আহমেদকে নিয়ে তারপর শুরু হয় পথচলা। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্ট্যান্ড বাই গঠনে কতটুকু সংগ্রাম করতে হয়েছে? 

মোস্তাফিজুর: প্রথমেই বলেছি এটি একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। মানুষজন কেমন জানি দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কেউ নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করতে চায় না। তবে মানবিক মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। কিন্তু এসব মানুষ খুঁজে বের করে এনে তাদেরকে অর্থ দানে উৎসাহিত করতে অনেক বেগ পোহাতে হয়।  যার জন্য মানুষের সাহায্য পেতে একটু সংগ্রাম করতে হয়েছে। এ ধরনের  সংগঠন যতদিন চলবে ততদিনই কষ্ট পোহাতে হবে। কারণ জনসাধারণের মধ্যে যারা সামর্থ্যবান তাদের পকেট থেকে টাকা বের করে সেটা গরীব-দুঃখীদের দিতে হয়। আর আপনি নিশ্চয়ই জানবেন টাকা বের করা কত কঠিন কাজ।  

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমানে কতজন সদস্য এই সংগঠনে যুক্ত এবং কারা কারা এখানে যুক্ত হতে পারেন? 

মোস্তাফিজুর: বর্তমানে আমাদের সাথে ১২ জন যুক্ত আছেন। এই সংগঠনের কোন কমিটি নেই। সংগঠনে যুক্ত  ১২ জন মিলেই সব দেখভাল করি। এটি যেহেতু একটি দাতব্য সংস্থা তাই এখানে আর কাউকে যুক্ত করা হবে না। এই কয়েকজন মিলেই মানুষজন থেকে অর্থ সংগ্রহ করবো এবং সেই অর্থ দিয়ে অসহায় মানুষদের হাতে সাহায্য পৌঁছে দিব।  

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এই ধরনের সংগঠন মানুষের কতটুকু প্রয়োজনে আসতে পারে বলে মনে করেন?

মোস্তাফিজুর: দেশের ক্রান্তিলগ্নে পুঁজিবাদি সমাজে নিম্নস্তরের মানুষের জীবন হয়ে উঠে দুর্বিষহ। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছাসের মুহূর্তে মানুষ খুবই অসহায় হয়ে পড়ে। এই সময়গুলোতে সব জায়গায় সরকারের সাহায্য পৌঁছায় না। যার জন্য আমাদের মত সংগঠনগুলোর স্বেচ্ছাসেবী হয়ে সাহায্য করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা মাস্টারমাইন্ড প্রসেসকে কাজে লাগানাের মাধ্যমে সমাজের জন্য সর্বোচ্চ সেক্রিফাইস করেন। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এ পর্যন্ত কত জনকে সাহায্য করা হয়েছে এবং সামনে আরো কত জনকে করার পরিকল্পনা রয়েছে?

মোস্তাফিজুর: শুরু হওয়ার দিনই করেছি ৫০ জন। আমাদের যা অনুদান আসে তা দিয়েই কাজ চলতে থাকে। এভাবে ৫০০ জনকে সাহায্য করার ইচ্ছা আছে। যেহুতু এটা ছাত্রদের সংগঠন, তাই আমাদের সবকিছু সীমাবদ্ধ। পড়াশুনা এবং এক্সটা কারিকুলাম এক্টিভিটিসের পাশাপাশি এ ধরনের কাজে সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করি। তবে এখন কেবল অভ্যাস করছি, শিখছি অনেক বিষয়। ভবিষ্যতে এই সংগঠনের সবাই যখন চাকরিতে জড়িত হবে তখন এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক মানের দাতব্য সংস্থায় পরিণত করবো। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এ কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের কেমন ভালোবাসা পাচ্ছেন?

মোস্তাফিজুর: যারা অর্থ দিয়ে সাহায্য করছেন তারাও খুব খুঁশি আমাদের এমন মহৎ উদ্যোগ্যের জন্য এবং যারা সাহায্য পাচ্ছেন তাদের এতটা ভালোবাসা পেয়েছি যেটা বলে বুঝানো সম্ভব নয়। তারা মন থেকে আমাদের জন্য দোয়া করছেন। তবে ছাত্রদের দ্বারা এরকম দাতব্য সংস্থা করাটা চ্যালেঞ্জের কাজ। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ফেসবুকের কল্যাণে ইতোমধ্যে হাজার দশেক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। অনেক গবেষক, চাকরিজীবীরাও আমাদের কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে এবং অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাদের এ ধরনের কাজ নিয়ে কতটুকু গর্ববোধ করেন?

মোস্তাফিজুর: গর্ববোধ করি না, তবে মানসিক শান্তি পাই। দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে পারা অন্যরকম আনন্দের। এছাড়াও একজন শিক্ষার্থী হিসেবে দেশ এবং দশের উপকার করা আমাদের নৈতিক  দায়িত্বেরও একটা অংশ।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এ কাজের মাধ্যমে মানুষ কতটুকু উপকৃত হবে বলে মনে করেন? 

মোস্তাফিজুর: নিম্ন-মধ্যবিত্তরা বেশ উপকৃত হতে পারবে। ছাত্র হিসেবে আমাদের ইনকাম নেই তারপরও নিজের পকেট থেকে হোক মানুষদের থেকে হোক যেভাবে অর্থ সংগ্রহ করে সাহায্য করছি এটা বিশাল ব্যাপার। কষ্ট করে যদি ৫০০ মানুষকে উপকার করতে পারি তাহলে এই ৫০০ মানুষজনের কতটুকু উপকার হবে ভাবতে পারেন?

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সামনের দিনগুলোতে স্টান্ড বাইকে কোন পর্যায়ে দেখতে চান?

মোস্তাফিজুর: আমরা পড়াশুনা শেষ করার আগ পর্যন্ত যেভাবে হাটি হাটি পা পা করে চলছি, ওভাবেই চলবো। তারপর সময় ও সুযোগ পেলে এটাকে দেশ এবং সারা পৃথিবীর অন্যান্য সেরা সংস্থার মত তৈরি করার চেষ্টা থাকবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্টান্ড বাইয়ের মত করে যারা এগিয়ে আসতে চাই তাদেরকে কি পরামর্শ দিবেন?

মোস্তাফিজুর: আমাদের দেশে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও অনেক। সবাই যদি এরকম বিভিন্ন সংগঠন পরিচালনার মধ্য দিয়ে অসহায় মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে আসে তাহলে আমার দেশের অসহায় মানুষগুলো তাদের দুর্দিনে খুবই উপকৃত হবে। এর থেকে ভাল আর কিছু হতে পারেনা। আমাদের পূর্বের ইতিহাস, ঐতিহ্যগুলোর দিকে তাকালে বুঝা যায় শিক্ষার্থীরা কেমন প্রশংসনীয় এবং ফলপ্রসূ ভূমিকা রেখেছিল। দেশের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে সব কাজেই ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এতক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

মোস্তাফিজুর: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ