তারুণ্যকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে গবেষণা নির্ভর আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে

সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক এম জাহিদ হাসান

অধ্যাপক এম জাহিদ হাসান
অধ্যাপক এম জাহিদ হাসান  © টিডিসি ফটো

অধ্যাপক এম জাহিদ হাসান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ইউজিন হিগিন্স প্রফেসর অফ ফিজিক্স এবং আমেরিকান একাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস’র (প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি, এএএএন্ডএস প্রোফাইল) ফেলো তিনি। গুণী এই বিজ্ঞানীর গবেষণার বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ‘কোয়ান্টাম ফিজিক্স অব মিউট কোয়ান্টাম ট্যাং’, ‘ডোয়ার্ভেন ফেনোমেনা’, ‘টাপালিনিয়াকা কোয়ার্টাম স্ক্যান্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’ এবং ‘নোবেল প্রোস অব ট্যাপিং অ্যান্ড কমেলটেড কোয়ার্টামঅ্যান্ড ইক্সোটিক সুপারকন্ডাক্টারস’। সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত এই বিজ্ঞানীর সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। গল্প-আলাপে তা তুলে ধরেছেন সংবাদ মাধ্যমটির নিজস্ব প্রতিবেদক খাঁন মুহাম্মদ মামুন-

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: গবেষণা এবং উদ্ভাবন বাড়াতে বাংলাদেশের নীতিগত করণীয় কী? কীভাবে আমরা তারুণ্যকে আরও বেশি গবেষণায় সংযুক্ত করতে পারি?
অধ্যাপক জাহিদ হাসান: আমার বিজ্ঞান গবেষণা এবং প্রযুক্তি ও উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজের ধরন থেকে বুঝতে পারছি—এখনকার সময়ে বিশ্ব অর্থনীতি বিজ্ঞান এবং গবেষণায় উদ্ভাবন দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এখন অথবা পরবর্তীতে হলেও সব জাতিকেই উন্নয়নের এ ধারণাটি গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ের উৎপাদন, উদ্ভাবন এবং বাজারজাতকরণে প্রাযুক্তিক সমন্বয় করতে হবে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। তারা গবেষণা এবং উদ্ভাবনে সহায়তা করতে পারে।

আরও পড়ুন: গবেষণানির্ভর পাঠদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইউআইইউ’র ইংরেজি বিভাগ

আমি মনে করি—বেসরকারি খাতে এ ধরনের উদ্যোগগুলো আরও বেশি বাড়ানো যেতে পারে এবং গবেষণায় জোর দিয়ে তারা উদ্ভাবনকে বাজারজাতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও বেশি সহায়তা করতে পারে। সেজন্য সরকার তাদের নীতিগত এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে পারে।

ফলে দেশে গবেষণা এবং উদ্ভাবন বাড়ানো যাবে। এতে দেশের অর্থনীতি এবং তারুণ্য থেকে আমরা সর্বোচ্চ সুফল গ্রহণ করতে পারবো। এর ফলে ‘বিদেশে মেধা পাচার’ বা এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব করা হবে। কারণ গবেষণার সুযোগ বাড়ানো গেলে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজে লাগাতে পারবো। তাদের গবেষণার সুযোগ দিতে পারবো এবং তাদের মেধার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারবো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখন আমাদের তারুণ্যের কোন কোন দক্ষতাগুলো বাড়ানো উচিত?
অধ্যাপক জাহিদ হাসান: গবেষণার ইতিহাস বলছে—বড় বড় সব ধরনের উদ্ভাবন তারুণ্যের থেকেই এসেছিল। গুগল, মাইক্রোসফট, ইউটিউব, ফেসবুকসহ এ সময়ের বড় ধরনের উদ্ভাবনগুলো আমরা তরুণদের থেকেই পেয়েছি। তরুণদের অনেক বেশি সুযোগ রয়েছে—উদ্ভাবন এবং অর্থনৈতিক উন্নতিতে অবদান রাখার। আমার মতে, বাংলাদেশের এখন নীতিমালায় জোর দেয়া উচিত। তরুণদের আরও বেশি সুযোগ দেয়া উচিত। যেন তারা উদ্ভাবন এবং গবেষণায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পারে। এর পাশাপাশি আমাদের এখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে কাজ করতে হবে। ফলে শান্তিপূর্ণ একটি সহাবস্থান এবং আর্থিক অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পড়াশোনার পাশাপাশি কীভাবে শিক্ষার্থীদের আরও বেশি গবেষণায় যুক্ত করতে পারে?
অধ্যাপক জাহিদ হাসান: উন্নত দেশগুলোতে তাদের জিডিপির একটি বড় অংশই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণায় ব্যয় করে। এছাড়াও তাদের ই-ন্ডাস্ট্রিগুলোও একটি বড় অংশ গবেষণায় ব্যয় করে। আমাদের দেশেও এটি করা উচিত—এখানে ইন্ড্রাস্ট্রি এবং একাডেমিয়ার কোলাবরেশন বাড়ানো উচিত। ইন্ড্রাস্ট্রি যেন গবেষণায় আরও বেশি ব্যয় করতে পারে—সরকারের এমন নীতিমালা করা উচিত। একই সাথে এখানে সরকারেরও জিডিপির একটি বড় অংশ গবেষণায় ব্যয় করা দরকার। ফলে আমাদের তরুণরা আরও বেশি গবেষণার সুযোগ পাবে। এতে তারুণ্যকে আমরা কাজে লাগাতে পারবো এবং এখানে গবেষণা বাড়ানো সম্ভব হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি অনেকগুলো বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন—সর্বশেষ কী নিয়ে কাজ করছেন?
অধ্যাপক জাহিদ হাসান: আমার গবেষণার বিষয় ‘কোয়ান্টাম ফিজিক্স’। এখানে আমি দেখার চেষ্টা করছি—কীভাবে একটি কোয়ান্টাম ফার্টিকেল কীভাবে কাজ করে। এতে কোয়ান্টাম টোপোলজিক্যাল প্রোপার্টিটি আবিষ্কার করার চেষ্টা করছি। আমি এখানে পার্টিকেলগুলো নিয়ে কাজ করছি। এর বাইরেও আমার বেশকিছু গবেষণা রয়েছে। এর মধ্যে— একটি রয়েছে ‘সুপারকন্ডাক্টারস’ছাড়াই ‘সুপারকন্ডাক্টারস’নিয়ে কাজের বিষয়টি নিয়েও গবেষণা রয়েছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে উচ্চশিক্ষা-গবেষণায় আপনার মূল্যায়ন এবং পরামর্শ কী?
অধ্যাপক জাহিদ হাসান: আমি বাংলাদেশের তরুণদের নিয়ে অনেক বেশি আশাবাদী। এখানকার তরুণরা তাদের তারুণ্যের শক্তিকে উদ্ভাবন এবং গবেষণায় কাজে লাগাবে বলে আমার বিশ্বাস। এটি দেশ গড়ার জন্য অনেক বেশি সহায়ক হবে। আমাদের একটি গবেষণাভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সেখানে তরুণদের অনেক বেশি সুযোগ দেওয়া ছাড়া এটি সম্ভব হবে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যেভাবে চলছে—এটি স্বল্পকালের জন্য মোটামুটি চলবে। এখানকার অর্থনীতিকে গবেষণামুখী করা সম্ভব না হলে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো না। সেজন্য আমাদের তরুণদের সুযোগ দিতে হবে। ফলে আমাদের একটি শক্তিশালী অবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। 

বড় বড় সব ধরনের উদ্ভাবন এবং অর্জন তরুণরাই করতে পারে। সেজন্য তাদের সুযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি এখানে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থা দাঁড় করাতে হবে। গবেষণা জোর দিতে হবে—তবেই আমরা একটি বিশ্বমানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দাঁড় করাতে পারবো। বিশ্বমানে উন্নীত হতে পারবো। আমার মতে—আমাদের তরুণদের কাজে লাগাতে পারলে বা তাদের যথাযথ সুযোগ দিলে এটি করা সম্ভব হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence