যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষায় ভারতীয় শিক্ষার্থীরা প্রথম, বাংলাদেশের অবস্থান কত?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ০৮:০৫ AM , আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৫, ০৭:৩৩ PM
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পাঠিয়েছে ভারত। এক্ষেত্রে চীন রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। তবে এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান রয়েছে দশম স্থানে। মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটির অধীনস্থ স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম (SEVIS) ২০২৫ সালের জুনে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ ২২ হাজার ৩৩৫ জন। তবে সংখ্যার দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও ভারতীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিঙ্গ বৈষম্য এখনও উদ্বেগজনক। নারীর অংশগ্রহণ সেখানে মাত্র ৩৮ শতাংশ, বিপরীতে পুরুষ শিক্ষার্থীর হার ৬২ শতাংশ। এই অনুপাত প্রায় ২:১।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, সর্বাধিক সংখ্যক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পাঠানো শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে লিঙ্গ ভারসাম্যের দিক থেকে ভারতের অবস্থান সবচেয়ে নিচের দিকে। ২০২৩ সালে এই অনুপাতে দেশটি ছিল একেবারে তলানিতে।

তুলনামূলকভাবে চীনের চিত্র ভিন্ন। দেশটির ৩ লাখ ২৯ হাজার ৫৪১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৮ শতাংশ নারী এবং ৫২ শতাংশ পুরুষ। দক্ষিণ কোরিয়ার ৬১ হাজার ২৭৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে নারীর অংশগ্রহণও ৪৮ শতাংশ। কানাডার ৪৬ হাজার ৫৩৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৪৯ শতাংশ। ব্রাজিলের চিত্র আরও ইতিবাচক—সেখানে নারীর অংশগ্রহণ ৫৭ শতাংশ হলেও পুরুষ শিক্ষার্থীদের (৪৩ শতাংশ) ছাড়িয়ে গেছে। ভিয়েতনামে ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থী নারী। নেপালে নারীর হার ৪২ শতাংশ এবং পুরুষ ৫৮ শতাংশ। তাইওয়ানে নারী ৪৮ শতাংশ, নাইজেরিয়ায় ৪৫ শতাংশ। এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম, মোট শিক্ষার্থী ২৭ হাজার ২০৪ জন। বাংলাদেশে নারী শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ ৩৪ শতাংশ নিয়ে ভারতে কাছাকাছি রয়েছে।
আরও পড়ুন: ফের শিক্ষার্থী ভিসা চালু করল যুক্তরাষ্ট্র, সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল থাকতে হবে আনলক করা
২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ভারতের শিক্ষার্থী পাঠানোর হার বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। ২০২৩ সালে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ২৭.১ শতাংশ, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় আরও ১১.৮ শতাংশে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় সব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর প্রায় ৪৭.৫ শতাংশই ভারত ও চীনের নাগরিক। করোনার পরবর্তী সময়ে এই প্রবাহে আরও তীব্রতা এসেছে।
তবে এই বৃদ্ধির মাঝে রয়েছে আরেক দুঃসংবাদ। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে ভারতীয় ও চীনা নাগরিকদের ওপর। জানা গেছে, মাত্র পাঁচ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৪ হাজার ৭০০-এর বেশি F1 শিক্ষার্থী ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
অন্যদিকে, SEVIS-এর প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কোর্স বাছাই ও কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের প্রবণতাও তুলে ধরা হয়েছে। দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির প্রতি আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে ৬ লাখ ৬৭ হাজার ৬২২ জন শিক্ষার্থী মাস্টার্স, ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪৩ জন ব্যাচেলর এবং ২ লাখ ১৪ হাজার ৮২৪ জন পিএইচডি পর্যায়ে অধ্যয়ন করছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে ফুল স্কলারশিপ পেয়েও ভিসা আবেদনের জটিলতায় স্বপ্নভঙ্গ ঢাবি শিক্ষার্থীর
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে থেকে কাজ করার সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে ‘অপশনাল প্র্যাকটিকাল ট্রেনিং’ (OPT) এবং ‘কারিকুলার প্র্যাকটিকাল ট্রেনিং’ (CPT) বিশেষ ভূমিকা রাখছে। STEM (সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাথমেটিকস) OPT এক্সটেনশনের ৪৮ শতাংশই গেছে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ঝুলিতে। চীন রয়েছে অনেক পিছিয়ে—মাত্র ২০.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী এই সুবিধা পেয়েছে। মোট ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫২৪ জন ভারত ও চীনের নাগরিককে STEM OPT এক্সটেনশন দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, OPT সুবিধায় যুক্তরাষ্ট্রে কাজের অনুমতি পেয়েছেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ৫৫৪ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী। এর বাইরেও ১ লাখ ৩০ হাজার ৫৮৬ জন শিক্ষার্থী CPT-এর আওতায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। এটিও মূল শিক্ষাক্রমের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
ভারতের অভ্যন্তরে উচ্চশিক্ষায় নারী-পুরুষের ভারসাম্য এখন ১.০১, অর্থাৎ সামান্য নারীর প্রাধান্য রয়েছে। অথচ বিদেশে উচ্চশিক্ষায় সেই ভারসাম্য দৃশ্যমান নয়। সেখানকার পরিসংখ্যান বলছে, বিদেশি মাটিতে সুযোগের দৌড়ে এখনও অনেকখানিই পিছিয়ে ভারতের মেয়েরা।