মাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

ডিজিটাল যুগে ‘স্ক্রিন’ যেন আমাদের নিত্যসঙ্গী। কাজ, পড়াশোনা, বিনোদন, যোগাযোগ—সবকিছুতেই এখন স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা ট্যাবের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায়। প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করলেও মাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম নীরবে শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্যে ক্ষতি করে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা একে বলছেন ‘ডিজিটাল থাকুয়াট’ অর্থাৎ অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্যবহারজনিত ক্লান্তি। এর প্রভাব যেমন সুদূরপ্রসারী, তেমনি সঠিক অভ্যাস গড়ে তুললে এটি নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব।

চোখের ওপর তীব্র চাপ
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় চোখে। দিনভর স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার ফলে ‘ডিজিটাল আই স্ট্রেন’ তৈরি হয়—চোখ শুকিয়ে যাওয়া, ঝাপসা দেখা, মাথাব্যথা ও চোখে জ্বালা এর সাধারণ লক্ষণ। কারণ, স্ক্রিনে মনোযোগী থাকার সময় আমাদের চোখের স্বাভাবিক পলক ফেলার হার কমে যায়। দীর্ঘমেয়াদে এটি দৃষ্টিশক্তিকেও প্রভাবিত করতে পারে।

ঘুমের ব্যাধি ও মানসিক অশান্তি
স্ক্রিনের নীল আলো (ব্লু লাইট) মস্তিষ্কের ঘুম-জাগরণের স্বাভাবিক ছন্দকে ব্যাহত করে। রাতে ঘুমানোর আগে স্ক্রিনে বেশি সময় কাটালে মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়, যার ফলে অনিদ্রা কিংবা ভাঙা ঘুম দেখা দেয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ক্রিনের অতিরিক্ত ব্যবহার উদ্বেগ, মানসিক চাপ, মনোযোগের ঘাটতি ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের সমস্যাও তৈরি করতে পারে। নোটিফিকেশন ও সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করতে করতে মস্তিষ্কে ‘ডোপামিন হিট’ তৈরি হয়, যা নেশাসদৃশ আচরণ তৈরি করতে পারে।

শিশু-কিশোরদের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব
শিশুরা স্ক্রিনের ঝলমলে দুনিয়ায় অতিরিক্ত ডুবে গেলে বাস্তব জীবনের প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে। আচরণগত পরিবর্তন, শারীরিক স্থবিরতা, পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যাওয়া, সামাজিক দক্ষতা হ্রাস—সবকিছুই এখন গবেষণায় প্রমাণিত। বিশেষজ্ঞরা দুই বছরের কম বয়সী শিশুকে স্ক্রিনে না দেওয়ার পরামর্শ দেন।

অফলাইন জীবন গড়ে তোলার গুরুত্ব
স্ক্রিনটাইম নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো অফলাইন অভ্যাস বাড়ানো—বই পড়া, হাঁটা, ব্যায়াম, বাগান করা বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো। মানুষ যত বেশি অফলাইনে সময় কাটাবে, স্ক্রিনে ফেরার আকর্ষণ তত কমবে।

স্ক্রিনটাইম কমানোর কার্যকর কৌশল-

৩০–৩০–৩০ নিয়ম মেনে চলুন
প্রতি ৩০ মিনিট স্ক্রিন ব্যবহারের পর ৩০ সেকেন্ডের জন্য ৩০ ফুট দূরে তাকান। চোখের চাপ কমে যাবে।

স্ক্রিন কারফিউ রাখুন
ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে সব স্ক্রিন বন্ধ রাখুন। শিশুদের ক্ষেত্রে ‘নো স্ক্রিন অ্যাট ডাইনিং’ বা ‘ফ্যামিলি স্ক্রিন–ফ্রি আওয়ার’ খুব ফলপ্রসূ।

নোটিফিকেশন সীমিত করুন
অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ নোটিফিকেশন বন্ধ করলে ফোন ধরার প্রবণতা স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়।

সময় নির্ধারণ করে ব্যবহার
অফিসের কাজ, পড়াশোনা ও বিনোদনের জন্য আলাদা স্ক্রিন সময় নির্ধারণ করুন। সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় সীমা রাখুন।

‘ফোকাস মোড’ ব্যবহার করুন
মোবাইলের ‘ফোকাস’ বা ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ ফিচার মনোযোগ ধরে রাখতে দারুণ সহায়ক।

ঘরের আলো ও স্ক্রিনের ব্রাইটনেস ঠিক রাখুন
অতিরিক্ত উজ্জ্বল স্ক্রিন চোখের ওপর চাপ বাড়ায়, অন্ধকারে স্ক্রিন ব্যবহার করাও চোখের ক্ষতি করে।

প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে দ্রুত, সহজ ও কার্যকর করেছে এটা সত্য। কিন্তু এর ব্যবহার যেন সুস্থতার পথে বাধা না হয়, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি। সচেতনভাবে স্ক্রিন ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে চোখ, মস্তিষ্ক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব অনেকটাই কমানো সম্ভব।


সর্বশেষ সংবাদ