রাতের সঙ্গী হোক বই, বদলে দিন ঘুমের অভিজ্ঞতা
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ০৮:২০ PM , আপডেট: ১৩ জুন ২০২৫, ০৮:০৬ PM
রাত হল বিশ্রামের সময়। সারাদিনের ক্লান্তি কাটিয়ে নতুন দিনের প্রস্তুতি নেওয়ার শ্রেষ্ঠ সময় এটি। অথচ আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা আর প্রযুক্তির প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতাই আজ ঘুমের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বহু মানুষ ডুবে যান মোবাইল স্ক্রিনে — ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা নেটফ্লিক্সের আকর্ষণ ঠেকানো যেন দায়। কিন্তু আপনি জানেন কি, ঘুমানোর আগে এই স্ক্রিনের বদলে হাতে কাগজের বই তুলে নিলেই বদলে যেতে পারে রাতের অভিজ্ঞতা?
দ্রুত ঘুম এনে দেয় বই
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমের আগে বই পড়া মস্তিষ্ককে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়,এখন বিশ্রামের সময়। ‘র্যান্ডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়াল’ নামে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রাতে বই পড়েন, তাদের ৪২ শতাংশের ঘুমের মান উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো হয়। অপরদিকে, যারা বই পড়েন না, তাদের মধ্যে এই উন্নতির হার মাত্র ২৮%। তবে খেয়াল রাখতে হবে, মোবাইল বা ই-রিডারে নয়, কাগজের ছাপা বই-ই হতে হবে ঘুমের সঙ্গী। কারণ স্ক্রিনের নীল আলো মেলাটোনিন নামক ঘুমের হরমোনকে দমন করে।
আরও পড়ুন: ঘন ঘন ক্ষুধা লাগে? জেনে নিন নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উপায়
মানসিক চাপ কমায়, চিন্তা মুক্ত করে
সারাদিনের টেনশন, দুশ্চিন্তা কিংবা আগামী দিনের কাজের চাপ, এসব কারণে অনেকেরই ঘুম আসে না। এ সমস্যার দারুণ একটি সমাধান হতে পারে বই। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ৬ পৃষ্ঠা বই পড়লেই ৬৮ শতাংশ মানসিক চাপ হ্রাস পায় যা গান শোনা, চা খাওয়া বা হাঁটার চেয়েও বেশি কার্যকর। বই পড়া মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও ডোপামিন হরমোন বাড়ায়, যা ঘুমের জন্য উপকারী, আর কর্টিসল কমায় যেটি স্ট্রেস বাড়ায়।
স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, মস্তিষ্ককে চাঙা রাখে
বই পড়া মানে শুধু জ্ঞান নয়, এটি হলো মস্তিষ্কের ব্যায়াম। রাতে বই পড়লে মন শান্ত হয়, আর নিয়মিত অভ্যাসে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ সক্রিয় থাকে। এতে নিউরনের সংযোগ বাড়ে, যা স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে সহায়ক। ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অন এইজিং’ বলছে, যারা নিয়মিত বই পড়েন, তাদের আলৎসহাইমা'স বা বার্ধক্যজনিত মানসিক অবনতির ঝুঁকি কম।
মোবাইল-টিভি কেন নয়
মোবাইল বা টিভির স্ক্রিন থেকে আসা নীল আলো মস্তিষ্ককে বলে দেয়, এখনও দিন ফলে মেলাটোনিন নিঃসরণ ব্যাহত হয়, ঘুম আসে দেরিতে, এমনকি ইনসমনিয়া বা দুঃস্বপ্ন দেখা পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ২ ঘণ্টা আগে স্ক্রিন বন্ধ করে বই পড়ার অভ্যাস গড়ুন।
পরামর্শ
রাত ১০টায় ঘুমাতে চাইলে ৮টার পর থেকেই স্ক্রিনমুক্ত সময় শুরু করুন। বেছে নিন একটি পছন্দের উপন্যাস, আত্মউন্নয়নমূলক বই বা হালকা গল্প।
আরও পড়ুন: রান্নার তেল: স্বাদের বাইরে স্বাস্থ্য ভাবনা
ঘুম ও মানসিক স্বাস্থ্য একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। ঘুম ভালো হলে মন ভালো থাকে, আর মন ভালো থাকলে ঘুম হয় আরও শান্ত। তাই আজ থেকেই শুরু করুন বইয়ের সাথে বন্ধুত্ব। এক রাতেই আপনি টের পাবেন পার্থক্য।