ভিসির ওপর দায়ভার চাপানোর চেষ্টা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: শাবিপ্রবি প্রশাসন

শাবিপ্রবি আন্দোলন
শাবিপ্রবি আন্দোলন  © সংগৃহীত

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে বুধবার (১৯ জানুয়ারি) থেকে অনশন পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন ভাঙবেন না বলে জানিয়েছেন। 

এরই প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবস্থান তুলে ধরে বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে। আর তাতে বলা হয়, শাবিপ্রবি উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় শিক্ষার্থীদের মূল দাবি বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব ধরনের ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ নিয়েছে। তার পরও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে উপাচার্যের ওপর এর দায়ভার চাপানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। 

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট থেকে এখানে দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের প্রতি মনোনিবেশ করেন। শিক্ষার্থীদের সেশনজট থেকে মুক্ত করা এবং নির্ধারিত সময়ে ফল প্রকাশসহ প্রায় সাড়ে নয়শ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনের পদক্ষেপ নেন। প্রায় ১৩ বছর পর তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করেন। করোনা মহামারী শুরু হলে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস শুরু করেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা ব্যাপক প্রশংসিত হয়।

“করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা করেন। তিনি অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসে ফ্রি ইন্টারনেট সরবরাহ করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার নিরন্তর উৎসাহ দিয়ে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বশরীরে ক্লাস চালুর পূর্বে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল পরিষ্কার-পরিছন্ন করাসহ ভৌত কাঠামো সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শতভাগ টিকা কর্মসূচির আওতায় আনার লক্ষ্যে ক্যাম্পাসেই টিকা প্রদান ও টিকা সনদ প্রাপ্তির সুবিধার্থে নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতায় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। এসব উদ্যোগের কারণ শিক্ষার্থীরা যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নির্বিঘ্নে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে।”

“এই অবস্থায় গত ১৩ জানুয়ারি রাত ১১টায় অবহিত হন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের কিছুসংখ্যক ছাত্রী তার সঙ্গে দেখা করতে চান। তিনি জানতে পারেন, হল প্রভোস্টের সঙ্গে ছাত্রীদের কথাবার্তায় তারা সন্তুষ্ট না হওয়ায় সরাসরি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে অগ্রহী। পরে তিনি ছাত্রীদের বক্তব্য শুনে পরদিন (১৪ জানুয়ারি) তাদের দাবিসমূহ লিখিত আকারে নিয়ে আসার অনুরোধ করেন। ছাত্রীরা লিখিত দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, প্রভোস্ট, প্রক্টররিয়াল বডির সঙ্গে আলোচনা করেন এবং দাবিসমূহ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ছাত্রীরা তা মেনে নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে সভাস্থল ত্যাগ করলেও পরবর্তীতে বাইরে অপেক্ষমান অন্যান্য অন্য ছাত্রীরা সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।”

এর পরদিন (১৫ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০০ জন শিক্ষককে পরিস্থিতির ব্যাপারে উপাচার্য অবহিত করেন। সব দাবি-দাওয়া কার্যকর করার এবং মেনে নেওয়ার বিষয়টি অবহিত হয়ে শিক্ষকরা কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের এ আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করে স্বঘোষিত আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।

১৬ জানুয়ারি উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে করণীয় নির্ধারণের জন্য সব অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা করেন। এ সভায় দায়িত্বরত প্রভোস্টের অব্যাহতি গ্রহণ এবং হল প্রভোস্ট পদে একজন সিনিয়র অধ্যাপকের সম্মতি গ্রহণে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছাত্রীদের সব দাবি মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এসব সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অবহিত করে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষকরা সম্মিলিতভাবে আহ্বান জানালেও শিক্ষার্থীরা ‘মানি না, মানি না’ স্লোগান দিয়ে শিক্ষকদের পিছু নেন।

এদিকে পূর্ব নির্ধারিত ডিনদের একটি অনুষ্ঠানে উপাচার্য অংশ নিতে তার কার্যালয় থেকে বের হলে শিক্ষার্থীরা তার পথরোধ করে এবং তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এ সময় তার পাশে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মানবপ্রাচীর তৈরি করে তাকে ঘিরে রাখেন। কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রাণ রক্ষার্থে উপাচার্যকে নিয়ে আইআইসিটি ভবনে আশ্রয় গ্রহণ করেন। আইআইসিটি ভবনে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা ফটকে তালা দিয়ে রাখেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। সব দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়া ও কার্যকর করার আশ্বাস প্রদান করলেও শিক্ষার্থীরা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করেন এবং উপাচার্যকে মুক্ত করার চেষ্টায় বাধা প্রদান করেন। এক পর্যায়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষকে দাবি-দাওয়া মানার আশ্বাস লিখিতভাবে দেওয়ার দাবি তোলেন। এ দাবি নিয়ে উপাচার্যের অনুমোদনের জন্য তার কাছে যেতে কোষাধ্যক্ষ তালাবদ্ধ গেটের কাছে যাওয়া মাত্রই হঠাৎ অস্থিরতা তৈরি করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা শিক্ষক ও পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টাসহ অনেকে আহত হন। পুলিশের ভাষ্যমতে- কর্তব্য পালনে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় শিক্ষার্থীদের মূল দাবি বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব ধরনের ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ নেওয়ার পরও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে উপাচার্যের ওপর দায়ভার চাপানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সরকার ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের আহ্বানের পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে যাওয়ার আহ্বান উপেক্ষা করেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার অংশগ্রহণে শাবিপ্রবি এক অনন্য উচ্চতায় রয়েছে এবং এর অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। এ চেতনাকে ধারণ করে উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবিলায় ও দেশের স্বার্থে এবং শিক্ষার্থীদের মূল্যবান শিক্ষাজীবন শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে নিতে সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence