হাবিপ্রবিতে ডিপ্লোমাধারীদের কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ
- হাবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ০৫:৩৩ PM , আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৪ PM
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) ডিপ্লোমাধারীদের জন্য সংরক্ষিত কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে দিয়ে আবার প্রধান ফটকে ফিরে আসে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘স্বাধীন এই বাংলায় কোটাপ্রথার ঠাঁই নাই’; ‘তুমি কে আমি কে, প্রকৌশলী প্রকৌশলী’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে এ ধরনের বৈষম্য তারা মেনে নিতে পারেন না। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে হবে এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে সবাইকে মূল্যায়ন করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবির কথা তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (নবম গ্রড) পদে নিয়োগ সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে হতে হবে, কোনো প্রমোশনাল কোটা থাকবে না; সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার(দশম গ্রেড) পদের জন্য সকল ধরনের ডিপ্লোমা কোটা বাতিল করে এই পদটি ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে এবং বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া কেউ ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবেন না।
এ সময় রুয়েট থেকে আগত ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকৌশল আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফাহিম আহমেদ বলেন, ‘আজকে বৃষ্টির দিনে হাবিপ্রবিতে গণজাগরণ তৈরি হয়েছে। আপনারা জানেন দীর্ঘদিন ধরে ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে কোটা বিরাজমান আছে। আমরা আশা করছিলাম ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, তারপর এ কোটা ব্যবস্থা বিলুপ্ত হবে। কিন্তু সব জায়গা থেকে কোটা বিলুপ্ত হলেও প্রকৌশল বিভাগ এখনো কোটায় জর্জরিত। আপনারা জানেন, প্রকৌশলীদের দুটি পোস্ট, নবম গ্রেড সহকারী প্রকৌশলী এবং দশম গ্রেড উপসহকারী প্রকৌশলী কিন্তু দুঃখের বিষয় দশম গ্রেডের উপসহকারী প্রকৌশলীর পদ ডিপ্লোমা ধারীরা দখল করে আছে। এতে আমরা যারা বিএসসি ডিগ্রিধারী তারা অনেক অনেক বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আমাদের দাবি একটাই, আমরা এসব বৈষম্যের অবসান চাইছি। এ জন্য তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
কুয়েট থেকে আগত জাহিদুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে বৈষম্যের নিরসন এবং স্বৈরাচারের পতনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গঠিত হয়। কিন্তু এই আগমনী বার্তার যে চেতনা প্রকৌশলী অঙ্গনে এখনো ছুয়ে দেয় নাই। প্রকৌশলী অঙ্গনে এখনো স্বৈরাচারীরা তাদের যে আস্তরণ তারা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করেছিলাম মেধাবীদের দ্বারাই নতুন বাংলাদেশ গঠিত হবে, কিন্তু দেশের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে এখনো ও মেধাবীরা বসে আছে যেহেতু এটা ইঞ্জিনিয়ারিং বা টেকনিক্যাল সেক্টর সাধারণ মানুষ তেমন কিছুই জানে না, এ জন্য তারা এই অপকর্ম এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। এই সিন্ডিকেটের কারণে মেধাবীরা এখনো সুযোগ পাচ্ছে না। এই সিন্ডিকেট কে ভাঙতে হলে আমাদেরকে লড়াই করতে হবে। আমরা বর্তমান সরকারকে বলতে চাই আপনারা এ বৈষম্য নিরসন করুন, প্রয়োজন হলে প্রকৌশল খাতে সংস্কার কমিশন গঠন করুন, ডিপ্লোমাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করুন। বিএসসি ডিগ্রীধারী ও ডিপ্লোমা ডিগ্রি ধারী কখনোই একসঙ্গে যেতে পারে না। এই তিন দফা দাবি আমরা যেকোনো মূল্যে আদায় করে নিতে প্রস্তুত, যত দিন পর্যন্ত না দাবি আদায় হয়, তত দিন পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
হাবিপ্রবির ২০ ব্যাচের ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিন ইসরাক বলেন, ‘আমরা আজকে উপস্থিত হয়েছি বৃষ্টির মধ্যে সেখানে কোনো কিছুই আমাদের উপেক্ষা করতে পারবে না। দেশের ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ারদের পর্যাপ্ত মর্যাদা দেওয়া না হলে দেশের মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে। আমাদের দেশের প্রকৌশলীরা যথার্থ মর্যাদা পাচ্ছেন না। ফলে দেশে তারা তাদের অবদান রাখতে পারছেন না।বরাবরই আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আমরা চাই আমাদের যথার্থ মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’
ইইই ২২ ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী আখতারুজ্জামান স্মরণ বলেন, ‘আমরা বৈষম্য নিরসনে বারবার আন্দোলন করলেও কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছি না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, বাংলার আকাশে যতবারই বৈষম্যের মেঘ দেখা দেবে, জুলাই ততবারই বৃষ্টি হিসেবে নেমে আসবে। আমরা চাই আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হোক।’
সবশেষে দাবি মেনে না নিলে শিক্ষার্থীরা আগামী দিনে আরও কঠোর কর্মসূচি পালন করার হুঁশিয়ারি দেন।