শিক্ষিকা পূর্ণিমা দাসের আকুতি ‘ভুল তথ্য ছড়াবেন না, আমিও আগুনের মধ্যে আটকা পড়েছিলাম’
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৫, ০১:২০ PM , আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৫, ১১:১১ AM
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন কলেজের ভবনে বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩২ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ, সরকার মৃতের সংখ্যা কম দেখাচ্ছে এবং মরদেহ সরিয়ে ফেলছে। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে এই আলোচনার মধ্যেই এবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন ঘটনার দিন উপস্থিত থাকা স্কুলটির প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষিকা পূর্ণিমা দাস। এ ঘটনায় হতাহত ও নিখোঁজদের ভুল তথ্য না ছড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (২৩ জুলাই) নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে পূর্ণিমা দাস লেখেন, আমি মাইলস্টোনের হায়দার আলী ভবনের একজন শিক্ষিকা। আপনাদের দুই হাত জোর করে বলছি ভুল তথ্য ছড়াবেন না। আমিও আগুনের মধ্যে আটকা পড়েছিলাম। আমার চেয়ে বেশি আপনারা ফেসবুকবাসী জানবেন না তাই না?
তিনি লেখেন, স্কুল ছুটি হয় দুপুর ১টায়, আমি ঠিক তার এক থেকে দুই মিনিটে স্কাই সেকশনে ঢুকে দেখি ওখানে শুধু একটা বাচ্চা দাঁড়ানো। কেউ ছিল না, সবাই চলে গেছিল। আপনারা জানেন না ছুটির সময় হলে বাচ্চারা তিন-চার মিনিট আগে থেকেই কীভাবে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বাসায় যাওয়ার জন্য। আমি চলে আসার পর অভিভাবক আসেনি বলে আবার স্কাইয়ে কিছু বাচ্চা ঢুকেছিল, তাদেরও আমাদের আরেকজন টিচার ক্লাস থেকে নিয়ে অন্য সেকশনে বসায়। এর পরও আবার কয়েকজন (৫-৬ জন) ঢুকেছিল, তাদেরকেই আমরা হারিয়ে ফেলেছি, যারা করিডোরে, দোলনায় খেলছিল বা সিঁড়িঘরে ছোটাছুটি করছিল অথবা ওই মুহূর্তে ওই জায়গায় কাকতালীয়ভাবে ছিল।
আরও পড়ুন: দেশের জন্য আমরা মরার শপথ নিয়েছিলাম, শিশুরা নয়—এয়ারফোর্স অফিসার
পূর্ণিমা দাস লেখেন, এরপর আসেন ক্লাউড সেকশনে। ওখানে বাচ্চার সংখ্যা (৮-১০) স্কাইয়ের চেয়ে বেশি ছিল। আমার ধারণা মাহরীন মিস, মাসুকা মিস ও মাহ্ফুজা মিস ওখান থেকেই বাচ্চা বের করার চেষ্টা করছিলেন। এবং তাদের বের করতে করতে নিজেরা ঝলসে যান। যার মধ্যে মাহরীন মিস এবং মাসুকা মিসকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। মাহফুজা মিসের অবস্থা এখন গুরুতর, উনি লাইফ সাপোর্টে আছেন। উনার জন্য আপনারা দোয়া করবেন।
তিনি লেখেন, ‘ক্লাউডে’র পাশের রুম ‘ময়না’। এখানে কিছু বাচ্চা আহত হয়ছে, কেউ মারা যায়নি। ‘ময়না’র পাশে ‘দোয়েল’। এই ক্লাসের একটা বাচ্চা আর নেই। ‘দোয়েলে’র পাশে ‘টিউবরোজ’ এবং ‘ওয়াটারলিলি’, এখানেও সবাই সেফ আছে। দ্বিতীয় তলার বাচ্চারদেরও ঘটনা একই। দুইটা ক্লাসরুম একটা টিচার্স রুম পুড়েছে। ওখানেও ১৫-২০ জন ছিল।
তিনি আরও লেখেন, হায়দার আলী ভবনের মুখে, দোলনায় এবং করিডোরের হাঁটাহাঁটি করা বাচ্চার সংখ্যা এভাবে বলতে পারা যায় না। অনুমানও করা কঠিন। তার মধ্যে অনেকের শরীর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, যে লাশগুলো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে আছে ওখানকার আয়া রাও। তাই ভুল তথ্য ছড়াবেন না। আপনারা যত মৃতের সংখ্যা বলছেন সেটা একেবারে সম্ভব না। তার মধ্য আমরা যারা দুই কর্নারে ছিলাম তারা তো অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছি।
আরও পড়ুন: আহত-নিহতের প্রকৃত সংখ্যা বের করতে কমিটি গঠন করল মাইলস্টোন কলেজ
প্রত্যক্ষদর্শী ওই শিক্ষক লেখেন, লাশ গুম করার কথা যারা বললেন, আপনাদের কতখানি মাথায় সমস্যা আমার জানা নেই। কারণ একটা বাচ্চা যাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি তার লাশটা তো অন্তত আমরা তার বাবা মায়ের কাছে পৌঁছানোর সর্বাত্মক চেষ্টাটা করব। তাই না? আমরা টিচার, রাজনীতিবিদ নই। আপনাদের কোনো ধারণা নেই এই শিক্ষক-শিক্ষিকাগুলো কীভাবে বাচ্চাদের সারা দিন আগলে রাখে। ছুটি হওয়ার সময় মাহরীন মিস গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিদিন বাচ্চাদের অভিভাবকদের হাতে বুঝিয়ে দেন। যতক্ষণ একটা বাচ্চারও অভিভাবক থাকে উনি গেট থেকে নড়েন না। তাই হাত জোর করে বলছি, ভুল তথ্য ছড়াবেন না। মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলবেন না। নিহতের সংখ্যা সামনে বাড়বে আপনাদের বাড়াতে হবে না। আসেন আমরা প্রার্থনা করি প্রতিটা ফুলের জন্য যারা অকালে ঝরে গেল। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকা, স্টাফ আর ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর জন্য আসেন আজ প্রার্থনা করি।