দুই বিষয়ে এ প্লাস, তিন বিষয়ে ফেল করে কীভাবে?
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০১৯, ১২:১৫ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় আন্দোলনে নেমেছে তার সহপাঠীরা। শুক্রবার কলেজটির সামনে মানববন্ধনে শামিল হয়েছে সাত কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা।
এর আগে মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে আত্মহত্যা করে মিতু। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপকালে ছাত্রীর ফুফু জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত রেজাল্টে তিন বিষয়ে ফেল করে মিতু। যা মেনে নিতে না পেরে কাঠাল গাছের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। ফেলের বিষয়টি জানিয়ে মৃত্যুর আগে একটি সুইসাইড নোটও লিখে গিয়েছেন ওই ছাত্রী।
এদিকে মানববন্ধনে উপস্থিত মিতুর সহপাঠী তানিয়া বলেন, মিতুর লক্ষ্য অনেক বড় ছিল। সে অনেক ভাল ছাত্রী ছিল। সে যে ফেল করতে পারে, এটা কখনোই আমাদের মাথায় আসেনি। সে যেখানে দুই বিষয়ে এ প্লাস পেয়েছে, সেখানে তিন বিষয়ে ফেল করে কীভাবে? আমরা তার হত্যার বিচার চাই।
ঢাকা কলেজের ছাত্র সুমন বলেন, শুধু মিতু না, সাত কলেজের দুই লাখ শিক্ষার্থী আজ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ঢাবি আমাদের উপর যে নির্যাতন চালাচ্ছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা য়ায় না। একটা ছাত্র কতটুকু মেন্টাল প্রেসারে থাকলে আত্মহত্যা করতে পারে! আজকে আমার বোন আত্মহত্যা করেছে কালকে হয়ত আরো করবে। আমরা মিতু হত্যার বিচার চাই এই বিচার না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলা হবে।
মিতুর সহপাঠী আরজু বলেন, মিতুকে মিস করছি। একটা ভাল ছাত্রী ফার্স্টক্লাস না পেলেও ফেল করে না। মিতু কেন ফেল করল আমরা জানিনা। আমরা পড়ার জন্য ভর্তি হয়েছি। কিন্তু ঢাবি প্রশাসন আমাদের সাথে কি করছে? আমরা চাই আমাদের পদ্ধতি আগের মত হোক। আমরা আর নির্যাতিত হতে চাই না।
ঢাকা কলেজের শহিদুল ইসলাম বলেন, আজ মিতুর আত্মহত্যার জন্য কেন রাস্তায় নামতে হবে? ঢাবি প্রশাসন আমাদের বারবার আশ্বাস দিয়েও তা বাস্তবায়ন করছে না। আজ কীভাবে সকল ছাত্র গণহারে ফেল করে? আজ আজ আমার বোন আত্মহত্যা করেছে, কাল হয়ত আমার ভাই আত্মহত্যা করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অনুরোধ, আপনার এই সমস্যার সমাধান করুন। তা না হলে সাত কলেজের ছাত্ররা ঘরে বসে থাকবে না।
এদিকে মিতু আত্মহত্যার প্রতিবাদে ৭ কলেজ শিক্ষার্থীরা কাল শনিবারও মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে। সকাল ১১টায় এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে।

সূত্র মতে, আত্মহত্যাকারী ওই শিক্ষার্থীর নাম মনিজা আক্তার মিতু। মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার মহিউদ্দিন মাস্টার ও সালমা বেগমের মেয়ে তিনি। মিতু বেগম বদরুন্নেছা সরকারী মহিলা কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
মৃত্যুর কারণ বর্ণনা দিয়ে মিতুর ফুফু মেঘলা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, সে অনেক ভালো ছাত্রী ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের খামখেয়ালিপনা রেজাল্ট প্রকাশ করায় মেনে নিতে পারেনি মিতু। যেটা জানিয়েই আত্মহত্যা করে।

মিতুর খালা রিনা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেছেন, মৃত্যুর পূর্বে সে একটি সুইসাইড নোট লিখে যায়। সেখানে সে মৃত্যুর জন্য নিজকে নিজেই দায়ী করে। বান্ধবী রোকেয়া আক্তার কেয়া জানিয়েছেন, মিতু ক্লাসে বাকি আট-দশটা মেয়ে থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সে নিয়মিত ক্লাসে বোরখা পরে আসত। পড়াশোনায় বেশ পটু ছিল। ক্লাসে কেউ কোন সাবজেক্ট না বুঝলে মিতু সবাইকে হেল্প করতো বলেও জানান কেয়া। সম্ভবত এত ভালো ছাত্রী হওয়ার পরও ফেল করার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি সে।
শ্রীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইউনুস দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মনিজা আক্তার মিতু পরীক্ষায় ফেল করার কারণে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আত্মহত্যার আগে মিতুর লেখা চিরকুট থেকে বিষয়টি জানা যায়। এই বিষয়ে শ্রীনগর থানায় একটি অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা হয়েছে। পরিবারের অনুরোধের কারণে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে।