টেকনাফ সীমান্তে কীভাবে আসে এত মাদক, নেপথ্যে কারা?

টেকনাফ সীমান্ত
টেকনাফ সীমান্ত  © টিডিসি ফটো

পাহাড়, নদী ও সমুদ্রঘেরা বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ হলেও সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এখানে প্রতিনিয়ত নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি বিরাজমান। বিশেষ করে মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি সীমান্ত সংযুক্ত থাকায় চোরাচালান, মানবপাচার, মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই এখানে প্রকট। ফলে নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এই জনপদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কয়েক বছর ধরে মিয়ানমারে চলমান সংঘাত দেশটিতে তীব্র খাদ্যসংকট সৃষ্টি করেছে। এই অস্থিরতার সুযোগে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সংকট মোকাবিলায় তারা ক্রমেই বাংলাদেশের সীমান্ত-নির্ভর হয়ে পড়ছে এবং বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশি দুষ্কৃতকারীদের নিজেদের কর্মকাণ্ডে যুক্ত করছে। মাছ ধরার ট্রলারের পাচারপথ ব্যবহার করে তারা খাদ্যদ্রব্য ও নির্মাণসামগ্রী সংগ্রহ করছে এবং বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকার পাশাপাশি দেশে পাঠাচ্ছে মাদকের বড় বড় চালান।

প্রশাসনের কঠোর তৎপরতা এবং নিয়মিত অভিযান চলমান থাকলেও বিভিন্ন কৌশলে মাদক এখনও এপাৰ থেকে দেশের ভেতরে ঢুকে পড়ছে। স্থানীয় দুষ্কৃতকারী, অসাধু কর্মকর্তা এবং প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় এসব মাদক দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে দ্বিগুণ মুনাফায় বিক্রি হচ্ছে। মাদককে কেন্দ্র করে টেকনাফে অপহরণ, ডাকাতি, খুন ও গুমের মতো গুরুতর অপরাধ বাড়ছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কিছু মাদক ও পাচারকারীকে আটক করা সম্ভব হয়েছে, স্থানীয়দের অভিযোগ অধিকাংশ পাচারকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকায় তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। রাজনৈতিক আশ্রয়–প্রশ্রয়ের কারণে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ না হয়ে বরং দিন দিন আরও বিস্তৃত হচ্ছে বলেও জানান তারা।

সীমান্তের পাদদেশে বসবাসরতরা অভিযোগ করেন, দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্বল নজরদারি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে পাচারচক্র আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তাদের দাবি, রাত নামলেই সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে সক্রিয় হয়ে ওঠে মাদক নেটওয়ার্ক। নাফ নদী, পাহাড়ি রুট ও জলপথ ব্যবহার করে রাতের অন্ধকারে নির্বিঘ্নে মাদক পাচার করা হচ্ছে। তারা জানান, কিছু স্থানীয় রাজনীতিবিদ পাচারচক্রকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়ে থাকে। ফলে ছোট বাহক ধরা পড়লেও মূল হোতারা রাজনৈতিক সুরক্ষায় নিরাপদ থাকে, আর সাধারণ বাহকদের আটক দেখিয়ে অভিযান শেষ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: ছাত্রদলের সংঘর্ষ: আইসিউতে ৪ দিন লড়ে হেরে গেলেন কলেজছাত্র সাকিব

স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, টেকনাফে মাদক সহজলভ্য হওয়ায় যুবসমাজ বিপথে যাচ্ছে এবং এ কারণে নানাবিধ অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ড্রোন নজরদারি, উন্নত স্ক্যানার বা আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় পাচারচক্রের গতিবিধি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক কিছু চক্র মাদক ও অস্ত্র পাচারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

এ বিষয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানান, সীমান্ত পরিস্থিতি জটিল হলেও অপরাধ দমনে তারা সর্বোচ্চ তৎপরতা চালাচ্ছেন। বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের সমন্বিত টহল বাড়ানো হয়েছে এবং রাতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে পাচারের রুটগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য যদি অপরাধীদের সহযোগিতা করে, তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে—ইতোমধ্যে কয়েকজনকে বদলি ও বিভাগীয় তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে বলেও জানান তারা।

নাম প্রকাশে অনচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, মাদকচক্র প্রতিনিয়ত রুট, সময় ও পদ্ধতি পরিবর্তন করছে। কখনও জেলেদের নৌকা, কখনও শূন্যরেখা ব্যবহার করে পাচার চালানো হচ্ছে, তাই নজরদারি কঠিন করে তুলছে।

তিনি জানান, আইন প্রয়োগে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব বিবেচনা করা হয় না এবং অপরাধী যে-ই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকায় জনসাধারণের তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্থানীয়রা তথ্য দিলে যে-কোনো অভিযান আরও সফলভাবে পরিচালনা করা সম্ভব। ইতোমধ্যে সীমান্তে ড্রোন নজরদারি, থার্মাল ক্যামেরা এবং নদীপথে আধুনিক টহলব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, যাতে পাচারকারীদের গতিবিধি রিয়েল-টাইমে পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence