চাকরির প্রলোভনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পাচার চক্রের মূলহোতা গ্রেফতার

বিদেশে আকর্ষণীয় বেতনে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে মানব পাচার চক্রের মূলহোতা গ্রেফতার
বিদেশে আকর্ষণীয় বেতনে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে মানব পাচার চক্রের মূলহোতা গ্রেফতার  © সৌজন্যে প্রাপ্ত

বিদেশে আকর্ষণীয় বেতনে চকলেট ফ্যাক্টরি, ক্লিনার অথবা বাবুর্চির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না দিয়ে, সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বাধ্য করতো, এমন চক্রের মূলহোতাকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি এর টিএইচবি (মানব পাচার প্রতিরোধ) শাখা। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইন (৪০)। চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলার আমতলী মাঝেরপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ ইছহাকের ছেলে। 

জানা গেছে, গত ১২ জুন (বৃহস্পতিবার) রাত আনুমানিক ৩ টায় চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়। বনানী (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ) থানার মামলা নং-০৪, তারিখ- ০৪/০২/২০২৩, ধারা- মানব পাচার দমন প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৬/৭/৮/৯ মামলায় আজ ১৩ জুন আদালতে সোপর্দ করা হলে অভিযুক্ত মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইন আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

এদিকে সিআইডি গণমাধ্যমকে জানায়, তারা প্রাথমিকভাবে জানতে পারে, এই চক্রের সদস্যরা রাশিয়ায় মাসে ২ থেকে ২.৫০ লক্ষ টাকা বেতনে চকলেট ফ্যাক্টরি, ক্লিনার অথবা বাবুর্চির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ১০ জনকে প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব পাঠায়। সেখানে তাদেরকে ওমরাহ হজ করানোর পর রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে এক সুলতানের কাছে বিক্রি করে দেয়। সুলতান তাদেরকে দাস হিসেবে রাশিয়ান সোলজারদের কাছে হস্তান্তর করে। সেখানে তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বাধ্য করে। এতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে ভিক্টিমদেরকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়। খাবার বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের মানসিক শক্তি ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পরবর্তীতে ভিক্টিমরা বাধ্য হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

আরও পড়ুন: গণতন্ত্রের পথে মেঘ জমলে বৃষ্টি হয়ে আসে জিয়া পরিবার: নাছির

সিআইডি আরও জানায়, যুদ্ধে নাটোর সিংড়া থানার হুমায়ুন কবির নামক জনৈক ব্যক্তি নিহত এবং ঢাকা কেরানীগঞ্জের আমিনুল নামক একজন গুরুতর আহত হয় বলে জানা যায়। পূর্বে বর্ণিত ১০ জনের মধ্যে একজন ভিক্টিম নরসিংদীর পলাশ থানার বাসিন্দা মো: আকরাম হোসেন (২৪) প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে তিনি নিজ ব্যবস্থাপনায় গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ফিরে এসে তিনি অন্যান্য ভিকটিমের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন। তার নিকট তথ্য পেয়ে যুদ্ধাহত আমিনুলের স্ত্রী (ঝুমু আক্তার) বনানী থানা (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ) এর মামলা নং-০৪ তারিখ- ০৪/০২/২৫, ধারা- ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ৬/৭/৮/৯ রুজু করেন। 

তদন্তকালীন সিআইডি আরও জানতে পারে, ১০ জনের আরেকটি দল সৌদি আরবে অবস্থান করছে। রাশিয়া নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করানো বিষয়ে জানাজানি হওয়ায়, তারা রাশিয়া যেতে অস্বীকার করেছে এবং তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাই তারা সৌদি আরবে কোনো কাজ করতে পারছে না এবং দেশে ফিরতেও পারছে না।

এদিকে, সিআইডি ভুক্তভোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। একই সঙ্গে মানব পাচারের এই নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি নিবিড় তদন্ত এবং গ্রেফতার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে নেপালে পালিয়ে যাওয়ার সময় মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য ফাবিহা জেরিন তামান্নাকে সিআইডির টিএইচবি শাখার একটি টিম শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ফাবিহা জেরিন তামান্না ড্রীম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের অংশীদার।

 

 


সর্বশেষ সংবাদ