২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের শুনানি শুরু

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট  © সংগৃহীত

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে খালাস পাওয়া আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) ওপর শুনানি শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল জব্বার ভুঁইয়া ও অনীক আর হক।

এর আগে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর রায় দেন, যার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয় ১৯ ডিসেম্বর। পরে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে রায়ের বিরুদ্ধে দুটি পৃথক লিভ টু আপিল করা হয়। ২০২৪ সালের ১৩ মার্চ এসব আবেদন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত থেকে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন: ট্রাফিক সার্জেন্টের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের বাইক, শাস্তি দাবি নিসআ’র

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সমাবেশে চালানো হয় বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা। হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। তবে প্রাণ হারান আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী। আহত হন দলের আরও তিন শতাধিক নেতা-কর্মী।

হামলার পরদিন মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করা হয়। তদন্ত শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ১১ জুন প্রথম দফা অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। সেখানে ২২ জনকে আসামি করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

২০১১ সালের ৩ জুলাই দাখিল করা হয় সম্পূরক অভিযোগপত্র, যেখানে আসামির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২-এ। এর মধ্যে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, হুজি নেতা মুফতি হান্নান এবং শাহেদুল ইসলাম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড অন্য মামলায় কার্যকর হওয়ায় মোট আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯ জনে।

২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর মামলার বিচারিক আদালত রায় ঘোষণা করেন। এতে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: জবি শিক্ষার্থীদের রাতভর সড়কে অবস্থান, সকালেও চলছে আন্দোলন

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির মাওলানা শেখ আবদুস সালাম (কারাগারে মারা যান), কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম (কারাগারে মারা যান), ও হানিফ পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফসহ মোট ১৯ জন।

এদের প্রত্যেককে দণ্ডবিধির ৩০২/১২০(খ)/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির আদেশের পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ আরও ১৬ জন। প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এছাড়াও পুলিশের সাবেক আইজি মো. আশরাফুল হুদা, খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ, মুন্সি আতিকুর রহমানসহ কয়েকজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও সামরিক কর্মকর্তাকে দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়।

২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর বিচারিক আদালতের রায় হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় আসে এবং কারাবন্দি আসামিরা আপিল করেন। পরে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয় এবং একই বছরের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় প্রদান করে।


সর্বশেষ সংবাদ