ক্রিকেটারদের গোপন অস্ত্র: কীভাবে কাজ করে প্রো-ভেলোসিটি ব্যাট?

পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উড শেখাচ্ছেন প্রো-ভেলোসিটি ব্যাট ব্যবহারের কৌশল
পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উড শেখাচ্ছেন প্রো-ভেলোসিটি ব্যাট ব্যবহারের কৌশল  © সংগৃহীত

বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন চলছে পাওয়ার হিটিংয়ের নতুন জোয়ার। গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দ্রুত রান তোলার গুরুত্ব যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে উন্নত ব্যাটিং প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতির চাহিদাও। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিশেষায়িত পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উডকে। তার হাত ধরেই বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা পরিচিত হচ্ছে বিশ্বমানের আধুনিক প্রশিক্ষণ যন্ত্র ও পদ্ধতির সঙ্গে। এরই অংশ হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছে ‘প্রো-ভেলোসিটি ব্যাট’। যা বর্তমানে ক্রিকেটারদের ব্যাটিং উন্নয়নে একটি যুগান্তকারী অনুশীলন উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এটা কোনো সাধারণ ব্যাট নয়। বেসবলের জনপ্রিয় এই ব্যাট ধাতব রডের মতো। মূলত ট্রেনিংয়ের জন্য বানানো প্রো ভেলোসিটি ব্যাট ব্যবহার করা হয় ব্যাটারের ব্যাট স্পিড, হ্যান্ড-আই কোঅর্ডিনেশন বাড়নো এবং শক্তি ও শট মেকানিক উন্নত করার জন্য। এর মুখ চিকন, ওজন বণ্টন অস্বাভাবিক। ফলে টাইমিংয়ে সামান্য ভুল হলেই বল মিস করে। আর সেখান থেকেই ক্রিকেটাররা বুঝতে পারেন কোথায় সমস্যা।

ভুল টাইমিং বা ভুল টেকনিক ব্যবহার করলে বল সহজে মিস হয়। এই ব্যাট দিয়েই অনুশীলন করছেন লিটন দাস, জাকের আলী, পারভেজ হোসেন ইমন, তানজিদ তামিম, তাওহীদ হৃদয় ও রিশাদ হোসেনরা। আর এই ব্যাটের ব্যবহার করে শেখানোর দায়িত্বে আছেন বিশ্বের একমাত্র স্বীকৃত পাওয়ার হিটিং কোচ, ইংল্যান্ডের জুলিয়ান রস উড। এশিয়া কাপ ও নেদারল্যান্ডস সিরিজের আগে লিটনদের ব্যাটিংয়ে বাড়তি প্রভাব আনতে তাঁকে তিন সপ্তাহের জন্য এনেছে বিসিবি।

বিশেষ এই ব্যাটে অনুশীলন করা নিয়ে আজ দুপুরে মিরপুরে সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলেছেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার জাকের আলী। তিনি বলেন, ‘কী পরিবর্তন হয়েছে, ম্যাচ না খেললে তা বোঝা কঠিন। যেহেতু মাত্র দুই–তিন দিন হলো কাজ হয়েছে, তাই এত দ্রুত কিছু বলা ঠিক হবে না। সিলেটে আবার নেটে নতুন কিছু হবে। আমাদের যেসব ড্রিল ও সুইংয়ের কাজ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ঠিকভাবে করাই এখন মূল লক্ষ্য।’

জুলিয়ান উড শুধু প্রো-ভেলোসিটি ব্যাটই আনেন নি। এই ব্যাটের আদলে আরও কিছু বিশেষ ব্যাট ব্যবহার করিয়েছেন লিটনদের। দলের ম্যানেজার নাফিস ইকবালের পোস্ট করা এক ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনি খেলোয়াড়দের পাতলা, সরু ব্যাট দিয়ে স্লো বলের বিপক্ষে জোরে ড্রাইভ খেলতে বলছেন। যাতে ব্যাটের মিডলিংটা দারুণ হয়।

ভেলোসিটি ব্যাট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোচরা প্রথমে স্লো বোলিং বা থ্রো-ডাউনে কাজ শুরু করান। লক্ষ্য থাকে বলকে পরিষ্কারভাবে ব্যাটের মাঝ বরাবর হিট করানো। ভুল শট খেললেই বোঝা যায় কোথায় সমস্যা হচ্ছে। ধাপে ধাপে বলের গতি বাড়ানো হয় থ্রো থেকে মিডিয়াম, তারপর ম্যাচ স্পিডে। প্রতিটি সেশন রাখা হয় ছোট, ১০-১৫ মিনিটের, যাতে কবজি ও কাঁধে বাড়তি চাপ না পড়ে। এ সময় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় ফুটওয়ার্ক আর হেড পজিশনে।

বিশেষজ্ঞ এই কোচের অনুশীলন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাকের বলেন, ‘যারা টাইমিংয়ে ভালো, তারা এই ব্যাটে অনুশীলন করে আরও চার-পাঁচ মিটার শট দূরে পাঠাতে পারে। টাইমারদের পাওয়ার হিটার বানানোর চেষ্টা হয় না। তবে টাইমিং ঠিক থাকলে যে বল আউট হতো, সেটা ছয় হতে পারে। এতে বড় রান করার সুযোগ বাড়বে। আমার ক্ষেত্রে উডের পরামর্শ ভালো লেগেছে। বাকিটা তাঁকে জিজ্ঞেস করলে আরও স্পষ্ট মন্তব্য পাওয়া যাবে।’

 


সর্বশেষ সংবাদ