গবেষণা
দেশে শারীরিক নিষ্ক্রিয় কিশোর-কিশোরী বাড়ছে, ১১ শতাংশের ওজন বেশি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:২৪ AM , আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:২৪ AM
দেশের ১১ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। ৪০ শতাংশ কিশোরের ও ৪৩ শতাংশ কিশোরীর শারীরিক সক্রিয়তা পর্যাপ্ত নয়। গবেষণা বলছে, শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকা কিশোরের সংখ্যা বাড়ছে, তবে কিশোরীর সংখ্যা কমছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সভাকক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) আয়োজিত কর্মশালায় ওই গবেষণার ফল উপস্থাপন করা হয়। শিশু ও কিশোরদের শারীরিক সক্রিয়তাবিষয়ক বাংলাদেশের রিপোর্ট কার্ড তৈরির জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ, অ্যাকটিভ হেলথি কিডস, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কর্মসূচি ব্যবস্থাপক নূরুল ইসলাম বলেন, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে দেশে অসংক্রামক রোগ বাড়ছে। দেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের কারণ হচ্ছে অসংক্রামক রোগ। প্রাপ্তবয়স্কদের ২৪ শতাংশ স্থূল। স্থূলতা শিশু-কিশোরদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে।
কিশোরদের নিষ্ক্রিয়তা বাড়ছে
দেশের শিশু-কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক কর্মকাণ্ড বা সক্রিয়তা পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডেপুটি ডিন অধ্যাপক মলয় কুমার মৃধা। তিনি বলেন, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৪৩ শতাংশ কিশোরী ও ৪০ শতাংশ কিশোর নিষ্ক্রিয় অর্থাৎ পর্যাপ্ত শারীরিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকে না। নিষ্ক্রিয় কিশোরের হার ঢাকা বিভাগে (৭১ শতাংশ) এবং নিষ্ক্রিয় কিশোরীর হার রাজশাহী বিভাগে (৬০ শতাংশ) সবচেয়ে বেশি।
এই গবেষণায় ২০২৩ সালের জাতীয় পুষ্টি সার্ভিলেন্সের তথ্য–উপাত্ত ব্যবহার করা হয়। এ জন্য দেশের ৯০টি স্থায়ী এলাকা বা কেন্দ্র থেকে ১১ হাজারের বেশি কিশোর–কিশোরীর নিয়মিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৬৪টি কেন্দ্র গ্রামাঞ্চলে, ১৬টি কেন্দ্র শহরে এবং ১০টি কেন্দ্র শহরের বস্তিতে। এর আগে ২০১৮ সালে এসব কেন্দ্র থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে একই ধরনের জরিপ করা হয়েছিল।
মলয় কুমার মৃধা বলেন, কিশোরদের মধ্যে নিষ্ক্রিয়তা বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, কিশোরীদের মধ্যে কমতে দেখা যাচ্ছে। ২০১৮ সালে ২৯ শতাংশ কিশোর শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় ছিল। ২০২৩ সালে সেই হার বেড়ে ৪০ শতাংশ হয়। অন্যদিকে ২০১৮ সালে ৫০ শতাংশ কিশোরী শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় ছিল। ২০২৩ সালে তা কমে হয় ৪৩ শতাংশ। কিশোরদের মধ্যে নিষ্ক্রিয়তা কেন বাড়ছে এবং কিশোরীদের মধ্যে কেন কমছে, তার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
কী করছে কিশোর-কিশোরীরা
এ বছর ব্র্যাক জেমস ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ শারীরিক সক্রিয়তা বিষয়ে একটি জরিপ করে। জরিপে ১০-১৭ বছর বয়সী ৭২৬ জন কিশোর-কিশোরীর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা করা হয়। আট বিভাগের আট জেলায় আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে জরিপটি করা হয়। ‘ন্যাশনাল ইন্ডিকেটর সার্ভে ২০২৫’ শীর্ষক ওই জরিপের ফলাফলও অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা হয়।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্প আতঙ্কে বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা কি ভূমিকম্পপ্রুফ?
জরিপে দেখা গেছে, আনুষ্ঠানিক খেলাধুলা বা শরীরচর্চার কর্মসূচিতে ৫৮ দশমিক ১ শতাংশ কিশোর-কিশোরী অংশগ্রহণ করে। ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ কিশোর-কিশোরী সপ্তাহে পাঁচ দিন বা তার বেশি হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায়। ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী বলে, তারা শারীরিকভাবে ‘ফিট’।
শিশু-কিশোর-কিশোরীদের দৈনিক গড়ে ৬০ মিনিট মাঝারি থেকে তীব্র শারীরিক কর্মকাণ্ডের পরামর্শ দেওয়া হয়। জরিপে দেখা গেছে, ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ কিশোর-কিশোরী দৈনিক গড়ে ৬০ মিনিট মাঝারি থেকে তীব্র শারীরিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়। সক্রিয় কিশোরীদের হারের চেয়ে কিশোরদের হার বেশি।
শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা চলে আসে কম্পিউটার বা মুঠোফোনের পর্দায় দীর্ঘ সময় চোখ রাখার কারণে। দুই ঘণ্টার কম সময় কত কিশোর-কিশোরী কম্পিউটার বা মুঠোফোনে চোখ রাখে, তা জানার চেষ্টা করেন গবেষকেরা। তাতে দেখা গেছে, ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ কিশোর-কিশোরী দুই ঘণ্টার কম সময় ব্যয় করে কম্পিউটার বা মুঠোফোনের পর্দায়। কিশোরদের চেয়ে কিশোরীরা কম সময় ব্যয় করে।
প্রায় ১২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী গবেষকদের জানিয়েছে, তারা শারীরিক সক্রিয়তার ব্যাপারে মা–বাবার সমর্থন বা সহায়তা পায় না। অন্যদিকে ৭ শতাংশ কিশোর-কিশোরী জানিয়েছে, তারা বন্ধুদের কাছ থেকে সহায়তা পায় না।
অনুষ্ঠানে মলয় কুমার মৃধা বলেন, শারীরিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির উদ্যোগ মানে শুধু স্বাস্থ্য ব্যয় নয়, বরং এটি একটি অর্থনৈতিক বিনিয়োগ, যা জাতীয় উৎপাদনশীলতা বাড়াবে ও অসংক্রামক রোগের মহামারি ঠেকাতে সহায়তা করবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সাবেক লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক সৈয়দ জাকির হোসেন।