মাইলস্টোন ট্রাজেডি
সন্তানতূল্য শিশুদের বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছাতেন মাসুমা, তাদের বাঁচাতে গিয়েই মৃত্যুর কাছে হার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৮ AM , আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৬:২৫ PM
সম্প্রতি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের সামনে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ওই সময় স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন তিন শিক্ষিকা। তিনজনই আগুনে দগ্ধ হন এবং দুই জনের মৃত্যু হয়। এই শিক্ষিকাদের পাশাপাশি শিশুদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেন প্রতিষ্ঠানটির ‘আয়া’ মাসুমা বেগমও (৩৮)। এসময় তার পুরো শরীর আগুনে দগ্ধ হয়। তিনি গত শনিবার (২৬ জুলাই) জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন।
স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীদের বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়াই ছিল তার নিত্যদিনের দায়িত্ব। শিশুরা তাকে ডাকত ‘খালা’ বলে। আর তিনিও তাদেরকে নিজের সন্তানের মতোই দেখতেন। দুর্ঘটনার সময় তিনি শিশুদেরকে উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কয়েকজন শিশুকে বাঁচালেও শেষ পর্যন্ত নিজেই গুরুতর দগ্ধ হন এবং পরে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
জানা যায়, মাসুমার বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড় মাইনক্যা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। বাবা আবুল কাশেম। স্বামী-সন্তান নিয়ে রাজধানীর তুরাগের নয়ানগর শুক্রভাঙ্গা এলাকায় থাকতেন। শনিবার সন্ধ্যায় তার মরদেহ গ্রামে পৌঁছায়।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বামী সেলিম হোসেনকে তিনি দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিলেন। স্বামী সে বর্ণনা তুলে ধরেন গণমাধ্যমে। তিনি জানান, মাসুমা বলেছিলেন, ‘আমি বাচ্চাগুলারে থুইয়া চইলা যাইতে পারলে কিচ্ছু হইতো না। কিন্তু চিন্তা করছি, আমার যেমন সন্তান আছে, তেমনই আরেকজনের সন্তান এইখানে। এই চিন্তা কইরা আমি আর কোনো দিকে যাই নাই। বাচ্চাদের উদ্ধার করতে গিয়া এই দুর্ঘটনা হইছে।’
সেলিম জানান, তাদের দুই সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের বিয়ে হয়েছে। ছোট ছেলে মানসুর রহমান আবদুল্লাহ দিয়াবাড়ীর একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। মা হারিয়ে সে পাগলপ্রায়।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, মাসুমার শরীরের ৯০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল। শ্বাসনালিও পুড়ে যায়। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারিনি।