সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মায়ের মৃত্যু, আইসিইউতে দুই ছেলে

আহত ছেলে
আহত ছেলে   © টিডিসি ফটো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বটতল এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিংকু দাস নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১৯ নভেম্বর) ভোর ৪টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় রিংকু দাশের দুই ছেলেও আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন।

নিহত রিংকু দাস মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মিঠাছরা এলাকার বেচু কামলা বাড়ির মৃত বাবু দাসের স্ত্রী। আহতরা হলো নিহত রিংকুর বড় ছেলে কিষাণ দাস ও ছোট ছেলে অর্পণ দাস। কিষাণ স্থানীয় মজহারুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ও অর্পণ একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

জাানা গেছে, গত রবিবার (১৬ নভেম্বর) নিহত রিংকু দাস তার দুই ছেলেকে নিয়ে মিঠাছরা থেকে  সীতাকুণ্ড  উপজেলার বাড়বকুণ্ড এলাকায় বাবার বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে সীতাকুণ্ড উপজেলার মীরেরহাট বটতল এলাকায় সিডিএম পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ড্রাম ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে বাসটির সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলে চার জন এবং হাসপাতালে আরও একজন মারা যায়।

 এ ঘটনায় মিরসরাইয়ের তিনজনসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রিংকু দাস, তার ছেলে কিষাণ দাস ও অর্পণ দাসের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের চমেক হাসপাতালের প্রেরণ করা হয়। চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে তিনদিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় বুধবার ভোর ৪ টার দিকে রিংকু দাস মারা যায় এবং তার দুই ছেলে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

আহত কিষাণ দাস ও অর্পণ দাসের স্বজন শাওন তপু বলেন, এক বছর আগে তাদের বাবা বাবু দাস হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। গত রবিবার সন্ধ্যায় মায়ের সাথে নানার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার সময় সীতাকুণ্ড এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুত্বর আহত হয় কিষাণ দাস, অর্পণ দাস ও তাদের মা রিংকু দাস। তাদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। আইসিইউতে তিনদিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় বুধবার ভোরে রিংকু দাস মারা যায়। বড় ছেলে কিষাণ দাস আইসিইউতে জীবন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। দুই ছেলে এখনো জানেনা তাদের মা আর পৃথিবীতে নেই। একবছর আগে বাবা, আর আজ মাকে হারিয়ে তারা অল্প বয়সে দুটি ছেলে এতিমে হয়ে গেছে। বুধবার বিকেলে সৎকার্য শেষে রিংকু দাসের দাহ সম্পন্ন করা হয়েছে।

তপু আরও বলেন, পরিবারটি খুবই অসহায়। চমেক হাসপাতালের আইসিইউ এবং চিকিৎসা খরচের টাকা নিয়ে চিন্তিত। এতো টাকা তাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। সমাজের ভিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে এতিম দুই ছেলের চিকিৎসার খরচ বহন করা যেতো। তারা আবার সুস্থ হয়ে উঠতো। সহযোগিতা পাঠানোর জন্য বিকাশ নাম্বার ০১৮৩৬-২০৩২৫৭, ০১৭২৪-৫০৪৭৪৩।

মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তাজ উদ্দিন বাচ্চু বলেন, শুনে খুব খারাপ লাগছে। পরিবারটি একদম নিঃস্ব হয়ে গেছে। এক বছর আগে মহিলার স্বামী আর আজকে সড়ক দুর্ঘটনায় মহিলাও মারা গেল। দুই ছেলের জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হাসপাতালে লড়ছে।

কুমিরা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ জাকির রাব্বানী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত রবিবার সীতাকুণ্ড এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রিংকু দাস নামে এক মহিলা বুধবার ভোরে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত; গত ১৬ নভেম্বর (রবিবার) সন্ধ্যায় সীতাকুণ্ড উপজেলার মীরেরহাট বটতল এলাকায় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ড্রাম ট্রাকের পেছনে সিডিএম পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ধাক্কা দেয়। এতে বাসটি দুমড়েমুচড়ে গিয়ে সড়কের পাশে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে চারজন ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও একজন মারা যায়। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন।

 

 

 

 

 


সর্বশেষ সংবাদ