কুয়াকাটা সৈকতে ‘সরদার মার্কেট’ সাত দিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ

কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্টে সাগরপাড়ে নির্মিত সরদার মার্কেট
কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্টে সাগরপাড়ে নির্মিত সরদার মার্কেট  © টিডিসি

কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকায় সাগরের পানির লেভেল দখল দখল করে নির্মিত বহুল আলোচিত ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা ‘সরদার মার্কেট’ সাত দিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে কুয়াকাটা পৌরসভা। পৌরসভার অনুমোদন ছাড়া ও হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে বেড়িবাঁধের বাইরে নির্মিত এই স্থাপনা পর্যটকদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে বলে জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসীন সাদেক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সরদার মার্কেটের মালিককে নির্মাণ কাজ বন্ধ ও সাত দিনের মধ্যে স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, পৌরসভার অনুমোদন ব্যতীত ও হাইকোর্টের রিট পিটিশন (৫১৬২/২০১১) অনুসারে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বেড়িবাঁধের বাইরে জিরোপয়েন্ট এলাকায় লোহার পাইপ ও কাঠের পাটাতনের ওপর ঢালাই দিয়ে প্রায় ৪০ ফুট উচ্চতার তিন তলা স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ এবং গৃহায়ন ও গণপুর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৮ জুলাই ২০১৬ তারিখের প্রজ্ঞাপনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই স্থাপনাটি ধসে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, পৌরসভার প্রকৌশলীরা আগে নির্মাণ কাজ বন্ধের অনুরোধ করলেও তা অমান্য করে স্থাপনাটি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অপসারণ না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও চিঠিতে সতর্ক করা হয়েছে। এর আগে পৌরসভা ৭ ও ২১ অক্টোবরের মাসিক সভায় সরদার মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড টানায়।

মার্কেটটি পূর্বে লোহার কাঠামোর ওপর দোতলা ছিল। সম্প্রতি মালিকপক্ষ সেটিকে তিনতলায় উন্নীত করার কাজ শুরু করে। স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, জোয়ারের সময় এই মার্কেটের নিচ পর্যন্ত পানি উঠে আসে এবং উত্তাল ঢেউয়ে কাঠামো প্রচণ্ডভাবে কাঁপে। ফলে দোকানি ও পর্যটকদের মধ্যে সবসময় আতঙ্ক বিরাজ করে। মার্কেটের কয়েকজন দোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বর্ষায় ঢেউয়ের তীব্রতায় মনে হয়—‘এই বুঝি সব ভেসে গেল।’

এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য মার্কেটের মালিক সাজেদুল ইসলাম হিরুকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে পূর্বে তিনি দাবি করেছিলেন, জমিটি তার মালিকানাধীন এবং প্রকৌশলীর পরামর্শ নিয়েই স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে সাগর এগিয়ে আসবে তা আগে বুঝতে পারিনি। আমিও ব্যাপক ক্ষতিতে পড়েছি।’ তার দাবি, বিষয়টি নিয়ে পটুয়াখালী জেলা জজ আদালতের একটি আদেশ রয়েছে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, সাগরপাড়ে অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ শুধু সৈকতের সৌন্দর্যই নষ্ট করছে না, বরং সাগরভাঙন ও জননিরাপত্তার ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা অবস্থায় সাগর এলাকার ভেতরে এ ধরনের স্থাপনা কীভাবে বহাল রয়েছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ। তারা দ্রুত স্থাপনাটি অপসারণ ও সৈকত এলাকায় কঠোর নজরদারির দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যসচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাউছার হামিদ বলেন, ‘এটি একটি অনুমোদনহীন ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা। সৈকতে প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের আগমন হয়। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অপসারণের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় হাইকোর্টের নির্দেশনা কার্যকর করা এবং পর্যটকদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করাই এখন প্রশাসনের প্রধান চ্যালেঞ্জ।


সর্বশেষ সংবাদ