অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক: গাইবান্ধায় বাড়ছে আক্রান্ত মানুষ ও গবাদিপশু

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

গাইবান্ধায় অ্যানথ্রাক্স রোগের সংক্রমণ দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। অসুস্থ গবাদিপশু জবাইয়ের পর একের পর এক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অঞ্চলে প্রাণিসম্পদ বিভাগের মাঠ পর্যায়ে তৎপরতার অভাব, স্বাস্থ্য বিভাগের নীরবতা এবং সাধারণ মানুষের রোগ সম্পর্কে অজ্ঞতা; এই তিনটির সমন্বয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

জেলা জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন অ্যানথ্রাক্স। প্রাণিসম্পদ বিভাগ দাবি করছে, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন বলছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের কিসামত সদর গ্রামে গত ২৭ সেপ্টেম্বর মুজিবুর রহমান মন্টুর বাড়িতে একটি অসুস্থ গরু জবাই করা হয়। ওই গরুর মাংস কাটার একদিন পরই ১১ জনের হাতে-পায়ে ও মুখে ফোসকা, কালো দাগ এবং ঘা দেখা দেয়। এরপর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২ জনে।

সংক্রমিত এলাকাগুলোতে প্রতিদিনই গরু-ছাগল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা সরেজমিনে আসছেন না। চিকিৎসা বা পরামর্শের কোনো ব্যবস্থাও মিলছে না। এর চেয়ে বড় অভিযোগ ৮০ পয়সার সরকারি ভ্যাকসিনের জন্য আদায় করা হচ্ছে ১০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।

আরও পড়ুন: শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে তিন ব্যাংক, পাবেন কীভাবে?

আক্রান্ত মোজা মিয়া বলেন, ‘সরকারি কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। নিজেরাই চিকিৎসা করছি। এখন সবাই আমাদের এড়িয়ে চলছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানান, ‘প্রতিদিন গরু-ছাগল মরছে। তবু কর্মকর্তারা মাঠে আসেন না। যারা আসেন, তারা টাকা ছাড়া ভ্যাকসিন দেন না।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি। গরু প্রতি ৮০ পয়সার বেশি যেন কেউ না নেয়, সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডা. মো. রফিকুজ্জামান বলেন, ‘অ্যানথ্রাক্স মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না এবং মৃত্যুর ঝুঁকি খুবই কম। আতঙ্কিত না হয়ে যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে।’

গাইবান্ধা আঞ্চলিক প্রাণী রোগ অনুসন্ধান ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রাজ্জাক জানান, মৃত পশুর নমুনা পরীক্ষায় অ্যানথ্রাক্স জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। অসুস্থ পশুর পরিচর্যায় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

অবসরপ্রাপ্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাসুদার রহমান সরকার বলেন, ‘অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত পশু হঠাৎ মারা যেতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে দ্রুত রিং ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চালানো জরুরি। মৃত পশু অবশ্যই গভীর গর্তে পুঁতে ফেলতে হবে, কারণ এই জীবাণু মাটিতে ৩০-৪০ বছর পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে।’

প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে ২ লাখ ৭০ হাজার গরু এবং ৫০ হাজার ছাগলের মধ্যে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ২৯ হাজার পশুকে অ্যানথ্রাক্স ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ