মধ্যরাত থেকে ২২ দিনের ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, প্রস্তুত গলাচিপার প্রশাসন

ঘাটে বাঁধা ট্রলার
ঘাটে বাঁধা ট্রলার  © টিডিসি

আজ শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত ১২টা থেকে পটুয়াখালী জেলার উপকূল তীরবর্তী গলাচিপা উপজেলার নদী ও মোহনায় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা, পরিবহন, বাজারজাত ও মজুত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার ঘোষিত এ নিষেধাজ্ঞা চলবে ০৪ অক্টোবর থেকে আগামী ২৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত। ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় প্রতিবছরের মতো এবারও এ উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

উপজেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের সর্বোচ্চ ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, এ সময় নদী ও সাগরে কঠোর অভিযান চালানো হবে।

এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে গলাচিপা উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, পুলিশ, কোস্টগার্ড, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও নৌ পুলিশ যৌথভাবে টহল দেবে। তেঁতুলিয়া, বুড়াগৌরাঙ্গ, আগুনমুখা, রামনাবাদ ও লোহালিয়া নদী এবং সংযুক্ত খালগুলোর মুখে কঠোর নজরদারি থাকবে। খালের ভেতরের নৌকাগুলো একত্র করে বেঁধে রাখা হবে যাতে জেলেরা নদীতে নামতে না পারে। ইতোমধ্যে জেলেপল্লীতে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও সচেতনতামূলক সভা সম্পন্ন হয়েছে।

মৎস্য অফিস সূত্র আরও জানায়, ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় প্রতি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হবে। তবে স্থানীয় জেলেদের দাবি—সঠিক তালিকা প্রণয়নে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে, যাতে প্রকৃত জেলেরা সুবিধা পান। অনেকে সরকারি সহায়তা বাড়ানোরও দাবি জানিয়েছেন।

জেলেরা বলছেন, দীর্ঘদিন নদী-সাগরে ইলিশ না পাওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন যখন জালে কিছুটা ইলিশ পড়তে শুরু করেছে, তখনই নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। দক্ষিণ পানপট্টির জেলে এমাদুল শিকদার বলেন, গত দুই বছর নিষেধাজ্ঞা মানতে গিয়ে অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে। এবারও ঋণ শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছি। খরিদা গ্রামের রিয়াজ জানান, কিস্তি আর মহাজনের দাদনের বোঝা মাথায় নিয়ে মাছ ধরছি। এখন যখন ইলিশ মিলছে, তখন নিষেধাজ্ঞা জারি হলো। সংসার চালাব কীভাবে? অনেক জেলে আরও অভিযোগ করেন, প্রতিবছর বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞার সময় ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে ইলিশ শিকার করে নিয়ে যায়। তাই প্রতিবেশী দেশের জেলেরা যাতে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য প্রশাসনের কঠোর নজরদারির দাবি তাদের।

গলাচিপা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জহিরুন্নবী বলেন, এবার ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ সংরক্ষণে বিশেষ অভিযান চলবে। ইতিমধ্যে নৌবাহিনীর একটি টিম গলাচিপায় অবস্থান নিয়েছে। টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্পিডবোট, ট্রলারসহ নৌযান দিয়ে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা টহল দেওয়া হবে। জেলেদের ধৈর্য ধরে মা ইলিশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হবে। সরকার বিকল্প কর্মসংস্থান ও খাদ্য সহায়তা দেবে। তবে কেউ আইন অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ‘আমিষেই শক্তি, আমিষেই মুক্তি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সরকার সারাদেশে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫’ ঘোষণা করেছে, যা চলবে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত।


সর্বশেষ সংবাদ