স্থলপথে পাট আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা, চরম দুর্ভোগে বেনাপোলের ব্যবসায়ী-শ্রমজীবীরা
- হুমায়ুন কবির মিরাজ, বেনাপোল প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ০৭:৩৫ AM , আপডেট: ২৮ জুন ২০২৫, ০৩:৪৪ PM
বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে পাট ও পাটজাত পণ্যের আমদানি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়। বৈদেশিক বাণিজ্য মহাপরিচালক অজয় ভাদুর স্বাক্ষরিত আদেশ অনুযায়ী, সমুদ্রপথে—বিশেষ করে মুম্বাইয়ের নহাভা শেভা বন্দরের মাধ্যমে—এই পণ্যের আমদানি চালু থাকলেও স্থলবন্দর, বিশেষত বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে পাট আমদানি এখন বন্ধ।
এই সিদ্ধান্তে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোলে নেমে এসেছে অচলাবস্থা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দুই দেশের হাজার হাজার ব্যবসায়ী, আমদানি-রপ্তানিকারক ও বন্দরের ওপর নির্ভরশীল শ্রমজীবী মানুষ। বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড হঠাৎ স্থবির হয়ে পড়ায় হতাশা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বন্দর এলাকায়।
ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘হঠাৎ করে এমন নিষেধাজ্ঞায় আমরা হতবাক। সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য এই সিদ্ধান্ত বড় আঘাত। সমুদ্রপথে আমদানির সুযোগ থাকলেও সেটা ছোট উদ্যোক্তাদের পক্ষে বাস্তবায়নযোগ্য নয়—এতে খরচ ও সময় দুই-ই অনেক বেশি।’
এদিকে বেনাপোল সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান জানান, ‘এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পাট ও পাটজাত পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়। হঠাৎ নিষেধাজ্ঞার ফলে বন্দরের অনেক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়বেন। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী অর্থনীতিও বড় ধাক্কা খাবে।’
রাত সাড়ে ১০টায় কথা হয় বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী মেহেদী হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত শুধু অর্থনৈতিক নয়, কূটনৈতিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক আস্থা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হলে এমন আচমকা সিদ্ধান্ত থেকে ভারতকে বিরত থাকতে হবে। আমরা সরকারের কাছে দ্রুত কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, সীমান্তপথে পাট আমদানি নিষিদ্ধ থাকলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। এছাড়া দেশের পাটশিল্প, যেটি কৃষিভিত্তিক অন্যতম রপ্তানি খাত, তা পড়বে বড় ধরনের ঝুঁকিতে।
বিষয়টি নিয়ে এখনই পদক্ষেপ না নিলে, সীমান্ত বাণিজ্যে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতা তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ ও দ্রুত সমাধানই এখন এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।