ফেনীতে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট
- ফেনী প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০২:০৮ PM , আপডেট: ০৩ জুন ২০২৫, ০৭:০৯ PM
পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর কয়েকদিন। ঈদকে ঘিরে জমে উঠেছে ফেনীর কোরবানির পশুর হাটগুলো। জেলার ছয়টি উপজেলায় এবার ১১২টি হাট ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার পশু চাহিদা পূরণে এ বছর কোনো ঘাটতি নেই। ব্যবসায়ী, খামারি ও সংশ্লিষ্টদের হিসাবে এবার ফেনীতে গরুর হাট কেন্দ্রিক বাণিজ্য আনুমানিক ৭০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ তথ্য জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জেলার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৮২ হাজার ৩৩৬টি। এর বিপরীতে স্থানীয় খামার ও পারিবারিক উদ্যোগে প্রস্তুত রয়েছে ৮৭ হাজার ২২৭টি পশু। প্রস্তুত পশুগুলোর মধ্যে রয়েছে ৬৯ হাজার ৩৬০টি গরু, ১ হাজার ৬৬৭টি মহিষ, ১৩ হাজার ২৪৩টি ছাগল এবং ৩ হাজার ১৪৭টি ভেড়া।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গড় হিসেবে প্রতি গরুর মূল্য ১ লাখ টাকা ধরে হিসাব করলে, গরুগুলোর সম্ভাব্য বাজার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৬৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর সঙ্গে মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার মূল্য যোগ করলে, জেলার কোরবানির পশু বাণিজ্যের মোট সম্ভাব্য বাজার মূল্য ৭০০ থেকে ৭৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এদিকে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ফেনী জেলার ৬টি উপজেলায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। জেলার সদর উপজেলাকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি হাট বসেছে এবার। জানা গেছে, ফেনী সদরের ১২টি ইউনিয়নের ২৬টি অস্থায়ী পশুর হাটে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার গরু উঠছে। ছাগলনাইয়া উপজেলায় বসেছে ১৭টি পশুর হাট, যার মধ্যে ২টি স্থায়ী এবং ১৫টি অস্থায়ী। পরশুরাম উপজেলায় বসেছে ৮টি পশুর হাট এবং ফুলগাজী উপজেলায় বসেছে ৭টি হাট। দাগনভূঞা উপজেলায় এবার ইজারা দেওয়া হয়েছে ১৯টি পশুর হাট। সোনাগাজী উপজেলায় বসেছে ২৫টি পশুর হাট, যার মধ্যে ৩টি স্থায়ী এবং ২২টি অস্থায়ী হাট। এছাড়াও ফেনী পৌরসভায় ২টি পশুর হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। ফেনীর সিও অফিসের পশুর হাটটি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ইজারা দেওয়া হয়েছে।
ফেনীর কোরবানির হাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গরুর মধ্যে নানা জাতের গরু রয়েছে। সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে দেশি জাতের গরু। দেশীয় জাতের গরুগুলো স্থানীয়ভাবে খামারে বা পরিবারের নিজ উদ্যোগে পালিত। গরুগুলো মোটাতাজা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং দাম একটু বেশি হলেও সবচেয়ে বেশি পছন্দ করছেন ক্রেতারা। এছাড়া হাটে দেখা যাচ্ছে দেশি-ফ্রিজিয়ান বা দেশি-সাহিওয়াল জাতের মিশ্র গরু। কিছু বড় হাটে আছে বিদেশি ফ্রিজিয়ান গরুও। আবার ভারতীয় সাহিওয়াল জাতের মতো দেখতে দেশি গরু ফেনীর মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বিক্রেতাদের নিরাপদ ও স্বস্তিকর পরিবেশ নিশ্চিতে সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রস্তুত রয়েছে।
ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর হাটে গরু দেখতে আসা সাইমুন ইসলাম বলেন, এখানকার গরুগুলো স্বাস্থ্যবান ও খাঁটি দেশি জাতের, তাই স্বাভাবিকভাবেই দাম কিছুটা বেশি। তবে যেভাবে ক্রেতারা ভিড় করছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে গরুর কদর রয়েছে। এখনও পর্যন্ত বেচাকেনা পুরোপুরি জমে না উঠলেও আশা করছি আজ ও কাল হাটে ব্যাপক কেনাবেচা হবে।
রুহুল আমিন নামের এক বিক্রেতা বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই আমি নিজে গরু পালন করছি। এবার ৫টি গরু নিয়ে হাটে এসেছি। এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়নি, তবে অনেকেই দেখে যাচ্ছেন। দাম একটু চড়া হলেও গরুগুলোর খাওয়া-দাওয়ায় কোনো কমতি রাখিনি। আশা করি শেষের দুই দিনে ভালো দাম পাবো।
আব্দুস সোবহান নামের এক ক্রেতা বলেন, আমি আজ হাটে এসে একটি মিডিয়াম সাইজের দেশি গরু কিনেছি। গরুটি মোটাতাজা, স্বাস্থ্যবান এবং দেখতে খুব ভালো হওয়ায় পছন্দ হয়েছে। দাম পড়েছে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। যদিও দাম একটু বেশি লেগেছে, তবে হাট ঘুরে বুঝলাম ভালো গরু নিতে হলে একটু বেশি খরচ করতেই হয়। ঈদের জন্য সুন্দর একটি গরু পেয়ে আমি সন্তুষ্ট।
ফাজিলপুর বাজারের ইজারাদার মো. শাহ আলম বলেন, এখনও হাট পুরোপুরি জমে না উঠলেও গরুর সরবরাহ যথেষ্ট ভালো। বেপারিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হাটজুড়ে তৎপর রয়েছেন, পাশাপাশি আলোকসজ্জারও ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা সরকারি নির্ধারিত দরের চেয়েও কম হারে হাসিল নিচ্ছি, যাতে বিক্রেতারা কিছুটা স্বস্তি পান। আশা করছি, সামনে কয়েকদিনে হাটে ক্রেতাদের ভিড় বাড়বে এবং কেনাবেচা জমে উঠবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ফেনীতে এবার ৮৫ হাজার পশু বিক্রির প্রত্যাশা করছি। সে হিসেবে ফেনীতে মিডিয়াম সাইজের গরুর চাহিদা সব থেকে বেশি। আনুমানিক হিসাব করলে গরু ছাগল মহিষ ও অন্যান্য পশু মিলিয়ে আনুমানিক ৭০০ কোটি টাকার অধিক বেচাবিক্রি হওয়ার কথা। এরমধ্যে গরুর চাহিদা সব থেকে বেশি হওয়াতে টাকার অনুপাত কিছুটা বাড়তেও পারে। তিনি বলেন, ফেনীতে বিভিন্ন জাতের গরু বাজারে রয়েছে। পিজিয়ান জাতের গরুর পাশাপাশি মিডিয়াম সাইজের দেশীয় গরুর চাহিদা ব্যপক। এখন পর্যন্ত বাজারে বিভিন্ন গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া উঠেছে। আজ থেকে বেচাবিক্রি অনেকাংশে বেড়ে যাবে। এখন বাজারে লোক সমাগম হচ্ছে, মানুষ এতদিন দেখেছে। আজ থেকে কিনবে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে খামারিয়া ইনজেকশন পুশ করা কিংবা মোটাতাজা করার জন্য তেমন ঔষধ ব্যবহার করার নজির নেই। তবে আমাদের সারাবছর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং নজরদারি রয়েছে। হাটবাজার গুলোতে ভ্যাটেনারি চিকিৎসকরা রয়েছে। আশা করছি সুন্দরভাবে ঈদ বাজার সম্পন্ন হবে।
ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা নাসরিন কান্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পশুরহাটের সার্বিক নিরাপত্তায় প্রশাসন কাজ করছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি হাটগুলোতে এটিএম বুথ স্থাপনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া
হয়েছে। সদর উপজেলায় সবগুলো অস্থায়ী বাজার। আশা করছি ঈদে সুন্দরভাবে পশুর হাটবাজারে বেচাবিক্রি সম্পন্ন হবে।
ফেনী স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, জেলায় জেলা প্রশাসনের ১১২টি ইজারা দেওয়া হয়েছে এবং পৌর এলাকার সিও অফিস এলাকায় সেনাবাহিনী একটি ইজারা দিয়েছে সর্বমোট ১১৩টি পশুর হাট ইজারা হয়েছে। হাটগুলোতে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সুপার ইতোমধ্যে ইজারাদারদের সাথে বসে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি আমরাও তাদেরকে নানা বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, হাটগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ইজারাদারদের স্বেচ্ছাসেবক থাকবে টাকা পয়সার নিরাপত্তার জন্য জালনোট সনাক্তকরণ মেশিনসহ নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবধরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।