শেরপুরে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি

বাবুই পাখির বাসা
বাবুই পাখির বাসা  © সংগৃহীত

শেরপুর জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী, নকলা, নালিতাবাড়ী ও শেরপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এক সময় উঁচু তালগাছ কিংবা নারিকেলগাছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা যেত। কিন্তু গ্রামবাংলার পল্লী এলাকায় এখন আর আগের মতো বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তনে ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বর্তমানে এই পাখি বিলুপ্ত হতে চলেছে । সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পী, স্থপতি ও সামাজিক বন্ধনের কারিগর বাবুই পাখি ও এদের বাসা।

খড়, নারকেলগাছ বা তালগাছের কচি পাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচু তালগাছের চমৎকার বাসা তৈরি করত এই পাখি। বাসাটি দেখতে যেমনি আকর্ষণীয় তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের নিপুণ বাসা ভেঙে পড়ে না। বাবুই পাখির শক্ত বুননের এ বাসা টেনে ছেঁড়াও কষ্টকর। বাবুই পাখি বাসা তৈরির পর সঙ্গী খুঁজতে যায় অন্য বাসায়। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইয়ের সাথি বানানোর জন্য কত কিছুই না করে এরা। পুরুষ বাবুই নিজেকে আকর্ষণীয় করার জন্য খাল, বিল ও ডোবায় নেচে নেচে বেড়ায় গাছের ডালে ডালে। বাসা তৈরির কাজ অর্ধেক হলে কাঙ্ক্ষিত স্ত্রী বাবুইকে সে বাসা দেখায়। বাসা পছন্দ হলে কেবল সম্পর্ক গড়ে। স্ত্রী বাবুই পাখি বাসা পছন্দ হলে বাকি কাজ শেষ করতে পুরুষ বাবুই পাখির সময় লাগে চার দিন। ধান ঘরে ওঠার মৌসুম হলো বাবুই পাখির প্রজনন সময়। দুধ ধান সংগ্রহ করে স্ত্রী বাবুই বাচ্চাদের খাওয়ায়। এরা ভালো গাছেই বাসা বাঁধে বেশি। সংগত কারণে বাবুই পাখি তালগাছ ছেড়ে ভিন্ন গাছে বাসা বাঁধছে।

আরও পড়ুন: বাস থেকে ‘অচেতন শিক্ষার্থীকে’ ফেলা হয় মহাসড়কের পাশে, প্রতিবাদে অবরোধ

একসময় শ্রীবরদী উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে দেখা যেত শত শত বাবুই পাখির বাসা। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দেখা মিলছে দু-একটি বাবুই পাখির বাসা।

পাখি প্রেমিক সৌরভ বলেন, ‘ছোটবেলা তো পাখি অনেক পোষেছি, বাবুইপাখিও ছিল অনেক। এক দিন ঝড়ের দিন দুইটা বাবুই পাখি কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। অনেক আগের কথা, তখন ক্লাস তৃতীয় বা  চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তাম। এখন আর তেমন দেখা যায় না। আগে আমাদের নারকেলগাছে অসংখ্য বাবুইপাখির বাসা ছিল। সারা দিন আসা যাওয়ার পথে তাকিয়ে দেখতাম তাদের বাসা, অনেক সুন্দর ছিল।’

আরেক পাখিপ্রেমিক মুত্তাকিম বলেন, ‘আগে আমাদের বাড়ির আশপাশে অনেক সুপারিগাছ ছিল। প্রতিটি গাছেই ৫-৬টি করে বাবুই পাখির বাসা থাকত। এখন গাছ আছে কিন্তু বাবুই পাখি নাই, বাসাও নাই।’

আরও পড়ুন: ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে শাহবাগে ৩০ কলেজের শিক্ষার্থীরা

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একশ্রেণির মানুষ অর্থলোভে বাবুই পাখির বাসা সংগ্রহ করে শহরের ধনীদের কাছে বিক্রি করছে। এই বাবুই পাখির বাসা শোভা পাচ্ছে ধনীদের ড্রইং রুমে। বাবুই পাখির অপূর্ব শিল্পশৈলীতে বিস্মিত হয়ে কবি রজনীকান্ত সেন তার কবিতায় লিখেছিলেন, ‘বাবুই পাখি ডাকি, বলছে চড়াই কুঁড়ের ঘরে থেকে করিস শিল্পের বড়াই/ আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার পরে তুমি কষ্টপাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে।’ বাবুই পাখি ও তার বাসা সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট জীব ও পরিবেশ অধিদপ্তর আরও উদ্যোগী হওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করেন পাখিপ্রেমী মানুষ।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence