ঈদের দিনেও দায়িত্বের প্রহরায়— ‘ছেলেমেয়েরা অপেক্ষা করে, আমি ফিরব বলে, কিন্তু পারি না’

বাকৃবি লোগো
বাকৃবি লোগো  © টিডিসি

ঈদ আসে আমাদের জীবনে আনন্দের বারতা হয়ে। পরিবার, প্রিয়জন, বন্ধু, প্রতিবেশী—সবাই মিলে একত্রে ভাগ করে নিই ঈদের হাসি, ভালোবাসা, কোলাকুলি আর আত্মার প্রশান্তি। নতুন পোশাক, সুস্বাদু খাবার, গ্রামের মেঠোপথ ধরে বাড়ি ফেরা—সব মিলিয়ে ঈদ যেন হৃদয়ের এক অনন্য উৎসব।

কিন্তু এই আনন্দ যখন ঢেউ হয়ে বয়ে যায় শহর থেকে গ্রামে, তখন কিছু মুখ থেকে যায় আড়ালে। যাদের ঈদ হয় না, বা হলেও হয় ডিউটির ছায়ায়। যাদের সকালটা শুরু হয় কোরবানির ধোঁয়া নয়, বরং দায়িত্বের তালিকা হাতে। যারা সবার আনন্দ নিশ্চিত করতে গিয়ে নিজেরা আনন্দ থেকে দূরে সরে দাঁড়ান।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমনই কিছু অদৃশ্য নায়ক আছেন—মালী, সহকারী বাবুর্চি, আনসার সদস্য, পরিচ্ছন্নতাকর্মী—যারা ঈদের দিনেও কাজ করে যান নীরবে। শিক্ষার্থীরা যখন ছুটিতে বাড়ি ফেরে, তখন এই মানুষগুলো হলের নিরাপত্তা, খাবার প্রস্তুতি, পরিবেশ রক্ষা আর গার্ডেন পরিচর্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে যান ক্যাম্পাসে।

আরও পড়ুন: দে বাড়িতে নয়, উৎসবের ব্যস্ততা থেকে দূরে দাঁড়িয়ে পাহারা দেন নিস্তব্ধ ক্যাম্পাস

মো. সাইফুল ইসলাম, গত আট বছর ধরে বাকৃবিতে মালী হিসেবে কাজ করছেন। ঈদের দিনেও কাজ ছাড়তে পারেন না। তিনি বলেন, “হলে লোকজন কম থাকে, তাই মালি হয়েও মাঝে মাঝে গার্ডের দায়িত্ব নিতে হয়। ঈদের দিন যখন সবার ঘরে খুশির আলো, আমি তখন হলে ডিউটিতে। ছেলেমেয়েরা অপেক্ষা করে, আমি ফিরব বলে, কিন্তু পারি না। হয়তো কাজ শেষ করে এক আধ দিন যাই, কিন্তু ঈদের আসল আনন্দটা মিস করে যাই সব সময়।”
তার কণ্ঠে অভিমানও ছিল—“যদি একটু সম্মানী পেতাম ঈদে, তাহলে সন্তানের মুখে একটু হাসি ফোটাতে পারতাম।”

শিউলি আক্তার, কৃষিকন্যা হলে সহকারী বাবুর্চি হিসেবে কাজ করছেন তিন বছর ধরে। তার ডিউটিও পড়ে ঈদের দিনেই। তিনি বলেন, “আমার ছোট বাচ্চারা ঈদের দিন আমায় না পেয়ে মন খারাপ করে। আমি জানি, আমি যেটা করছি সেটা ভবিষ্যতের জন্য। কিন্তু মাঝে মাঝে খুব একা লাগা ধরে।” কণ্ঠে কষ্ট মিশে ছিল—“ঈদের দিনে যদি আমাদের জন্য একটু বাড়তি বোনাস থাকত, তাহলে ওদের জন্য নতুন জামা কিনে দিতে পারতাম।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “ঈদের ছুটিতে সবাই বাড়ি গেলেও আমরা থাকি পাহারায়। ক্যাম্পাস ফাঁকা হয়ে যায়, কিন্তু দায়িত্ব ফাঁকা হয় না। আমরা চাই, অন্যরা যেন নিশ্চিন্তে ঈদ উদযাপন করতে পারে। এটাই আমাদের শান্তি।”

তাঁদের ঈদটা হয় না আপন করে। হয় না গ্রামে ফেরা, হয় না সন্তানকে কোরবানি দেখানো, মায়ের হাতে রান্না করা পোলাও খাওয়া, বা বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি তোলা। হয়তো তাঁদের সেমাই থাকে না, তবু তাঁদের ত্যাগের সুগন্ধে সুবাসিত হয় আমাদের ঈদ।

তাঁরা আনন্দে শামিল হতে না পারলেও, আমাদের আনন্দ তাদের কাঁধে ভর করেই দাঁড়িয়ে থাকে—নিশ্চুপ, দৃঢ় এক দেয়ালের মতো। এদের ছাড়া আমাদের ঈদ হয়তো হতো, কিন্তু পূর্ণ হতো না কখনোই। এই কর্মীরা যেন আমাদের নিঃশব্দ প্রহরী, যাঁরা দায়িত্বের বিনিময়ে আমাদের হাসিমুখ নিশ্চিত করেন।
তাঁদের প্রাপ্য কেবল সম্মান নয়—প্রাপ্য কৃতজ্ঞতাও।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence