'দশাইন মনে পড়ে যায় ঈদে': বাকৃবির নেপালি শিক্ষার্থী দীপেশের অনুভূতি

বাকৃবির নেপালি শিক্ষার্থী দীপেশ
বাকৃবির নেপালি শিক্ষার্থী দীপেশ  © টিডিসি

দেশজুড়ে ঈদুল আজহার ছুটিতে যখন অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়ি ফিরে গেছেন, তখন ব্যতিক্রম ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অধ্যয়নরত নেপালে থেকে পড়তে আসা ভেটেরিনারি অনুষদের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী দীপেশ আরিয়াল। পূজার সময় নিজ দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকায় এবারের ঈদের ছুটিতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে অবস্থান করেছেন।

তিনি জানান, ঈদের সময় ক্যাম্পাস প্রায় ফাঁকা থাকায় কিছুটা একাকিত্ব বোধ হলেও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। “শুরুতে একা থাকা বেশ কঠিন ছিল। বিশেষ করে যখন সবাই বাড়ি ফিরে যায়, তখন একটু খারাপ লাগে,” বলেন দীপেশ। “তবে এখন অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। রাতে সাইকেল চালিয়ে ঘুরতে ভালো লাগে, ক্যাম্পাস অনেক শান্ত থাকে।”

বাংলাদেশে এসে নতুন সংস্কৃতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে সময় লেগেছে বলে জানান তিনি। “প্রথম দিকে দেশের সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকা কঠিন লাগতো। এখন অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছি,” তিনি বলেন।

উৎসবের সময় পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে দূরে থাকা তাকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয়। তিনি বলেন, “ঈদের সময় যখন দেখি সবাই পরিবারে ফিরে যাচ্ছে, ফেসবুকে ছবি পোস্ট করছে, তখন আমারও পরিবারের কথা খুব মনে পড়ে। বিশেষ করে বাড়ি উঠোন, সকাল, পাখির ডাকে খুবই মিস করি।”

বাংলাদেশের ঈদ উদযাপন তাকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছে। ঈদুল ফিতর আরকোরবানির ঈদে মাংস ভাগ করে দানের বিষয়টি তিনি প্রশংসা করেন।

"যতদিন থেকেছি যা দেখেছি তাতে আমার বাংলাদেশের ঈদগুলো খুব ভালো লেগেছে। তবে সবচেয়ে ভালো লেগেছে কোরবানির ঈদগুলো। কারণ আমি শুনেছি এই কোরবানির ঈদে ঐ যে গরু কাটা হয় সেটা তিনভাগ করে, তার মধ্যে এক ভাগ নিজের বাসায় রাখে, একবার হচ্ছে দান করে দেয়, একবার প্রতিবেশীদের খাওয়ায়। এ বিষয়টা আমার খুব ভালো লাগে। যারা গরীব আছে, গরু ছাগল কিনতে পারে না, ওরাও কিন্ত ৩৩% করে পায়, এটা খুব ভালো লাগে আমার। আর ঈদ যেহেতু উৎসব, সবাই ফেসবুকে ছবি আপলোড দেয় এগুলোও দেখে ভালো লাগে আমার।" বলেন দীপেশ।

দীপেশ তার নিজ দেশের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘দশাইন’-এর প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “তোমাদের যেমন ঈদুল আযহা সবচেয়ে বড় উৎসব, দশাইন তেমনি আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব। বাংলাদেশে ঈদ আসলেই 'দশাইন' এর কথা মনে পড়ে যায়। এ সময় পরিবারের সবাই একত্রিত হয়, টিকা দেওয়া হয়, খাসি কাটা হয়, সবাই মিলে আনন্দ করি। বাংলাদেশে এটিকে ‘দশমী’ নামে চেনে। ঈদের সময় বাড়িতে থাকতে না পারার অনুভূতিটা এই দশাইনের সময় আরও বেশি প্রবল হয়ে ওঠে।”

অন্যান্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দীপেশ বলেন, “যারা আমার মতো দূর দেশ থেকে পড়তে এসেছে, তাদের জন্য পরামর্শ হলো—যদি বড় ছুটি পাও, বাসায় চলে যাও। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো গুরুত্বপূর্ণ।”

ঈদের ছুটিতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী যখন নিজেদের পরিবারের সান্নিধ্যে সময় কাটায়, তখন ক্যাম্পাসে একা থাকা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। দীপেশের অভিজ্ঞতা তারই একটি উদাহরণ। শিক্ষা গ্রহণের জন্য সীমান্ত পেরিয়ে আসা এই শিক্ষার্থীদের জীবনে সংস্কৃতিগত পার্থক্য, একাকিত্ব, এবং নিজস্ব উৎসব-সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকা একটি বাস্তবতা। তবে এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই তারা তৈরি করছেন নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা, গ্রহণযোগ্যতা ও আন্তঃসাংস্কৃতিক বোঝাপড়া।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!